নাব্যতা সংকটে মাতামুহুরী নদী

Matamuhury River News Pic

মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম :

এককালের প্রমত্তা মাতামুহুরী নদী এখন মরা নদীতে রূপ নিচ্ছে। বর্ষা শেষ হওয়ার কয়েকমাস যেতে না যেতেই এ নদীর বুকে নৌ চলাচল, কাঠ ও বাঁশ পরিবহনে দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। খরস্রোত এ নদীর উৎপত্তি বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হতে। মাতামুহুরীতে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় মৎস্য ভান্ডারেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব। ফলে জেলে পরিবারে নেমে এসেছে চরম হতাশা। মাতামুহুরী নদীর নাব্যতা পুনরুদ্ধারে আলীকদম উপজেলা থেকে লামা উপজেলা পর্যন্ত নদী ড্রেজিং করা সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে।

আলীকদমের সদরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শতোর্ধ্ব আলহাজ্ব আলীমুদ্দিন বলেন, মাতামুহুরী নদীর উৎপত্তি আলীকদম উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের পাহাড়ের পাদদেশ হতে। লামা-আলীকদম উপজেলায় জনবসতি গড়ে উঠেছিল এ নদীকেই ঘিরেই।

তাঁর ভাষ্যমতে, গেল আশির দশকে মাতামুহুরী নদীর গভীরতা ছিল ৫০-৬০ ফুট। প্রস্থ ছিল ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ ফুট পর্যন্ত। নদীতে ছিল বড় বড় কুম (বিশাল নীল জলরাশি)। অথচ এককালে গভীর জলরাশি সম্পন্ন প্রমত্তা মাতামুহুরী এখন শীর্ণকায় নদীতে রূপ নিয়েছে। সরকারী পরিসংখ্যানমতে, মাতামুহুরী নদীর আয়তন প্রায় ১৮৮০ একর।

সম্প্রতি এ নদীর উৎপত্তিস্থলে সরেজমিন দেখা গেছে, মাতামুহুরী কালের বিবর্তনে শীর্ণকায় নদীতে রূপ নিয়েছে। এ নদীর উৎপত্তিস্থল পর্যন্ত রয়েছে অসংখ্য ঝিরি ও খাল। প্রকৃতির বুক চিরে বয়ে চলা এসব ঝিরি ও খালের পানি মিশেছে মাতামুহুরী নদীতে। আলীকদম সদর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দুরে পাহাড়ভাঙা মুরুং পাড়া থেকে ১০ মিনিট উজানের দিকে অগ্রসর হলেই এ নদীর উৎপত্তিস্থলে পৌঁছা যায়। ইংরেজী বর্ণ “ণ” (ওয়াই) অক্ষরের মতো আকার নিয়ে মাতামুহুরী নদীর জন্ম হয়েছে। অনেকের মতে এখানেই মাতামুহুরী পরিসমাপ্তি। সমাপ্তিস্থল হতে উত্তর দিক হতে দুছরী ও দক্ষিণ দিক হতে ফাত্থারা খালের জলরাশি মাতামুহুরী নদীতে মিশে একাকার হয়েছে। এ নদীর ভূমি ঢাল পশ্চিমমুখী। উৎপত্তিস্থলে থেকে সর্পিল গতিতে একেবেঁকে মাতামুহুরী নদী মিশেছে বঙ্গোপসাগরে।

জানা গেছে, মাতামুহুরী নদীর নামানুসারে গড়ে উঠেছে ১ লক্ষ প্রায় ৩ হাজার একরের বিশাল রিজার্ভ ফরেস্ট। এ রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে গত দেড় দশক ধরে অবাধে বৃক্ষ নিধন, বাঁশ কর্তন ও পাহাড়িয়া জুম চাষের কারণে পাহাড়ের মাটি ক্ষয়ে পড়ছে নদীতে। ফলে নদীর তলদেশ ক্রমশঃ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও পাহাড় ও ঝিরি খুঁড়ে অবাধে পাথর উত্তোলনের কারণে ঝিরি থেকে পানির প্রবাহ কমে গেছে। নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।

গেল বছর পরপর তিনবার ভয়াবহ বন্যায় লামা-আলীকদম ও চকরিয়া উপজেলার বির্স্তীণ অঞ্চল ও জনবসতির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বর্ষা শেষ হতে না হতেই নদীর বুকে বুকে জেগে উঠবে অসংখ্য চর। নদীর নাব্যতা হ্রাসের ফলে লামা বনবিভাগের মাতামুহুরী রেঞ্জের বাঁশ পরিবহনে ও নৌকা চালকদের দুর্ভোগের অন্ত নেই।

অপরদিকে, নদীতে নীল জলরাশি (কুম) ভরাট হওয়ার ফলে মাছের আকাল পড়েছে। ফলে জেলে পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে চরম হতাশা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন