টানা বর্ষণে রামুতে বন্যা: লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি
খালেদ হোসেন টাপু, রামু প্রতিনিধি:
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে কক্সবাজারের রামুতে ব্যাপক আকারে বন্যা দেখা দিয়েছে । ঢলের পানিতে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। গত তিনদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে রামুতে বাঁকখালী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বুধবার (২৪ জুন) রাত থেকে বন্যা দেখা দেয়।
এদিকে কক্সবাজার টেকনাফ মহা সড়কের লিংকরোড, রামু মরিচ্যা পুরাতন আরাকান সড়ক, গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া, রামু- নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক, জাদি পাড়া সড়ক, মেরংলোয়া পুরাতন আরাকান সড়ক, রাজারকুল-মিঠাছড়ি সড়ক, শ্রীমুরা সড়ক, ঈদগাঁহ- ঈদগড়, তেচ্ছিপুল-লম্বরীপাড়া সহ প্রায় ৩০টি অভ্যন্তরীণ সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ডুবে রয়েছে বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, কবর স্থান, মন্দির গির্জাসহ বিভিন্ন হাট বাজার, রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মৎস্য খামার ও চিংড়ি ঘেরসমূহ।
এছাড়া বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বাঁকখালী নদীর তীর সংলগ্ন আতিক্যা বিবির ঘাট, দরগা মুরা, পূরা রাজারকূল, মনিরঝিলসহ বেশ কিছু এলাকার বেড়িবাঁধ।
এদিকে কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি এলাকায় পাহাড়ের মাটি ও গাছ সড়কের উপর ধসে পড়ায় যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বাঁকখালীসহ রেজু খাল, সোনাইছড়ি ও কালিরছড়া খালে পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার ফতেখাঁরকুল সদর ইউনিয়নের মন্ডল পাড়া, হাইটুপি, শ্রীকুল, দ্বীপ শ্রীকুল, পূর্ব মেরংলোয়া, মধ্যম মেরংলোয়া, পশ্চিম মেরংলোয়া, হাজারিকুল, লম্বরীপাড়া, উত্তর ফতেখাঁরকুল, রাজারকুলের পূর্ব রাজারকুল, দক্ষিণ রাজারকুল, ছাগলিয়াকাটা, চৌকিদার পাড়া, সিকদারপাড়া, পালপাড়া, দক্ষিণ মিঠাছড়ির উমখালী, চেইন্দা, পানেরছড়া, চাইল্যাতলী, কাউয়ারখোপের মনিরঝিল, পূর্ব মনিরঝিল, লামার পাড়া, চরপাড়া, পূর্ব পাড়াসহ রশিদনগর, খুনিয়া পালং, চাকমারকুল, জোয়ারিয়ানালা, গর্জনীয়া, কচ্ছপিয়া, ঈদগড় ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়। এসব গ্রামের প্রায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বন্যা দুর্গত ওইসব এলাকার লোকজন সাইক্লোন শেল্টারে এবং গৃহপালিত পশু উঁচু জায়গায় নিয়ে রেখেছে।
বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ বাঁকখালী নদীর উজানের গর্জনীয়া, কচ্ছপিয়া, ঈদগড় ইউনিয়নে। এসব এলাকার প্রায় দেড় হাজার পরিবারের নারী ও শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। চলছে খাবার পানি ও খাদ্য সঙ্কট। বন্যাকবলিত লোকজন বিভিন্ন বিদ্যালয়, সাইক্লোন শেল্টারে আশ্র নিলেও পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় বেশির ভাগ মানুষ বিপাকে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দেখা দেয় বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীর নের্টওয়াক বিপর্যয় এবং সারাদিন বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন থাকার পর রাত ৮ টার দিকে রামু সদরে বিদ্যুৎ চালু করে বিদ্যুৎ বিভাগ।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ হোসেন জানান, ভারি বর্ষণ, বেড়িবাঁধের ভাঙন ও পাহাড়ি ঢলের কারণে রামুর বন্যা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। পুরো উপজেলা এখন পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। তিনি আরও জানান, বিভিন্ন এলাকায় দুর্গত মানুষকে পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম জানান জানান, কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে উপজেলা অধিকাংশ এলাকা ডুবে গেছে। তিনি আরও জানান, বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।