পরিমল-পান্না মাস্টারের দোসর রাঙামাটির শরিফুল

Dorshok Shoriful

ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে টানা তিন-চার মাস ধরে প্রতিরাত্রে ছাত্রীকে ধর্ষণ করতো গৃহশিক্ষক শরিফুল ইসলাম

আলমগীর মানিক,রাঙামাটি:

দিনের পর দিন বিভিন্ন অজুহাতে মারধর করে পিতা মাতার কাছে তাদের মেয়ে পড়ালেখায় খারাপ এটা উপস্থাপন করে, রাতের বেলায় কৌশলে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে গত তিন/চার মাস ধরে প্রায় প্রতিরাতেই জোরপূর্বক ধর্ষণ করতো। তারই ধারাবাহিকতায় রোববার গভীর রাতেও আমার ঘরে প্রবেশ করে জোর করে আমাকে ধর্ষণের সময় ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে আমার বড় ভাই ঘরে ঢুকে হাতে নাতে আটক করে গৃহশিক্ষক নামধারী নরপশু শরিফুল ইসলামকে। রাঙামাটি কোতয়ালী থানায় বসে এভাবেই কথাগুলো বললো গৃহশিক্ষক দ্বারা গত কয়েকমাস যাবৎ প্রতিনিয়ত যৌন নির্যাতনের শিকার ১৪ বছর বয়সী এক নাবালিকা কিশোরী। সে রাঙামাটি শহরের রানী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।

এই ঘটনায় ভিকটিমের পিতা আব্দুর রাজ্জাক বাদি হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে বলে জানা গেছে। কোতয়ালী থানায় এই প্রতিবেদককে কান্না জড়িত কন্ঠে সে আরো জানায়, আমি স্যারের এমন কর্মকান্ডে বাধাঁ দিলে তিনি আমাকে বেদম মারধর করতেন, আর আমার বাবা-মাকে বুঝানো হতো আপনাদের মেয়ে পড়ালেখা করতে চায়না আর স্কুলে সে ভালো ছাত্রী নয়, তাই একটু শাসন করছি। কিন্তু পড়ালেখা শেষ করে খাবার খেয়ে রাতের বেলায় যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়তো তখনই ভাঙ্গা জানালা দিয়ে আমার ঘরে প্রবেশ করে আমাকে একটি ট্যাবলেট দিতো খাওয়ার জন্য। প্রথম প্রথম আমি খেতে না চাইলে আমাকে থাপ্পর মেরে জোর করে ঔষধ খাওয়াতো। পরে আমাকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করতো। আমি বাধাঁ দিলে আমাকে স্যার বলতো, তুমি পড়ালেখা পারোনা এটা তোমার বাবা-মা ভালো করেই জানে, আর আমার কাছে পড়েই তুমি পড়ালেখায় ভালো করছো, তাই তুমি যদি এসব ঘটনা বলে দাও তাহলে আমি চলে যাবো, এতে করে তোমার পিতা-মাতা তোমার পড়ালেখা বন্ধ করে দেবে। এছাড়া এসব ঘটনা বললে মেয়েটির বেশি ক্ষতি হবে বলেও হুমকি দিতো গৃহশিক্ষক নামধারী শরিফুল ইসলাম। লাজ-লজ্জার ভয়ে মেয়েটি মুখ বুঝে সব কিছু সহ্য করতো জানিয়ে অঝোর ধারায় কাদঁতে কাদঁতে ঘটনার শিকার মেয়েটি এই প্রতিবেদককে প্রশ্ন রেখে বলে, পিতা-মাতাকে কি এসব বলা যায় বলেন ?

ঘটনার শিকার স্কুল ছাত্রীর পিতা দিনমজুর আব্দুর রাজ্জাক কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, শরিফুলকে আটকের পর তাকে এলাকাবাসি উত্তম-মধ্যম দিলে পালিয়ে গিয়ে আমাদেরকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সে আমাকে সরকার দলের নেতাদের নাম বলে হুমকিও দিয়েছে। তাই আমি বাধ্য হয়ে সঠিক বিচারের প্রার্থী হয়ে থানা পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছি। তিনি জানান, রাঙামাটি কলেজের ছাত্রলীগের এক নেতাও আমাকে এব্যাপারে শাসিয়ে বলেছে, এসব ব্যাপারে থানা পুলিশ করে কোনো লাভ নেই।

দায়িত্বরত ডিউটি অফিসার এসআই কানন জানিয়েছেন ঘটনার শিকার মেয়েটি ও তার পরিবার আমাদের কাছে এসেছে, পাশের রুমে মেয়েটির দেওয়া বর্ণনা শুনে সেটি আমাদের লোক লিপিবদ্ধ করছে। রাঙামাটি কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। মেয়েটির পরিবারকে বলেছি, থানায় একটি অভিযোগ দিতে, পরে আমরা খোজঁ খবর নিয়ে সঠিক তদন্ত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাইফুল ইসলাম জানান, আমাদের পুলিশের পক্ষ থেকে নারী নির্যাতনের ব্যাপারে এক চুলও ছাড় দেওয়া হবেনা।

এদিকে ঘটনার মূল নায়ক রাঙামাটির জেলা লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউপি’র রহমতপুর গ্রামের সৈয়দ আলীর ছোট ছেলে বলে জানা গেছে। রাঙামাটি সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণী ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সার্টিফিকেট কোর্সের ছাত্র। সে সরকারি কলেজে সরকারদলীয় সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানিয়েছে ঘটনার শিকার মেয়েটি ও তার পরিবার। উপরোল্লিখিত ঘটনার ব্যাপারে অভিযুক্তের মতামত জানতে সোমবার দুপুরে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন