নারী দিবসে বিশেষ সম্মাননা পেলেন মনি পাহাড়ী ও শান্তনা খীসা

fec-image

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে রাঙ্গামাটিতে বিশেষ সম্মাননা পেলেন ২ জন নারী। তারা হলেন- নারী হেডম্যান কার্বারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক শান্তনা খীসা ও সাংস্কৃতিক কর্মী মনিরা পারভিন মনি (মনি পাহাড়ী)। সামাজিক ও সাস্কৃতিক অঙ্গনে অবদান রাখায় তাদেরকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

মঙ্গলবার (৮ মার্চ) সকালে এসআইডি-সিএইচটি, টংগ্যা, প্রোগ্রেসিভ, হিল ফ্লাওয়ার, উইভ সহ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহের সহযোগিতায় আলোচনা সভার আয়োজন করে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। এতে অনুষ্ঠান শেষে দুইজনের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী।

অনুভূতি বক্তব্যে, সুশীল সমাজ ও সরকারের কাছে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ও নারীদের ক্ষমতায়নে বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানান তারা।

মনিরা পারভিন মনি যিনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মনি পাহাড়ী নামে অধিক পরিচিত। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটক ও নাট্যত্ব বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। মাত্র ১২ বছর বয়স থেকে থিয়েটারের সাথে যুক্ত হওয়ার সূত্র ধরে পরবর্তীতে তিনি বিখ্যাত নাট্যকার মামুনুর রশীদ এর সাথে একত্রে সারাদেশব্যাপী থিয়েটার প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন।

বিখ্যাত বাংলা চলচ্চিত্র “মনপুরা” তে তিনি ছিলেন সহকারী পরিচালক। ” কে হতে চায় কোটিপতি” ইন্টারন্যাশনাল ফরম্যাট এর রিয়েলিটি শো’তে তিনি কাস্টিং প্রোডিউসার হিসেবে কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশ বেতার ঢাকার গ্রেড “এ” এর অভিনয়শিল্পী। পাশাপাশি বিবিসি মিডিয়া একশন এর ভয়েস আর্টিস্ট ও ডাবিং শিল্পী হিসেবেও বেশ পরিচিত। তিনি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে বেশ কয়েকবার অনুদানপ্রাপ্ত নাট্যদল গতি থিয়েটার ঢাকার সভাপতি। ২০১২সালে তিনি এসএটিভি ও পরবর্তীতে নাগরিক টিভিতে প্রোগ্রাম প্রোডিউসার হিসেবে কাজ করেন।পারিবারিক কারণে ২২ বছরের ক্যারিয়ার ছেড়ে তিনি রাঙ্গামাটি ফিরে আসেন ২০১৭সালে।

পাহাড়ে নাট্যচর্চার একটি গতি আসে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এর সহায়তায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এর আয়োজনে নাট্য প্রশিক্ষণ করানোর মধ্য দিয়ে। গড়ে উঠে নতুন নাট্য সংগঠন “হিল রিবেং থিয়েটার” যার সভাপতিত্ব করছেন পাহাড়ের এই নারী মনি পাহাড়ী।

শান্তনা খীসা রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার রামহরিপাড়া, ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ৩৮ বছর বয়সী কার্বারী (ঐতিহ্যবাহী গ্রামের প্রধান)। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিলেজ কমন ফরেস্ট (ভিসিএফ) নেটওয়ার্কের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা প্রধান (ঐতিহ্যবাহী মৌজা প্রধান) ও কার্বারী নেটওয়ার্কের সেক্রেটারি। তার পরিবার তাকে ১৭ বছর বয়সে বিয়ে করতে বাধ্য করে এবং তার শ্বশুর বাড়িতে কাজের চাপের কারণে সে অষ্টম শ্রেণির পর তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেনি।

তিনি একজন বিচক্ষণ মহিলা এবং পরিবার ও প্রকৃতির প্রতি কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন। সমাজে তার অবদান প্রশংসনীয় ছিল, নারী কার্বারি হিসেবে তার নির্বাচন প্রতিফলিত করে। তিনি সকল বিরোধের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন বিশেষ করে মহিলাদের বিরুদ্ধে। পুরুষ কার্বারী নেটওয়ার্কের সেক্রেটারি হিসাবেতার উদ্যমী কর্মদক্ষতা এবং উৎসর্গ তাকে সিএইচটি ভিসিএফ নেটওয়ার্কের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করে তোলে যা সক্রিয়ভাবে প্রাকৃতিক বন ও সম্পদ সংরক্ষণ, ভিসিএফ ব্যবস্থাপনা, পর্যবেক্ষণ এবং বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল রক্ষায় কাজ করে। তিনি বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ পেয়েছে, কর্মশালা, সভা, সেমিনার, সম্মেলন, কথোপকথন, শেখার পরিদর্শনে অংশ নিয়েছিল এবং তার এলাকার বাইরে বন উজাড়, জলাশয় বিষয়ে বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল এই নারী শান্তনা খীসা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন