ডিবি পুলিশের এই অপকর্ম পুরো প্রশাসনের জন্য লজ্জাজনক, বললেন সচেতন মহল

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা ইসু সহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা প্রদানে প্রশাসন সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। যা ইতিমধ্যেই প্রশংসার দাবি রেখেছে। আর এমনই সময় খোদ ডিবি পুলিশের কিছু অসাধু লোকজনকে অপহরণ করে মুক্তিপন আদায় করছে। যা খুবই নেক্কার জনক।

যার ফলে শুধু প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছেনা পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে সাধারণ লোকজন। তারা বলছে যাদের মাধ্যমে অপহরণকারীর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে তারাই যদি অপহরণ করে মুক্তিপন আদায় করে এর চেয়ে দুঃখ্য জনক আর কিছুই হতে পারেনা। আর এমনই ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজারের টেকনাফে।

টেকনাফে আব্দুল গফুর নামে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের পরে ১৭ লাখ টাকা আদায়ের ঘটনায় সেনাবাহিনীর হাতে আটক হয়েছে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) সহ ৭ জন। এসময় ডিবি পুলিশের এক এসআই পালিয়ে গেলেও ৭জন আটক সহ উদ্ধার করা হয়েছে মুক্তিপনের ১৭ লাখ টাকা।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার সকালে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক এলাকায় সেনাবাহিনী মাইক্রোবাস তল্লাসী চালিয়ে মুক্তিপন আদায়ের টাকাসহ ৭জন ডিবি পুলিশকে আটক করে।

সেনাবাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী আটককৃতরা হলেন, ডিবি পুলিশের পরিদর্শক তদন্ত ইয়াসিন আরফাত, এসআই আবুল কালাম আজাদ, গোলাম মোস্তফা, ফিরোজ আহমদ, এএসআই নুরুজামান, সিপাহী মোস্তফা আলম ও গাড়ি চালক। আটকের পরে নানা প্রক্রিয়া শেষে উদ্ধার ১৭ লাখ টাকা ব্যবসায়ীকে ফেরত দেওযা হয়। আর আটক ৭জনকে কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে হস্তান্তর করা হয়।

টেকনাফে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ কার‌্যক্রম পরিচালনায় স্থাপিত সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের প্রধান মেজর নাজিম আহমদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, টেকনাফের মধ্য জালিয়া পাড়ার মৃত হোসেন আহমদের পুত্র আবদুল গফুরকে মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার শহর থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে টাকা দাবি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তার পরিবারের সদস্যরা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আগে টাকা প্রদান করে ওই ব্যবসায়ীকে ছাড়িয়ে নেয়া হয়। টাকা নিয়ে একটি মাইক্রোবাস যোগে ৮ জনের একটি দল বুধবার ভোরে কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছিল।

এ সময় মেরিনড্রাইভ সড়কের শাপলাপুর এলাকায় সেনাবাহিনী তল্লাশী চৌকিতে মাইক্রোবাসটি তল্লাশি করে উদ্ধার করা হয় ওই ১৭ লাখ টাকা। ওই সময় ডিবি পুলিশের এসআই মনিরুজ্জামান দৌঁড়ে পালিয়ে গেলেও ডিবি পুলিশের অপর ৭জনকে আটক করা হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে র‌্যাব, পুলিশের সাথে আলোচনা করা হয়। আটক ৭জনকে পুলিশ সুপারের জিম্মায় প্রদান করে ১৭ লাখ টাকা ওই ব্যবসায়ীকে ফেরত দেয়া হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জনা যায়, গত ৩ মাস ধরে ডিবি পুলিশের এ দলটি বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিম্মি করে লাখ-লাখ টাকা আদায়, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এবার একই অভিযোগে সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ল দলটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সচেতন ব্যক্তি জানান, বিশেষ করে কিছু অসাধু ডিবি পুলিশের কারণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মানক্ষুন্ন হচ্ছে। তাদের অর্জন মানুষের কাছে ফিকে হয়ে যাচ্ছে। ডিবি পুলিশের এই অসাধু সিন্ডিকেটটি দীর্ঘদিন ধরে এ অপকর্ম করছে। তারা বিভিন্ন ইয়াবা ব্যবসায়ীর কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করে। অনেকে আবার ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে।

এছাড়া কিছুদিন ডিবি পুলিমের কার্যক্রম শীতিল ছিল। হঠাৎ গত কয়েক মাস ধরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আর এই সক্রিয়তায় যতটুকু না ভাল কাজ হয়েছে তারও বেশি খারাপ কাজ হয়েছে। হয়ত এই অপকর্ম করার জন্যই সক্রিয় হয়ে উঠেছিল।

এ ব্যাপারে কলেজ শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানা জানান, এই ৭জন ডিবি পুলিশ প্রশাসনের সবার মান ক্ষুন্ন করেছে। এদের কাছ থেকে সবার শিক্ষা নেওয়া দরকার। এছাড়া তাদের যারা নিয়ন্ত্রক রয়েছে তাদের অবহেলা রয়েছে। নয়ত এটি হতে পারেনা। অথবা তারা নিশ্চয় কারো আশ্রয়ে বা কারো প্রশ্রয়ে এ অপকর্ম করছে। তাদেরকে সনাক্ত করা উচিত। যাতে এই ঘটনা দ্বিতীয়বার না ঘটে।

এ ব্যাপারে এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, এই ঘটনাটি এক কথায় দুঃখ্য জনক। যে রক্ষক সেই যদি ভক্ষক হয় তাহলে মানুষ যাবে কোথায়। আজ সেনাবাহিনীর সক্ষম বলে তারা এগিয়েছে। অন্যকেউ’ত এই ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পাবেনা। আর এই ঘটনা যে আজকে একদিনে তা নয় নিশ্চয় অনেক আগে থেকে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ প্রশাসন থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলবে। আর বিপদগ্রস্ত হবে। তাই দ্রুত সময়ে যথাযথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুরিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাতজনকে বরখাস্থ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। এই সাতজনের মধ্যে দুইজন উপপরিদর্শক (এসআই), তিনজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আর দুইজন কনস্টেবল। তিনি আরো জনান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যার ফলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমুত্তি ক্ষুন্ন হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন