পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত

fec-image

মিয়ানরমারে ক্ষমতাসীন জান্তার অসহযোগিতার কারণে দায়িত্ব পালন করতে না পেরে অবশেষে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত নয়েলিন হেইজেল।

শুক্রবার (২ জুন) জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের এক মুখপাত্র এএফপিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

ওই মুখপাত্র বলেন, চলতি মাসেই পদত্যাগ করছেন নয়েলিন হেইজেল। আগামী ১২ জুন তার তার শেষ কর্মদিবস হতে যাচ্ছে। মিয়ানমারে শান্তি স্থাপনের জন্য নয়েলিন অক্লান্ত চেষ্টা করেছেন। তার এ প্রচেষ্টার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব তাকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।

সিঙ্গাপুরের নাগরিক ও সমাজবিজ্ঞানী নয়েলিন হেইজেলকে ২০২১ সালের অক্টোবরে মিয়ানমার সম্পর্কিত বিশেষ দূতের পদে নিয়োগ দেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তার মূল দায়িত্ব ছিল, কারাবন্দী গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির সঙ্গে ক্ষমতাসীন জান্তার আলোচনা ও বৈঠকের আয়োজন ও এ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে মধ্যস্থতা করা।

২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং সেই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। বর্তমানে দেশটিতে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের প্রধানও তিনি।

ক্ষমতা দখলের পাশাপাশি বন্দি করা হয় অং সান সুচি এবং তার রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) হাজার হাজার নেতাকর্মীকেও। সুচির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাজধানী নেইপিদোর একটি সামরিক আদালতে তার বিচার চলছে। এরই মধ্যে মিয়ানমারের এ গণতন্ত্রপন্থী নেত্রীকে ৩০ বছর কারাদণ্ডও দিয়েছেন জান্তানিয়ন্ত্রিত ওই আদালত।

এদিকে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী জনগণ জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করে। দেশব্যাপী সেই বিক্ষোভ দমনে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদেরকে এক পর্যায়ে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয় জান্তা। তারপর থেকে এ পর্যন্ত পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মিয়ানমারে প্রাণ হারিয়েছেন ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ।

বর্তমানে দেশটির বিভিন্ন এলাকায় সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর সংঘাত হচ্ছে। চলমান এ পরিস্থিতি থেকে মিয়ানামারকে তুলে আনতে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছর আগস্টে মিয়ানমারে সফর করেন নয়েলিন হেইজেল। জান্তাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইংসহ সামরিক সরকারের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক অস্থিরতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে কয়েকবার বৈঠকও করেন।

জান্তাপ্রধান ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সুচির সঙ্গেও দেখা করতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু অনুমতি পাননি। ফলে তার মিশন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আগস্টের ওই সফর শেষে তিনি মিয়ানমারের পরিস্থিতি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা দেন। সেই প্রতিবেদনকেও ‘পক্ষপাতমূলক’ বলে নিন্দা জানিয়েছে জান্তা।

পরে তিনি জানান, সুচির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে না দেওয়া হলে আর মিয়ানমারে যাবেন না তিনি। কিন্তু মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও সুচির সঙ্গে সাক্ষাতের কোনো বন্দোবস্ত না হওয়ায় দায়িত্ব নেওয়ার ১৮ মাস পর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন জাতিসংঘের বিশেষ এ দূত। সূত্র: ইয়ন

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জাতিসংঘ, মিয়ানমার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন