তামিমের ফিফটির পর রিশাদ-ঝড়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ বাংলাদেশের

fec-image

সাফল্যের স্বর্ণ মুকুটে আরো একটা পালক যোগ করলো বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে লিখলো আরো একটা রূপকথা। নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয় বারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জিতলো টাইগাররা।

প্রথম দুই ম্যাচে লড়াই হয়েছিল সেয়ানে সেয়ানে, ছিল ১-১ সমতা। ফলে আজকের ম্যাচটা রূপ নিয়েছিল অলিখিত ফাইনালে। যেখানে লঙ্কানদের ৪ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ নিজেদের করে নিলো বাংলাদেশ। লঙ্কানদের দেয়া ২৩৬ রানের লক্ষ্য ৪২.২ ওভারেই পাড়ি দিয়েছে টাইগাররা।

৩৬.১ ওভারে ১৭৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর খানিকটা দোদুল্যমান ছিল ম্যাচের ভাগ্য। তখনো জয়ের জন্য প্রয়োজন ৫৮ রান, আর মাঠে স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে কেবল তখন মুশফিকুর রহিম। এমতাবস্থায় দর্শক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, জিতিয়ে আনতে পারবেন তো মুশফিক?

মুশফিকের হয়ে সেই প্রশ্নের উত্তরটা যেন দিলেন রিশাদ হোসেন। একের পর এক ছক্কায় সেই মুশফিককে দর্শক বানিয়ে দলকে জিতিয়ে আনলেন তিনিই। বোলার পরিচয় ভুলে বনে গেলেন পুরোদস্তর ব্যাটার। ৫৮ রানের সমীকরণে তার ব্যাট থেকেই আসলো ৪৮! তবুও মাত্র ১৮ বলে।

অন্য ব্যাটাররা যখন হাসারাঙ্গাকে দেখেশুনে খেলে ওভার শেষ করায় মন, তখন সেই হাসারাঙ্গার নাকের পানি চোখের পানি এক করলেন রিশাদ। তার ১১ বল থেকেই নেন ৪০ রান। যেখানে ছিল চার ছক্কা আর ৪টি বাউন্ডারির মার।

রিশাদ জয় নিশ্চিত করলেও ভিতটা গড়ে দেন তানজিদ তামিম। লক্ষ্যটা মাত্র ২৩৬ রানের হলেও আবহাওয়া বিবেচনায় বেশ কঠিন ছিল। তবে তার ব্যাট যেন ধার ধারেনি ওসব কিছুর। অন্যপ্রান্ত থেকে আসা-যাওয়া লেগে থাকলেও তিনি ছিলেন নিজের মতোই। খেলেন ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস।।

ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটাকে শতকে রূপ দিতে পারেননি তানজিদ তামিম। অনেকটা কাছে গিয়েও ফিরতে হয় আক্ষেপ নিয়ে। তামিমের চোখ ধাঁধানো ইনিংসটা শেষ হয়েছে ৮১ বলে ৮৪ রানে। হাসারাঙ্গার বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে আসালাঙ্কাকে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।

অথচ আজ একাদশেই ছিলেন না তানজিদ তামিম। সৌম্য সরকারের চোটে কনকাশন সাব হিসেবে নেমে সুযোগের সদ্ব্যবহারটাই করলেন তিনি। প্রথমে এনামুল হক বিজয়কে নিয়ে গড়েন ৫০ রানের উদ্বোধনী জুটি। ৮.২ ওভারে বিজয় ২২ বলে ১২ রানে ফিরেন বিজয়।

এরপর নাজমুল হোসেন শান্তও ফেরেন দ্রুত। আউট হন ৫ বলে ১ রানে। এই দুজনকেও ফেরান লাহিরু কুমারা।

দ্রুত দুই উইকেট হারালেও দলকে চাপে পড়তে দেননি তামিম। রানের গতি ধরে রাখেন তিনি। তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি। হৃদয়ের সাথে বেশ জমে উঠে তার জুটি। যদিও তা বড় হয়নি, এই যুগলবন্দী থামে ৪৯ রানে।

পাঁচে এসে ৫ বলও খেলতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। ফেরেন ৪ বলে ১ রান করে। এরপর মুশফিককে সাথে নিয়ে যোগ করেন আরো ১৭ রান। তবে এবার তামিম নিজেই ফেরেন জুটি ভেঙে। ২৫.৫ ওভারে ১৩০ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

সেখান থেকে মেহেদী মিরাজকে নিয়ে ৪৮ রান যোগ করেন মুশফিক। তবে মিরাজ ইনিংস শেষ করে আসতে পারেননি, হাসারাঙ্গার বলে আউট হন ৪০ বলে ২৫ করে৷ তবে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। দলকে জেতান ৩৬ বলে ৩৭* করে।

এর আগে বল হাতে শ্রীলঙ্কাকে শুরু থেকেই চেপে ধরে বাংলাদেশ। যার শুরুটা করেছিলেন তাসকিন। নিজের প্রথম দুই ওভারেই তুলে নেন দুই উইকেট। আগের ইনিংসে দুর্দান্ত শতক হাঁকানো পাথুম নিশানকে দিয়ে যার শুরু, পরে ফেরান আভিস্কা ফার্নান্দোকেও।

দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন নিশানকা। খেলেন ১১৪ রানের ইনিংস। তবে এদিন ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ফেরান তাসকিন। এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়ে নিশানকা আউট হন ৮ বলে ১ রান করে।

আরেক ওপেনার আভিষ্কাকে ফেরান নিজের দ্বিতীয় ও ইনিংসের চতুর্থ ওভারে এসে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানান ৬ বলে ৪ রান তুলতেই। ৪ ওভারে ১৫ রানে ২ উইকেট হারায় তারা।

এরপর দৃশ্যপটে আসেন মোস্তাফিজুর রহমান। নিজের প্রথম ওভারেই সাদিরা সামারাবিক্রমাকে ফেরান তিনি। সাদিরা আউট হন ১৫ বলে ১৪ রান করে মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে।

তাসকিন-মোস্তাফিজের পর আঘাত আনেন রিশাদ হোসেন। দলে সুযোগ পেয়ে জানান দিচ্ছেন নিজের সামর্থ্যের। ভয়ংকর হয়ে উঠার আগেই ফেরান কুশল মেন্ডিসকে। লঙ্কান অধিনায়ক আউট হন ৫১ বলে ২৯ রানে

পরের উইকেটটাও যায় মোস্তাফিজের ঝুলিতে৷ এবার ফেরান ৪৬ বলে ৩৭ রান করা আসালাঙ্কাকে৷ তাতে ২৫ ওভারে ১২৫ রানে ৫ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে এখন দলকে টানেন জেনিথ লিয়ানগে। দুনিথ ভেল্লালেগে (১) বা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার (১১) কেউ পারেননি লিয়ানগেকে সঙ্গ দিতে৷

দু’জনকেই থিতু হবার আগে ফেরান মেহেদী মিরাজ। পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট তুলে লঙ্কান ব্যাটিং অর্ডারের লেঁজ বের করে আনেন তিনি। ৩৪.১ ওভারে ১৫৪ রানে ৭ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।

তবে লিয়ানগেকে থামানো যায়নি। থিকসানাকে সাথে নিয়ে দুই শ’ পার করেন দলের সংগ্রহ। গড়ে তুলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি। নিজেও পেয়ে যান ফিফটির দেখা। যা শেষ পর্যন্ত রূপ দেন শতকে। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ক্যারিয়ার সেরা ১০২ বলে ১০১ রানে।

৭৮ বলে ৬০ রান তুলে ভাঙে এই জুটি। থিকসানাকে ১৫ রানে ফেরান সৌম্য। শেষ ওভারে এসে তাসকিন ফেরান মাদুশানকে। আর লাহিরু কুমারা হন রান আউট৷ তাসকিন ৩ ও ২টি করে উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান আর মেহেদী মিরাজ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন