পার্বত্য চট্টগ্রামে ৫০ কোটি টাকার কফি-কাজুবাদাম চাষ প্রকল্প

fec-image

কৃষিমন্ত্রীর ঘোষণার পরে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে কফি-কাজুবাদাম চাষ’ প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এসেছে। প্রকল্পের ব্যয় হবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। চলতি বছরেই কাজটি শুরু করতে চায় মন্ত্রণালয়।

বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও আয়ে চট্টগ্রামের পার্বত্য জেলায় দু’হাজার কফি ও কাজুবাদামের বাগান করতে যাচ্ছে সরকার। এমন উদ্যোগ বাংলাদেশে এবারই প্রথম নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে পাহাড়ের ‍দু’হাজার পরিবার আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে।

আগ্রহী ও সংশ্লিষ্ট কৃষককে কফি ও কাজুবাদাম উৎপাদন, চাষ পদ্ধতি, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে উৎপাদিত কাজুবাদাম বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে। কফি ও কাজুবাদামের চারা বিএডিসি, হর্টিকালচারাল সেন্টার থেকে সরবরাহ করা হবে।

সংশ্লিষ্টদের মৌ চাষেও সম্পৃক্ত করা হবে। মার্কেট শেড নির্মাণের মাধ্যমে বাজারজাতকরণ সুবিধা সৃষ্টি করা হবে। এছাড়াও গ্রাভিটি ফলো সিস্টেম (জিএফএস) তৈরি এবং পানির উৎস সৃষ্টির মাধ্যমে পানি সরবরাহের সুযোগ দেওয়া হবে।

কফি ও কাজুবাদাম চাষ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কফি ও কাজুবাদাম চাষ করে বছরে চার বিলিয়ন ডলার আয় করছে ভিয়েতনাম। পার্বত্য চট্টগ্রামেও কফি-কাজুবাদাম চাষ করা হবে। এর চাষ পদ্ধতি শেখানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কৃষকদের ভিয়েতনামে পাঠানো হবে। কফি ও কাজুবাদামের চাষ এগিয়ে নিতে বিনামূল্যে চারা বিতরণ করা হবে।

কৃষিমন্ত্রীর ঘোষণার পরে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে কফি-কাজুবাদাম চাষ’ প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এসেছে। প্রকল্পের ব্যয় হবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। চলতি বছরেই কাজটি শুরু করতে চায় মন্ত্রণালয়।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের অন্যতম অনুন্নত তিনটি জেলা হচ্ছে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা। পার্বত্য এই তিন জেলায় আবাদযোগ্য ফসলি জমি আছে মাত্র ৫ শতাংশ। সমতল জমির অভাবে কৃষক তাদের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পাহাড়ের ঢালে অপরিকল্পিত চাষাবাদ করে থাকে। ফলে একদিকে যেমন ভূমি ক্ষয় এবং ভূমির উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায়, অন্যদিকে তা পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট করে। এ অবস্থার উন্নয়নে পার্বত্য এলাকায় উদ্যান ফসল চাষাবাদের গুরুত্ব বাড়ছে। সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পার্বত্য এলাকার মোট ভূমির প্রায় ২২ শতাংশ উদ্যান ফসলের আওতায় আনার সম্ভাবনা রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান ও আবহাওয়া বিবেচনায়, এখানে কফি ও কাজুবাদাম চাষের অনেক সুযোগ রয়েছে। কফি গাছ থেকে শুধু পানীয় কফিই নয়, এ গাছের অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করে মধু ও শ্যাম্পু তৈরি করা যাবে।

অপরদিকে কাজুবাদাম একটি উচ্চমূল্য ফসল হওয়ায় এর বাণিজ্যিক উৎপাদন বাড়ছে ও রপ্তানি পণ্য হিসাবে এর কদরও দিন দিন বাড়ছে। পার্বত্য এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, উৎপাদিত পণ্য বিক্রির বাজার সৃষ্টি, লাভজনক ফল-ফসলের ব্যাপক ফলন হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা জুম চাষের প্রাচীন বদ্ধমূল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসছে। দরিদ্র এবং প্রান্তিক কৃষকদের এ দু’টি ফসল আবাদের সম্পৃক্ত করা গেলে তা তাদের জীবন মান উন্নয়নে সহায়ক হবে।

প্রকল্পের আওতায় দু’হাজার বাগানে মৌ খামার স্থাপনের লক্ষ্যে মৌ বাক্স সরবরাহ ও মৌ চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আট হাজার চাষি ও দুইশ জন উদ্যোক্তাকে কফি ও কাজুবাদাম চাষ, ফসল সংগ্রহ বাজারজাতকরণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। দু’হাজার কম্পোস্ট সারের পিট, ৫০টি মার্কেট শেড, ১০টি জিএফএস ও ২০০টি পানির উৎস সৃষ্টি করা হবে। দু’হাজার পাওয়ার পাম্প সেট, তিনশ পানির ট্যাংক, ছয়টি কফি ও ছয়টি কাজুবাদাম প্রক্রিয়াকরণসহ ৮ হাজার দুইশটি কৃষি সরঞ্জামাদি কেনা হবে।

কফি-কাজুবাদাম চাষ প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা অনুবিভাগ) কমলা রঞ্জন দাশ বলেন, বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে কফি-কাজুবাদাম চাষ উদ্যোগ এবারই প্রথম। পাহাড়ের এই অপার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবো। ইতোমধেই প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আমরা বাছাই করা চাষির মাধ্যমে কফি-কাজুবাদাম চাষ করবো। বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রক্রিয়াজাতকরণেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এটা পাহাড়ে নতুন সম্ভাবনা বলে আমি মনে করি। এগুলো চাষবাদের ফলে পাহাড়ের একদিকে দারিদ্রতা কমে আসবে অন্যদিকে বিদেশ থেকে কফি-কাজুবাদাম আমদানিও বন্ধ হবে।

সূত্র: বাংলানিউজ

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কফি-কাজুবাদাম, চাষ প্রকল্প, পার্বত্য চট্টগ্রামে
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন