পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় গুরু বনভান্তের ৯৫তম জন্ম বার্ষিকী পালিত
স্টাফ রিপোর্টার :
পার্বত্য চট্রগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় গুরু প্রয়াত অরহৎ শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের ৯৫তম শুভ জন্মদিন পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ বুধবার ভোর ছয়টায় রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে বেলুন উত্তোলন ও কেক কাটার মধ্য দিয়ে শুরু করা হয় দিনব্যাপী কর্মসূচি। এছাড়া ভিক্ষুসংঘের প্রাত:রাশ, পঞ্চশীল প্রার্থনা, সংঘদান, অষ্টপরিস্কার দান, চীবর দান, উৎসর্গ, পরিত্রাণ পাঠ, বনভান্তের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা, সদ্ধর্ম দেশনা, পিন্ডদান ও সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন আয়োজন করা হয়।
পরে সকালে বনভন্তের জন্মদিন উপলক্ষে রাজবন বিহার এলাকায় বনভন্তের প্রতিকৃতি নিয়ে র্যালী বের করা হয়। র্যালীতে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী শত শত পূণ্যার্থী অংশগ্রহণ করেন। দুপুর ২টায় রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে অনুষ্ঠিত হয় ধর্ম সভা। অনুষ্ঠিত ধর্ম সভায় নব-নির্বাচিত রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় দশম জাতীয় সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে উপাসক-উপাসিকা পরিষদের আহ্বায়ক গৌতম দেওয়ান, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাবেক উপমন্ত্রী মণিস্বপন দেওয়ানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ যোগদান করেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে মহাসাধক বনভান্তের অমৃত বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁর শিষ্যমন্ডলী পুণ্যার্থীদের উদ্দেশে ধর্মীয় দেশনা প্রদান করেন। বনভান্তের উত্তরসূরী শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির এতে প্রধান দেশনা পাঠ করেন।
উল্লেখ্য, পরিনির্বাণলাভী এ বৌদ্ধ আর্যপুরুষ বনভান্তে ১৯২০ সালের ৮ জানুয়ারি রাঙ্গামাটি সদরের ১১৫নং মগবান মৌজার মোড়ঘোনা গ্রামের এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মহাসাধক বনভান্তে ২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারি মহাপরিনির্বাণগত হন।
বনভান্তে স্বর্গীয় হারু মোহন চাকমা এবং স্বর্গীয়া বীরপুদি চাকমার পাঁচ সন্তানের সবার বড়। তার গৃহী নাম ছিল রথীন্দ্র চাকমা। তিনি ১৯৪৯ সালে প্রব্রজ্যা নিয়ে (বৌদ্ধ ভিক্ষুর বস্ত্র) সংসার ছেড়ে সন্যাসীর জীবন গ্রহণ করেন। সেই থেকে তিনি দীর্ঘ ধ্যান-সাধনা করেন বনে-জঙ্গলে। কঠোর ধ্যান সাধনার ফলে লাভ করেন বৌদ্ধ ধর্মের অলৌকিক শক্তি অরহত্ব। আর এর মধ্য দিয়েই তিনি লাভ করেন মহাপরিনির্বাণ।
দীর্ঘদিন বনে-জঙ্গলে ধ্যান সাধনা করায় তিনি ভক্তকূলের কাছে অধিক পরিচিত বনভান্তে নামে। তিনি বৌদ্ধ ভিক্ষুর উপসম্পদা লাভ করেন ১৯৬১ সালে। রাঙামাটি রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ হিসেবে আগমণ করেন ১৯৭৪ সালে। বর্তমানে তাঁর মৃতদেহ সংরক্ষিত রাজবন বিহারে।