পটুয়াখালী অতিক্রম করছে ঘুর্ণিঝড় মহাসেন

পার্বত্য নিউজ ডেস্ক, ঢাকা:  ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মহাসেন বাংলাদেশের পটুয়াখালীতে প্রথম আঘাত হেনেছে। সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া ঝড়টির আঘাতে সহস্রাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ মুহূর্তে ঝড়টি চট্টগ্রাম –কক্সবাজার উপকূলের দিকে  যাচ্ছে। আজ দুপুর নাগাদ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে  পারে।
খেপুপাড়ায় অব্যাহত রয়েছে এর তাণ্ডব। থেমে থেমে প্রচণ্ড গতিতে দমকা হাওয়া বইছে। বাতাসের গতিবেগ  ক্রমেই বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে সাতটা থেকে ঝড়ের গতি সহিংস আকার ধারণ করছে। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে মুঠোফোনে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণে তিন থেকে চার ফুট পানি জমেছে। এতে তলিয়ে গেছে মাঠের সব ফসল। ঝড়ের আঘাতে গাছপালা, ছোট কিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক অমিতাভ সরকার জানান, সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে এ জেলায় সহস্রাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নে হাওলাদার বাড়ির মো. আনিস হাওলাদার নামে এক ব্যক্তি ঘর চাপা পড়ে আহত হয়েছেন। ওই ইউনিয়নের পল্লী চিকিৎসক আব্দুল খালেক হাওলাদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কুয়াকাটার লতাচাপলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বারেক মোল্লা জানান, লতাচাপলি ইউনিয়নের মাত্র একটি সাইক্লোন শেল্টার সেন্টার রয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশ কিছু মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ভারি বর্ষণসহ প্রচণ্ড বেগে ঝড় বইছে। এতে বাকি লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাই তার নেতৃত্বে এ ইউনিয়নের বাকি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ কুয়াকাটা শহরের শতাধিক হোটেল-মোটেলে আশ্রয় নিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ ৩২ নাম্বার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে সরে গিয়ে আজ সকাল ৯ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২২৫  কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিম এবং মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২১০  কিলোমিটার  দক্ষিণে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ঘন্টায় ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
তবে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) তাদের সর্বশেষ সংবাদে জানিয়েছে, আজ বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে সাতটায় ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে সরে এর কেন্দ্রটি বাংলাদেশের উপকুলের উপর রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি আজ বিকেলের মধ্যে বাংলাদেশের উপকুল অতিক্রম করতে পারে । ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকুলীয় এলাকার জেলাসমূহের উপর দিয়ে অতি ভারী বৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।
এ অবস্থায় আবহাওয়া অধিদফতর চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার সমূদ্র বন্দরসমূহকে এখনও ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। উপকূলীয় জেলা  কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী,  চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।  আর মংলা সমূদ্র বন্দরকে এখনও ৫ নম্বর বিপদ সংকেত  দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৫ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
   
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ সহ ঘন্টায় ৯০-১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন