জেটি নির্মাণে তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন : চরম হুমকির মুখে বদরখালী সেতুর অস্তিত্ব

fec-image

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় জনপদের বদরখালী সেতুর তলদেশ থেকে শ্যালো মেশিন বসিয়ে দিব্যি অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের হিড়িক পড়েছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধ জেটি নির্মাণের উদ্দেশ্যে কয়েকমাস যাবত সেতুর নিচ থেকে অব্যাহত রেখেছে বালু উত্তোলন। এ অবস্থার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বদরখালী-মহেশখালী সড়কের বদরখালী সেতু। এ ঘটনায় যানবাহন মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

বদরখালী সেতুর নিচ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে ইতোমধ্যে সেতুর টোল আদায়ের নিয়োজিত ইজারাদার মেসার্স প্রমিনেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স কক্সবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে একটি লিখিত আবেদনও দিয়েছেন। আবেদনে সেতুর টোল ইজারাদার মের্সাস প্রমিনেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স দাবি করেন, চকরিয়া বদরখালী সড়কের ১৭ কিলোমিটার বদরখালী সেতুর মহেশখালী অংশের নিচ থেকে কতিপয় প্রভাবশালী মহল জেটি নির্মাণের জন্য বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। যার কারণে সেতুটি বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে। এতে বড়ধরণের ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে সেতুটি। সেতুটি ভেঙে গেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে মহেশখালী সাথে চকরিয়া উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হবে অন্তত কয়েক লক্ষ জনগোষ্ঠী।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, চলতি বছর সড়ক বিভাগ থেকে বদরখালী সেতুটি সর্বোচ্চ ডাককারী হিসেবে ৭ কোটি ৩৯ লাখ ৮০ হাজার টাকায় ইজারাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে বদরখালীতে বিদ্যমান জেলা প্রশাসনের জেটি ঘাটও চলতিবছর ইজারা দেওয়া হয়েছে ১০ লাখ ১৮ হাজার টাকায়। সেইক্ষেত্রে অবৈধ জেটি নির্মাণ করা হলে সরকারি জেটি ঘাট থেকে সরকার বিপুল টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে। পাশপাশি অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় আরিফ নামের একব্যক্তির নেতৃত্বে প্রভাবশালী মহলের যোগসাজসে একটি চক্র বাণিজ্যিক অবৈধ জেটি নির্মাণের উদ্দেশ্যে বদরখালী সেতুর মহেশখালী অংশের তলদেশ থেকে সেলো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। কয়েকমাস যাবত সেতুর নিচ থেকে এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে অভিযুক্ত প্রভাবশালী চক্রটি। এ অবস্থার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বদরখালী-মহেশখালী সড়কের বদরখালী সেতুটি।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, সেতুর নিচ থেকে বালু উত্তোলনে জড়িতরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বাধা দেওয়ার সাহস করছে না। তারপরও এলাকাবাসী এবং টোল ইজারাদার পক্ষের লোকজন বালু উত্তোলনে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তারা তা না মেনে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। এতে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১০ সালে বালু উত্তোলন নীতিমালায় যন্ত্রচালিত মেশিন দ্বারা ড্রেজিং পদ্ধতিতে নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও সেতু, কালভার্ট, রেললাইনসহ মূল্যবান স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন করা বেআইনি। অথচ এক্ষেত্রে বালু দস্যুরা সরকারি ওই আইন অমান্য করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু কুমার চাকমা বলেন, বদরখালী সেতুর মহেশখালী অংশের নীচ থেকে বালু উত্তোলনে লিখিত অভিযোগ পেয়ে থাকলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী প্রদক্ষেপ নেয়া হবে। অবৈধ জেটি নির্মাণে সেতুর নীচ থেকে বালু উত্তোলনে কারো অধিকার নেই। বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখবো।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন