দেশ ও জনকল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ ইউএনও প্রণয় চাকমা

fec-image

প্রশাসনিক ও জনকল্যাণমুলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয় সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা।

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সচেতনতা সৃষ্টি, প্রবাস ফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, দ্রব্যমূল্যের কৃত্রিম সংকট ও উর্দ্ধগতি নিয়ন্ত্রণ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যার করোনা আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন সেবা চালু করা এবং সড়ক ও দোকানপাটে জনসমাগম বন্ধে প্রায় ২ সপ্তাহ ধরে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন।

করোনা সংক্রমন রোধ ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিনই তিনি নিজে গাড়ি চালিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন রামুর সমতল-পাহাড় অধ্যুষিত জনপদ। একদিনে তিনি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের সবকটি ইউনিয়নেই অভিযান চালিয়েছেন।

ইতিপূর্বে তিনি রামুতে শিক্ষার প্রসারে চালু করেন শিক্ষাবান্ধব বিশেষ বাস ‘স্বপ্নযাত্রা’। উপজেলা পরিষদ চত্বরে চালু করেন, দৃষ্টিনন্দন ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস এবং উপজেলা ডিজিটাল সেন্টার’ “খোলা জানালা”।

ইউএনও প্রণয় চাকমার উদ্যোগে রামু উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সৈকতে বঙ্গবন্ধু’র বৃহৎ চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। যে কোন নাগরিক সেবা ও দূর্যোগময় পরিস্থিতিতে তিনি নির্ভয়ে এবং দ্রুততম সময়ে ছুটে যান ঘটনাস্থলে।

জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ এবং সাংবাদিকসহ সকল নেতৃবৃন্দকে সমন্বয় করে তিনি রামু উপজেলাকে আলোকিত করতে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব কারনে রামুসহ জেলাবাসীর মুখে মুখে শোভা পাচ্ছে ইউএনও প্রণয় চাকমার কর্মকাণ্ডের প্রশংসা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি আতংকে পরিণত হওয়ার সাথে সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমার নির্দেশে রামুতে মাইকে সতর্কতামূলক প্রচারণা শুরু করা হয়। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে সকল হাট-বাজার, বাস স্টেশন, জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাইকিং করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা হয়।

এছাড়াও ১৯ মার্চ হতে তিনি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং হোম কোয়ারেন্টাইন আইন অমান্যকারী বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের জরিমানা এবং সতর্কতামূলক প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

গত ১৯ মার্চ রামুর বিটি কোচিং সেন্টারকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একইদিন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ঈদগড় বাজারে ৩টি দোকান মালিককে ৮ হাজার টাকা জরিমানা, ২০ মার্চ চৌমুহনী স্টেশন ও ফকিরা বাজারের ৭টি দোকান মালিককে ৮৪ হাজার টাকা জরিমানা, ২২ মার্চ কাউয়ারখোপ বাজার ও বাইপাস এলাকায় ২টি দোকানে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা, ২৩ মার্চ গর্জনিয়া, বাইপাস, কলঘর বাজারের ৬টি দোকান মালিককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

এছাড়া হোম কোয়ারেন্টাইন আইন না মানার অভিযোগে ২০মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ৯জন বিদেশ ফেরত ব্যক্তিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন। এনিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার ও বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোট ২লাখ ৩৮হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা।

অপরদিকে ১৫ জনের অধিক বিদেশ ফেরত ব্যক্তিকে যত্রতত্র ঘোরা-ফেরা না করার জন্য এবং হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার জন্য পায়ে হেঁটে রামুর অনেক দূর্গম এলাকায়ও যান ইউএনও প্রণয় চাকমা।

গত ২৬ মার্চ সকালে মহান স্বাধীনতা দিবসে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রামুর ১১টি ইউনিয়নের সব কটি ইউনিয়নেই ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালান ইউএনও প্রণয় চাকমা। ওইদিন নিজে গাড়ি চালিয়ে পুরো উপজেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আড্ডা-জমায়েত বন্ধে প্রচারনা চালান তিনি।

রামুতে শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ বৃদ্ধি, বিদ্যালয়মুখি করা, ঝরে পড়া রোধ এবং মেধাবী প্রজন্ম সৃষ্টির লক্ষ্যে ৩মাস পূর্বে ব্যতিক্রমী শিক্ষাবান্ধব বাস “স্বপ্নযাত্রা” চালু করেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা। এটি শিশুদের ভবিষ্যত স্বপ্ন বিকাশে কাজ করবে। তাই ইউএনও নিজেই এটির নাম দেন “স্বপ্নযাত্রা”।

২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর “স্বপ্নযাত্রা” বাসটি উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। সেই থেকে উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেধা যাচাই করে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনে যাচ্ছে স্বপ্নযাত্রা নামের এ বাস।

এছাড়াও অবৈধভাবে বালি উত্তোলন, পাহাড় নিধনসহ পরিবেশ বিধ্বসী কর্মকাণ্ড এবং মাদক, বাল্য বিয়ে প্রতিরোধসহ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অপরাধ নির্মূলে প্রতিনিয়িত কাজ করে যাচ্ছেন ইউএনও প্রণয় চাকমা। বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার ও বাড়িতে বাল্য বিয়ের আসর পণ্ড করে তিনি যেমন সবার কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তেমনি সাম্প্রতিক সময়ে রামুতে অনেকাংশে কমে গেছে বাল্য বিয়ের প্রবনতা।

রামুর সদর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, ইউএনও প্রণয় চাকমা রামুতে যোগদানের পর থেকেই রাত-দিন রামুবাসীর জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এমন নিষ্ঠাবান-কর্মঠ ও মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন ইউএনও রামুবাসী অতীতে দেখেনি।

রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া জানিয়েছেন, ইউএনও প্রণয় চাকমা অত্যন্ত পরিশ্রমী। তিনি করোনা পরিস্থিতিতে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টে ও কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা জানিয়েছেন, জনগণের সেবা ও সরকারের কাঙ্খিত উন্নয়নে রামুর ইউএনও প্রণয় চাকমা অগ্রনী ভূমিকা পালন করছেন।

রামুর ঐতিহ্যবাহী রাজারকুল আজিজুল উলুম মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মোহছেন শরীফ জানিয়েছেন, রামুতে করোনা সংক্রমন রোধে ইউএনও প্রণয় চাকমা নিজেই রামুর প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে চলেছেন। তাঁর দেশ ও জনবান্ধব কর্মকাণ্ড সর্বত্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কর্ম দক্ষতার মাধ্যমে তিনি মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান অর্জনে সক্ষম হয়েছেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাজাহান আলী জানান, রামুর ইউএনও প্রণয় চাকমা একজন দক্ষ সরকারি অফিসার হিসেবে প্রতিনিয়ত মানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। রামুর কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়া, ঈদগড় এর মতো দূর্গম এলাকায় তিনি প্রতিনিয়ত ছুটে গিয়ে মানুষকে কাঙ্খিত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল জানান, ইউএনও প্রণয় চাকমা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে রামুবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। একজন সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে জনগণ যেটুকু আশা করে, তিনি তার চেয়ে আরো বেশী সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর মতো উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাওয়া রামুবাসীর জন্য সৌভাগ্যের।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা জানান, রামুতে যোগদানের পর থেকে সরকারি প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারি হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি মাত্র। করোনা পরিস্থিতিতেও সরকারি নির্দেশনা মতে কাজ করে যাচ্ছি। সারাদেশের ইউএনও-এসিল্যান্ডসহ সরকারি কর্মকর্তারা যেভাবে কাজ করছে আমিও সেভাবে কাজ করছি। বেশী কিছু করছি বলে মনে হয়না।

তিনি আরো বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এনএসআই প্রতিনিধি আবু হানিফসহ অনেক জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা, সাংবাদিক সহ অনেকে সার্বিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

ইউএনও আরো বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে সাধারণ মানুষ আতংকিত। রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামা লে রিক্সা চালক, শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষ, অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি আর্থিক সংকটে পড়তে পারে। সংকটময় এ মুহুর্তে তাদের সাহায্যে সরকারের পাশাপাশি সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসা দরকার। তিনি করোনা সংক্রমন রোধে সবাইকে বাড়িতে অবস্থান করারও অনুরোধ জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইউএনও, চাকমা, রামু
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন