পানছড়িতে শিক্ষকের কাছে ছাত্রী ধর্ষিত, ১৬ দিন পর মামলা

ধর্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার:
জেলার পানছড়ি উপজেলার রক্স পরিচালিত আনন্দ কেন্দ্রের শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষিত হবার খবর পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক উপজেলার ৫নং উল্টাছড়ি ইউপির আলী নগর গ্রামের মো. গোলাপ হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৫)।

সরেজমিনে আলী নগর এলাকায় গিয়ে জানা যায় আনন্দ কেন্দ্রের শিক্ষক সাইফুলের কু-কীর্তির নানান কাহিনী। স্থানীয়রা মুখ খুলে কোন কিছু বলতে না পারলেও ক্ষোভে ফুঁসছে তারা। এলাকাবাসীর অভিযোগ লম্পট সাইফুল বিভিন্ন নামে পাশাপাশি তিনটি আনন্দ কেন্দ্র পরিচালনা করে বহু টাকা আত্মসাৎ করেছে। পরবর্তীতে জনরোসে একটি স্কুল বাতিল হলেও আজ পর্যন্ত পাশাপাশি বহাল রয়েছে দুটি স্কুল। যার জন্য আনন্দ স্কুলের তদারকি কর্মকর্তাদের ব্যর্থতার দিকেই অভিযোগের তীর ছুড়ছেন এলাকাবাসী।

তাছাড়া ২০/২৫ দিন আগে আলীনগর গ্রামের প্রতিবন্ধী মো. জাকিরের প্রতিবন্ধী ছেলে মো. আল-আমিন (৯)কে স্টীলের স্কেল দিয়ে এলোপাতাড়ি মেরে আহত করে যার ফলে তার হাতের একটি আঙ্গুলের নখ নিয়ে আজো ডাক্তারের চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য গ্রাম্য শালিশে জরিমানা আদায়ের মাধ্যমে সমাধান করে দেয়। কিন্তু আনন্দ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে জানার পরও কোন ব্যবস্থা নেয় নি।
এলাকার বয়োবৃদ্ধ মুরুব্বীরা জানায়, এই আনন্দ কেন্দ্রে সব সময় এলোপাতাড়ি মারধর চলে। পরিশেষে ৩১/১/১৬ ইং তারিখের রাতের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় পুরো আলী নগর, জিয়া নগর, উমরপুর ও রসুলপুর এলাকায়।

আলী নগর আনন্দ স্কুল ছাত্রীর মা রাহেলা খাতুন (৩৫) জানায়, আমার মেয়ে তানজিনা আক্তার (১২) আলীনগর আনন্দ কেন্দ্রে লেখাপড়া করে। এই সুবাদে শিক্ষক সাইফুল আমাকে বলে আপনার মেয়েকে আমার বাসায় দিয়ে দেন টুকটাক বাড়ির কাজ করবে আর আনন্দ কেন্দ্রে লেখাপড়া করবে। নিজের আর্থিক অনটনের কথা ভেবে সরল বিশ্বাসে রাহেলাকে শিক্ষক সাইফুলের বাড়িতে দিই। বিগত তিন মাস যাবৎ রাহেলা সাইফুলের বাড়িতে থাকলেও গত ৩১/০১/১৬ ইং তারিখে তার স্ত্রী বাপের বাড়িতে অবস্থানের সুযোগে রাত আনুমানিক ১০টার দিকে একাকী ঘরে তানজিনাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। এবং এ ঘটনা কাউকে বললে প্রাণে মারার হুমকিও দেয়।

কয়েকদিন পরে মেয়ের মুখে এ ঘটনা জানতে পেরে স্থানীয় ইউপি সদস্যার কার্যালয়ে একখানা আবেদন দিলেও কাল বিলম্ব করে পরিশেষে ১৩/২/১৬ ইং তারিখ ধার্য্য তারিখে সকাল ৮টায় রাহেলা খাতুন ও তার মেয়ে উপস্থিত থাকলেও সাইফুল হাজির হয়নি। অবশেষে একই দিন রাত ৮টায় আবারো শালিশের সময় নির্ধারণ করা হয় কিন্তু এবারেও সাইফুল হাজির না হওয়াতে ৫নং উল্টাছড়ি ইউপির ৪নং ওয়ার্ড সদস্য ও ৪, ৫,ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়। অবশেষে ১৪/২/২০১৬ ইং তারিখে রাহেলা বাদী হয়ে পানছড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করে।

পানছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আ. জব্বার জানায়, ঘটনাটি পুলিশকে এত দেরিতে জানানো ঠিক হয়নি। এ ব্যাপারে পানছড়ি থানায় শিশু ও নারী নির্যাতনের ২০০০ এর সংশোধনী ২০০৩এর ৯(১) ধারায় মামলা হয়েছে। মামলা নং ০২/তারিখ ১৪/২/২০১৬ ইং। ভিকটিমকে মেডিকেল করানোর জন্য খাগড়াছড়িতে পাঠানো হয়েছে এবং আসামীকে ধরার জন্যও পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে ওসি জানায়।

এ ব্যাপারে পানছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোশারফ হোসেন জানান, ব্যাপারটি আমি জেনেছি। কেন্দ্রটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

পানছড়ি আনন্দ কেন্দ্রের থানা কো-অডিনেটর স্বপ্না চাকমা জানান, কেন্দ্র শিক্ষক সাইফুলের স্ত্রীর নিকট আমি ঘটনাটি শুনেছি। এলাকার সামাজিক মুরুব্বীদের নিয়ে এটি সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান।

এদিকে এলাকাবাসীর দাবি ঘটনার আলামত নষ্ট করার জন্য একটি মহল গোপনে বিচার কার্যে বিলম্ব করেছে। সাইফুলের মত লম্পট যাতে আইনের ফাঁক ফোঁকড় দিয়ে বের হতে না পারে সেদিকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকাবাসী।

অন্যদিকে অভিযুক্ত সাইফুল পলাতক থাকায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়ানি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন