পানছড়িতে বিদ্যুৎ গ্রাহক সেবার বেহাল দশা

বিদ্যুত

শাহজাহান কবির সাজু. পানছড়ি:

খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায় বিদ্যুতের গ্রাহক সেবা নিয়ে নানান তালবাহানা শুরু করেছে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীরা। তাদের দাপটে গ্রাহকরা না পারছে কইতে না পারছে সইতে। এনিয়ে পানছড়ির শত শত গ্রাহক ক্ষোভে ফুঁসছে। যে কোন মুহুর্তে ঘটে যেতে পারে বড় ধরণের বিষ্ফোরণ।

সরেজমিনে জানা যায়, গত এপ্রিল মাসের বিদ্যুৎ বিলের সময়সীমা ১৯ মে শেষ হলেও শত শত গ্রাহকের হাতে আজো পৌঁছেনি বিলের কাগজ। আর যাদের হাতে পৌঁছেছে তাদের বেশীর ভাগকেই দেয়া হয়েছে কেজি: মাপা বিল। ফাতেমা নগর এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মো : বাচ্চু মিয়া পনেরশ’ টাকার অধিক বিল পেয়ে এখন শুধু দৌড়াচ্ছেন পানছড়ি-খাগড়াছড়ি।

শুধু বাচ্চু মেম্বার নয় কালানালের আ : কাদের, মোহাম্মদপুরের আ: ছোবহান, রোজিনা আক্তার, পাইলট ফার্মের আমিরুজ্জামানসহ অনেকেই ভুতুড়ে বিল পেয়ে জ্বলছেন ক্ষোভে। তালুকদার পাড়া গ্রামের বয়ো:বৃদ্ধ এয়াকুব আলী জানান, “দুই মাস ধইরা বিলের কাগজ পাইনা, তারা তামাশা শুরু করছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া কইরা লেহেন, আমি স্বাক্ষী দেম”।

৩নং পানছড়ি সদর ইউপি সদস্য মো : আবদুল জব্বার জানান, পানছড়ির বিভিন্ন এলাকায় ভরে গেছে বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগে। মিটার না থাকলে সাইড লাইন বাণিজ্য করে বিদ্যুৎ বিভাগের লাইনম্যানরা হচ্ছে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। সরেজমিনে তদন্ত আসলে ঐ ইউপি সদস্য নিজেই প্রমাণ দিতে পারবেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান।

সূত্রে জানা যায়, টমটম মালিকদের সাথে রয়েছে গোপন চুক্তি। অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে প্রতিদিন সন্ধ্যার পরেই এসব গোপন চুক্তি বাস্তবায়ন করে এবং পরবর্তীতে গ্রাহকদের বিলে এসব ইউনিট চালিয়ে দেয় বলে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়।

বিভিন্ন গ্রাহকদের মাঝে মিটার সাপ্লাই বাণিজ্যও খুব জমজমাট বলে জানা গেছে। জায়গা-জমির কাগজ দু’নম্বরী করে কিভাবে আবেদন করতে হয় বিদ্যুৎ বিভাগের লাইনম্যানরা তা হাতে-কলমে শিখিয়ে দিচ্ছে এবং সরকারি মূল্যের চেয়ে তিন-চারগুন বেশি টাকা নিয়ে মাসের পর মাস হয়রানী করছে গ্রাহকদের।

তাছাড়া নিজম্ব কোন মিটার রিডার না থাকার ফলে কয়েকমাস পরপরই ভুতুড়ে বিল বানিয়ে বিভিন্ন অবৈধ সংযোগের রিডিং চাপিয়ে দিচ্ছে বৈধ গ্রাহকদের বিলে। আর স্থানীয় মিটার রিডার থাকলেও তাদের চুক্তির বাইরে গেলেই চাকরি নট। এ পর্যন্ত গত কয়েক বছরে ৮ জন মিটার রিডার বদলী হয়েছে। গ্রাহকদের দাবি মিটার রিডার স্থায়ী না হওয়ার ফলে ভুতুড়ে বিল ও নির্দিষ্ট সময়ে বিল পেতে গ্রাহক হয়রানী দিন দিন বেড়েই চলছে।

পানছড়িতে কর্মরত লাইনম্যান শামছু’র সাথে বিদ্যুৎ গ্রাহক হয়রানী ও অবৈধ সংযোগের ব্যাপারে মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে লাইন কেটে দেন।

এ ব্যাপারে পানছড়ির দায়িত্বে থাকা আরআই আলাউদ্দিন সোহাগ জানান, গ্রাহক হয়রানীর ব্যাপারে পানছড়ির কয়েকজন গ্রাহক ফোনে অবগত করেছে। এসব ব্যাপারে সত্যতা যাচাই এবং গ্রাহক হয়রানী বন্ধে সহসাই ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

গ্রাহকদের দাবি পানছড়ি বিদ্যুৎ বিভাগের লাইনম্যানরা দীর্ঘ বছর যাবৎ একি স্টেশনের থাকার ফলে তারা জড়িয়ে পড়ছে নানান অপকর্মে। তাদের অন্যত্র বদলী করে নতুন লাইনম্যান আনা হলে হয়তো হয়রানীমূলক কর্মকাণ্ড থেকে রেহাই পাবে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। তাছাড়া মিটার রিডারও দীর্ঘ মেয়াদী থাকলে বিল পেতে কোন সমস্যা হবে না বলে তাদের দাবি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন