জল-কাদায় হাবুডুবু কক্সবাজার পৌরসভার সড়ক উপসড়ক

fec-image

কক্সবাজার পৌরসভার সড়ক উপসড়কের বেহাল অবস্থা। প্রায় সব সড়কে বড় বড় গর্ত। ভরে গেছে খানাখন্দে। বাসাবাড়ি থেকে বের হলেই পুকুর-ডোবা কিংবা নর্দমার দৃশ্য।

সড়কে গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা খালি পায়েও হাঁটাচলা দায়। পৌরবাসীর ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশেষ করে ৪নং ওয়ার্ডের টেকপাড়ার করুণ দশা। ভালো নেই একটি সড়কও। জল-কাদায় হাবুডুবু খাচ্ছে এলাকাটি। ছোট-বড় প্রায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। বৃদ্ধ, শিশু ও নারী পথচারীদের দুঃখ আর যন্ত্রণা বর্ণনায় শেষ করা যাবে না। বর্ষায় বেহাল চিত্র আরো কঠোরভাবে দৃশ্যমান।

এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে টেকপাড়া যান এই প্রতিবেদক। নিজেও ভোগান্তির শিকার। দেখেন সড়কগুলোর কঠিন দৃশ্য। কথা বলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। টেকপাড়াবাসী বর্ণনা দিয়েছেন তাদের দুঃখ ও অবর্ণনীয় যন্ত্রণার কথা। ক্ষোভ ঝেরেছেন জনপ্রতিনিধিদের উপর।

কক্সবাজার পৌরসভার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ভিআইপি জনপদ টেকপাড়ার বাসিন্দাদের দুঃখ অনেক। ধারাবাহি কয়েক বছর ধরে তাদের দুঃখ বাড়ছে অনেক গুনে।

টেকপাড়ার বাসিন্দা জাবেদ উল্লাহ মিয়া বলেন, কালুর দোকানে কউক নির্মিতব্য ড্রেনের ময়লা-পানির পাইপ আমাদের সড়কে চালিয়ে দিয়েছে। তার খেসারত দিতে হচ্ছে টেকপাড়াবাসীকে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই।

স্থানীয় বাসিন্দা ব্যাংকার মাসুদুর রহমান বলেন, পৌর এলাকার সড়ক উপসড়কসমূহের এমন অবস্থা হবে ভাবিনি। জুতো-সেন্ডেল হাতে নিয়ে বাসাবাড়ি থেকে বের হয়ে অফিসে যেতে হয়। এটি আমাদের জন্য খুবই দুঃখ ও লজ্জার। হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট তুলে সড়কে চলতে হয়।

এডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল্লাহর দুঃখ অনেক। তিনি বলেন, পৌরসভায় এতো বেশী অব্যবস্থাপনা, এর আগে কোনদিন দেখা যায়নি। তারা এখন মানুষকে মানুষ মনে করছে না। সড়কে কি পরিমাণ দুর্ভোগ, তা বর্ণনায় শেষ করা যাবে না। মানুষের ক্ষোভের মাত্রা বাড়ছে কিন্তু দিনদিন।

টেকপাড়ার বাসিন্দা মোবাশ্বের হোসেন সোহেল দুঃখের সঙ্গে বলেন, কালুর দোকান থেকে টেকপাড়ার ভেতরের প্রতিটি সড়কের কি অবস্থা বলে শেষ করা যাবে না। হাঁটু পরিমাণ কাদাজল। ভাঙাচোরা সড়কে জমে আছে পানি। আমাদের দুর্ভোগ আর দুঃখ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নাই। এটা যেন দেখার কেউ নেই। কক্সবাজার শহর ‘বেওয়ারিশ শহরে’ পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে বছরের পর মানুষকে কষ্ট দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। এখানে প্রচুর সমন্বয়হীনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবার মাঝে সমন্বয় থাকলে আজকের এমন দশা হতো না।
কক্সবাজারের সৌর্যবীর্য ছিল টেকপাড়া। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকাকে অবহেলা ও চরম দুর্দশার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন মোবাশ্বের হোসেন সোহেল।
স্থানীয় কাউন্সিলরকে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ পরিহার করে সব এলাকার প্রতি সমান দৃষ্টি দেয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

টেকপাড়া সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক শেখ আশিকুজ্জামান বলেন, কক্সবাজার পৌরসভার রাস্তা, ড্রেন সংস্কার ও ড্রেন পরিষ্কার কার্যক্রমের জন্য ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। সেই অর্থ থেকে সঠিকভাবে ব্যয় করলেও টেকপাড়ার এ অবস্থা হওয়ার কথা না। দুর্ভোগ নিরসনে পৌর মেয়র, স্থানীয় কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

টেকপাড়া সোসাইটির সভাপতি ব্যাংকার জাহে উল্লাহ জাহেদ বলেন, টেকপাড়া, কালুর দোকান থেকে মাঝির ঘাটসহ পুরো ৪নং ওয়ার্ডে চলাচলের রাস্তা খুব খারাপ অবস্থা। একটু বৃষ্টি হলে কোমর পরিমাণ পানি উঠে যায়। আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে টাকা তুলে বেশ কয়েকবার ড্রেন পরিস্কারের কাজ করি। এরপরও টেকপাড়ার দিকে নজর পড়েনা পৌর কর্তৃপক্ষের।

তার আক্ষেপ- কি দোষ আমাদের? সড়কে জমে থাকা পঁচা পানির কারণে মানুষ মসজিদে যেতে পারছে না। হাটবাজার, অফিস, যেতে খুব কষ্ট করে পাচা পানি দিয়ে যেতে হয়। পৌর কর্তৃপক্ষের দায়সারাভাব, দায়িত্বহীনতা ও রেশারেশির কারনে টেকপাড়াসহ পুরো পৌর শহরের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। সীমাহীন কষ্ট থেকে আামাদের মুক্তি দিন।

সুত্রে জানা গেছে, অর্থ বিভাগের ৩০/০৮/২০০০ খ্রি: তারিখের অম/অবি/উঃ১/বিবিধ-৪৬/৯৭/৪৬৯ নম্বর স্মারকের মাধ্যমে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/বিভাগকে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন সহায়তা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ হতে গত ১১ মে ‘প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় অনুযায়ী বরাদ্দ’ উপ-খাত হতে কক্সবাজার পৌরসভার রাস্তা, ড্রেন সংস্কার ও ড্রেন পরিষ্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ১ম-৪র্থ কিস্তি বাবদ ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ।

এ প্রসঙ্গে জানতে সোমবার (১৬ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের ব্যবহৃত দুইটি নাম্বারে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. দিদারুল ইসলাম রুবেল মুঠোফোন রিসিভ করেন নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন