প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় দ. এশিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উচুঁ আলীকদম-থানচি সড়ক

Alikadam-Thanchi Road News Pic copy
মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান):
বান্দরবান জেলার আলীকদম-থানচি সড়ক।যা দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সড়কপথ। বান্দরবানের থানচি থেকে আলীকদম হয়ে এ পথ চলে গেছে আরেক পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। পাহাড়ে পর্যটন শিল্প বিকাশে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সুউচ্চ এ সড়ক। ৩৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ সড়কপথ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১২০ কোটি টাকা। সড়ক পথজুড়েই অসংখ্য উঁচু-নিচু পর্বতমালা। পাহাড় চূড়া কিংবা পাদদেশ বেয়ে আঁকাবাঁকা এ সড়কপথ। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে যার উচ্চতা প্রায় আড়াই হাজার ফুট। এটি এখন দেশের সবচেয়ে উঁচু সড়কপথ!

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত গ্রন্থিল পাহাড়ের বুক চিরে নির্মিত হয়েছে ‘আলীকদম-থানচি সড়কপথ’। ৩৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ সড়কপথ নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৯১ ইং সালে। ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে সম্প্রতি। আকাঁ-বাঁকা পিচঢালা পথবেয়েই আলীকদম-থানচি চলাচল করা যাচ্ছে। সহসাই প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এ সড়কপথ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে।

সেনাবাহিনীর নির্মাণ প্রকৌশল ব্যাটালিয়ন প্রায় ১২০কোটি টাকা ব্যয়ে চলতি অর্থবছরের এপ্রিল মাসে পুরো সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ করেছে। চলতি মাসের শেষদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এসড়ক উদ্বোধন করতে পারেন। এসব তথ্য জানিয়েছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি গত ২২ এপ্রিল সড়কের প্রাক-প্রস্তুতি ও সড়কপথ পরিদর্শনকালে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা জানান।

থানছি-আলীকদম সড়কর নির্মাণ প্রকল্পের প্রধান কর্মকর্তা লে.কর্নেল মনোয়ারুল ইসলাম জানান, মূলত প্রাথমিক পর্যায়ে ১৯৯১ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থানছি-আলীকদম অভ্যন্তরীণ সড়কের কাজ শুরু করে। ৮০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে সড়ক নির্মাণ কাজ হাতে নেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০০১ সালে পর্যন্ত সড়কের কেবল ৪ কিলোমিটার কাজ সমাপ্তির পর পুরো নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দেয়া হয় সেনাবাহিনীর নির্মাণ প্রকৌশল ব্যাটালিয়ানকে। ২০০৬ সালে অর্থবরাদ্দ পাবার পর পুনরায় সড়কের কাজ শুরু করা হয়।

২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৫ সালের জুন মাসে সড়কের  পুরো কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই সড়কের নির্মাণ শেষ করা সম্ভব হয়েছে। ১২ ফুট চওড়াও এবং উভয় পার্শ্বে ৩ ফুট করে মোট ১৮ ফুট প্রস্তুতি ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি।

তিনি বলেন, এক সময় থানছি-আলীকদম উপজেলার হাজার হাজার মানুষের একমাত্র যাতায়াত মাধ্যম ছিল বান্দরবান জেলা সদর হয়ে থানছি এবং আলীকদম থেকে থানছি আসতে ১৯০ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হত। সড়কটি নির্মাণের ফলে থানছি সদর থেকে আলীকদম উপজেলা যেতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট।

স্থানীয়রা জানান, এ সড়কটি নির্মিত হওয়ায় আলীকদম ও থানচি এ দুই উপজেলার দুর্গম এলাকার প্রায় ৮০ হাজার পাহাড়ি মানুষের সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত হল। স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর উৎপাদিত কৃষিপণ্যের সহজতর ও অল্প সময়েই পরিবহন সুবিধাও নিশ্চিত হয়েছে। ফলে এ দুর্গম এলাকার ৮০ হাজার মানুষের ভাগ্যে আমূল পরিবর্তন হতে যাচ্ছে।

বান্দরবান পার্বত্য জেলার থানছি ও আলীকদম উপজেলার দুর্গম এলাকার প্রায় ৮০ হাজার উপজাতীয় বাসিন্দাদের দাবি ছিল ৩৩ কিলোটিার দীর্ঘ থনাছি-আলীকদম সড়কটি নির্মাণের। অবশেষে সবুজ পাহাড়ের পাদদেশে নির্মিত হয় এ সড়কটি। সড়কটি চালু হলেই এলাকার প্রায় ৮০ হাজার পাহাড়ি তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য সহজেই পরিবহন সুযোগ পাবেন এবং তারা ন্যায্য মূল্যও পাবেন অনায়াসে।

Alikadam-Thanchi Road News Pic-02 copyথানছির দুর্গম রেমক্রির জুমচাষী লুইপা মুরুং ও কেউচিং মুরুং জানান, নবনির্মিত সড়কটি চালু হলে বনজদ্রব্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, জুমে উৎপাদিত ধান, তুলা, সরিসা, মিষ্টিকুমড়া, জুমকুমড়া, ধানিয়া মরিচ, মারফা, চিনার ও তিলসহ হরেক রকম কৃষিপণ্য পরিবহনের সুবিধা পাবে এবং তারা আর্থিকভাবে দ্রুত স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে বলে মতপ্রকাশ করেছেন।তা ছাড়াও বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে এবং স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। এতে এসব মানুষের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষার আলো পাবে।

আলীকদম উপজেলার সদর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন, পাহাড়ের দুর্গম এলাকাসমূহের সাথে সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। এখন আর পিছিয়ে পড়া কোন অঞ্চল নয় এ দুই উপজেলার পাড়া-গ্রামগুলো। তিনি বলেন, ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ থানছি-আলীকদম পাহাড়ি সড়কপথ নির্মিত হওয়ায় এলাকার  প্রায় ৮০ হাজার পাহাড়ি মানুষের স্বপ্ন পূরণ হল। সড়ক নির্মাণের  ফলে দুই উপজেলার সাধারণ লোকজনের জীবনযাত্রায় নতুন দিগন্তের সূচনা হল।

এ সড়কের জিরোপয়েন্ট থেকে মাঝখানে অবস্থিত অন্যতম পর্যটন স্পট ‘ডিমপাহাড়’। এ ডিমপাহাড়কে সাজানো গেলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্যে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করবে। সবুজ পাহাড়ের মাঝখানে উঁচু-নিচু আঁকা-বাঁকা এ সড়কপথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেই দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও দেখার সুযোগ পাবেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন