নামাযে একটু সরে দাঁড়াতে বলায় ইমামকে চাকরিচ্যুত করলেন ইউএনও

fec-image

কুমিল্লার লালমাই উপজেলার একটি মসজিদে জুমার খুতবা চলাকালীন ইমামের পেছনে শার্ট-প্যান্ট পরা এক ভদ্রলোক বসা ছিলেন। ইমামের পেছনে এমন একজন ব্যক্তি দাঁড়াতে হয় যিনি ইমামতির যোগ্যতা রাখেন, সে দিক বিবেচনায় ইকামত দেওয়ার আগে ঐ ব্যক্তিকে একটু সরে দাঁড়াতে বলেন ইমাম ও মুয়াজ্জিন। অতপর নামায শেষে ইমাম সাহেব মসজিদ থেকে বের হলে ঐ ব্যক্তি ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে মসজিদের দক্ষিণে সরকারি পুকুরপাড়ে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে জানাজানি হয় ঐ ব্যক্তি লালমাই উপজেলার ইউএনও মো. ফোরকান এলাহী অনুপম। আর সেখানেই ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে অনেক কটূ কথা বলেন এবং শেষ অব্দি চাকরিচ্যুত করেন এই ইউএনও।

শনিবার (১৪ অক্টোবর) বিষয়টি জানাজানি হয়। এর আগে শুক্রবার উপজেলার পেরুল ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংলগ্ন ভাটরা কাছারি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ঘটনাটি ঘটে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউএনও।

ওই মসজিদের ইমামের নাম মাওলানা আবুল বাশার। তার অভিযোগ, ক্ষুব্ধ হয়ে ইউএনও একাধিকবার তাকে পুকুরের পানিতে চুবানোর হুমকি দিয়েছেন।

ইমাম আবুল বাশার বলেন, খুতবা পড়ার শেষ পর্যায়ে প্রথম সারিতে শার্ট-প্যান্ট পরা এক ভদ্রলোক এসে বসেন। ইকামত শেষে নামাজে দাঁড়ানোর সময় মুয়াজ্জিন ওই ভদ্রলোককে একটু সরতে বলেন। না সরায় আমিও ওই ব্যক্তিকে সরতে বলি। পরে জানতে পারি তিনি ইউএনও। নামাজ শেষে আমি মসজিদ থেকে বের হলে (ইউএনও) আমাকে ও মুয়াজ্জিনকে মসজিদের দক্ষিণের সরকারি পুকুরপাড়ে ডেকে নিয়ে যান। তখন ইউএনও স্যার উত্তেজিত হয়ে বলেন, কোনো কথা নেই, তোকে এখন পানিতে চুবামো। তুই কত বড় মাওলানা হয়েছিস, তোর ইন্টারভিউ নেব।

পরে ইউএনও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল্লাহ ও মেম্বার গোলাপ হোসেনকে মোবাইল ফোনে কল করে দ্রুত পুকুরপাড়ে আসতে বলেন। চেয়ারম্যান-মেম্বার পুকুরপাড়ে আসার পর ইউএনও স্যার আমাকে প্রশ্ন করেন, আমাকে সরতে বললেন কেন?

মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ পারভেজ হোসেন বলেন, আমি ইউএনও স্যারকে চিনতে না পেরে সরতে বলেছিলাম। সে কারণে নামাজের পরে ইউএনও স্যার পুকুর পাড়ে নিয়ে আমাকে ও ইমাম সাহেবকে অনেক প্রশ্ন করেন। উত্তেজিত হয়ে ইমাম সাহেবকে কয়েকবার পানিতে চুবাতে বলেছেন।

মসজিদের মুসল্লি মাসুদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সরকারি অফিসারের বিষয়ে সত্য কথা বলে না জানি কোন বিপদে পড়ি। তারপরও বলছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকারি পুকুরে সকাল থেকে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছিলেন। জুমার নামাজে সামনের কাতারে তিনি ইমামের বরাবর বসেছিলেন। ইমাম ও মুয়াজ্জিন না চিনতে পেরে ওনাকে সরতে বলেছিলেন। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে নামাজের পরে পুকুরপাড়ে নিয়ে ইমামকে অনেক বকাবকি করেন। পুলিশ ডেকে আনার হুমকি দেন।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি শুক্রবার অন্য মসজিদে নামাজ পড়েছি। আমাদের মসজিদে উপস্থিত ছিলাম না। কিন্তু বিকেলে শুনেছি জুমার নামাজের পরে ইমামের সাথে নির্বাহী অফিসারের সমস্যা হয়েছে।

স্থানীয় পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল্লাহ বলেন, ইউএনও স্যার ইমামকে পানিতে চুবাতে বলেছে কি-না আমি শুনিনি। তবে ইমাম মুয়াজ্জিন সঠিক কাজ করে নাই। ইউএনও স্যারকে নামাজের সময় সরতে বাধ্য করেছেন। এটা তারা করতে পারেন না। সেই কারণে আমি কমিটির লোকজনকে বলেছি, ইমামকে বাদ দিতে।

লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফোরকান এলাহী অনুপম গণমাধ্যমকে বলেন, মসজিদের ইমাম উপজেলা থেকে নিয়োগ দেয় না, তাকে আমি বাদ দেওয়ার কে? এছাড়া আমি ইমাম কিংবা মুয়াজ্জিনকে পানিতে চুবাতে বলিনি, এটা অপপ্রচার।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইউএনও, ইমাম, নামায
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন