নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ

ramna-20

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আজ বাংলা বৎসরের প্রথম দিন। ১লা বৈশাখ ১৪২২ বঙ্গাব্দ। বর্ষবরণ সহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হচ্ছে বাঙালির প্রাণের এই উৎসব।

নববর্ষের এক অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে ওঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা। মনের অন্ধকারে আলো জ্বালার প্রত্যয়ে বাংলা ১৪২২ সালের নববর্ষের দিনে শুরু হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার স্লোগান হলো- ‘অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে।’

সকাল ৯টা ৮ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়েছে। আবহমান বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য প্রতীকী উপস্থাপনের সঙ্গে এতে স্থান পেয়েছে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহও।

শোভাযাত্রায় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন।

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছাগল, তোতা পাখি, হাট্টিমা টিম টিম, কাকাতুয়া, মাছ, বাঘ, পায়রা, হাতিসহ ১১টি বড় কাঠামো রয়েছে।

সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে রয়েছে ছাগল ও দুটি ছানা। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দাঁড়ানোর প্রতীক হিসেবে শোভাযাত্রায় রয়েছে প্রায় ২০ ফুট লম্বা একটি মুষ্টিবদ্ধ হাত। যার আঙুলে একটি লাল রং। এই লাল রং সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতীক। আর হাতটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে দেশের শান্তিকামী মানুষ।

অসংখ্য মুখোশ ও হরেক রকম পুতুলের পাশাপাশি এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় শিশুরা ঘুড়ি ওড়াচ্ছে, কাগজ দিয়ে তৈরি পাখি, পুতুল, চড়কা ধরে আছে কিংবা অপশক্তিকে বাম হাত দিয়েই মেরে ফেলা যায়, এমন বিষয়গুলো তুলে আনার চেষ্টা রয়েছে।

এসবের পাশাপাশি রয়েছে থিমেটিক স্থাপনা-শিল্প। এগুলো হল- টেপা পুতুল, মাছ, কাকাতুয়া, দুটি পায়রা, দুটি ছাগল, ঘোড়া এবং হাতি। এ ছাড়াও একটি টেপা পুতুলও রয়েছে। কলসি হাতে নিয়ে মা তার সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এমন গ্রামীণ দৃশ্যও রয়েছে শোভাযাত্রায়।

এ ছাড়া রয়েছে মুখোশের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা রাজা-রানী, উজির-নাজির, বাঘ, পেঁচা, টেপা পুতুলসহ নানা আকৃতি ও বর্ণের প্ল্যাকার্ড।

বাঙ্গালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু হয়েছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা।

শুরু থেকেই চারুকলার শোভাযাত্রাটির নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা ছিল না। তখন এর নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। ১৯৯৬ সালে এর নাম হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা।

বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে আনন্দ শোভাযাত্রা চারুকলায় ১৯৮৯ সালে শুরু হলেও এর ইতিহাস আরও কয়েক বছরের পুরানো।

১৯৮৫ বা ১৯৮৬ সালে চারুপীঠ নামের একটি প্রতিষ্ঠান যশোরে প্রথমবারের মতো নববর্ষ উপলক্ষ্যে আনন্দ শোভযাত্রার আয়োজন করে। যশোরের সেই শোভাযাত্রায় ছিল পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যসহ আরও অনেক শিল্পকর্ম। শুরুর বছরেই যশোরে সেই শোভাযাত্রা আলোড়ন তৈরি করে।

যশোরের সেই শোভাযাত্রার উদ্যোক্তাদের একজন মাহবুব জামাল শামীম মাস্টার্স ডিগ্রি নিতে পরে ঢাকার চারুকলায় চলে আসেন। পরবর্তীতে যশোরের সেই শোভাযাত্রার আদলেই ঢাকার চারুকলা থেকে শুরু হয় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা।

আজকের শোভাযাত্রা শেষে চারুকলা অনুষদের পশ্চিম পাশে সারা দিন ধরে চলবে পুতুলনাচ ও চড়ক। পরদিন সন্ধ্যায় বকুলতলায় শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মঞ্চস্থ হবে যাত্রাপালা রক্তাক্ত প্রান্তর।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন