মন্ত্রীপরিষদের সভায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

পর্যটকদের সঙ্গে প্রতারণা করলে ছয় মাসের জেল

fec-image

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে প্রায় ১০ মাস পর মন্ত্রিসভার বৈঠকে সশরীরে অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে ট্যুর অপারেটরদের কার্যক্রমকে পর্যটকবান্ধব এবং এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে ‘বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটর (নিবন্ধন ও পরিচালনা) আইন, ২০২১’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। দেশে বা বিদেশে ট্যুর অপারেটররা কোনো গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করলে অভিযুক্ত ট্যুর অপারেটরকে অনধিক ছয় মাসের জেল বা অনধিক দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এই আইনে শাস্তি প্রয়োগ করারও বিধান রাখা হয়েছে।

সোমবার (২৫ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে উল্লিখিত আইনের খসড়া ছাড়াও অন্য দুটি আইনের খসড়া এবং দুটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। স্বাভাবিক সময়ের মতো সব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে না ডেকে গতকালের বৈঠকে শুধু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবদের ডাকা হয়েছিল।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ট্যুর অপারেটরদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য দেশে প্রচলিত কোনো আইন না থাকায় অনেক সময় পর্যটকরা তাঁদের কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হন। প্রস্তাবিত আইনটি পাস হলে পর্যটকরা উন্নত সেবা পাবেন। এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাদের করণীয় সম্পর্কে জানতে পারবে। ফলে সম্ভাবনাময় এ খাতটি আরো ভালোভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নিবন্ধনপ্রাপ্তির যোগ্যতা, প্রক্রিয়া, মেয়াদ এবং নিবন্ধন সনদ বাতিলের বিষয়ে খসড়া আইনে বিস্তারিত বলা হয়েছে। যেসব বিষয় নেই, সেগুলো বিধির মাধ্যমে কভার করা হবে। প্রস্তাবিত আইনে নিবন্ধন সনদ ছাড়া ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড পরিচালনা করা যাবে না। আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হলে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প বিকাশের ট্যুর অপারেটরদের কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে সরকার।

মন্ত্রিসভায় ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা-২০২১’-এর খসড়াও অনুমোদন পেয়েছে। মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘বিশ্বের কিছু উন্নত দেশ জাহাজ নির্মাণশিল্প থেকে বের হয়ে আসছে। এখন দুবাইতে কিছু কারখানা গড়ে উঠছে। আমাদের দেশের কিছু কারখানাও এই খাতে সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।’ তিনি বলেন, এ কারণে সরকার এই খাতে বড় সহযোগিতা করতে চায়। যাতে ২০২৫ সালের মধ্যে জাহাজ রপ্তানি আয় বছরে চার বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশ বর্তমানে এই খাত থেকে এক বিলিয়ন ডলার আয় করে।

নীতিমালার মূল লক্ষ্য তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় জাহাজ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন, বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে বিশ্ব জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উপযুক্ত অংশীদার হিসেবে গড়ে তোলা হবে এই নীতিমালার লক্ষ্য। সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে জাহাজ নির্মাণশিল্প দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করাও নীতিমালার উদ্দেশ্য।

এ ছাড়া গতকালের মন্ত্রিসভায় ‘বয়লার আইন, ২০২০’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। ‘সরকারি করপোরেশন (ব্যবস্থাপনা সমন্বয়) আইন’ প্রণয়নের আবশ্যকতা নিরূপণের বিষয়ে ২০১৫ সালে গঠিত কমিটি পুনর্গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে ২০০৯ সাল থেকে এই পর্যন্ত সরকারি কর্মচারীদের অবসর সুবিধাদি বৃদ্ধি, পেনশনব্যবস্থার সংস্কার এবং এসংক্রান্ত অটোমেশন কার্যক্রম সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করেছে অর্থ বিভাগ। এর ফলে প্রতারণার মাধ্যমে পেনশন তোলার সুযোগ বন্ধ হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদসচিব।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পর্যটক, প্রধানমন্ত্রী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন