খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৯৩ কোটি টাকার প্রকল্প

পাহাড়ি জনপদে বদলে গেছে নিরাপদ-সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের চিত্র

fec-image

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রকল্প খাগড়াছড়ি জেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের চিত্র বদলে দিয়েছে।স্থাপিত ১১ হাজার ৭৮৩টি নলকূপ জেলার প্রায় ৬০ ভাগ মানুষের সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে।সে সাথে হ্রাস পেয়েছে ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগ। অপর দিকে ২৩৪টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৫৬টি হ্যান্ড ওয়াশ ও ১০৬টি ব্লক ওয়াশ নির্মাণের ফলে এ সব বিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিশুদ্ধ-সুপেয় পানির পাশাপাশি স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিন নিশ্চিত হয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলার প্রত্যন্ত গোলা কানা গ্রামে আজ থেকে ৬ মাস আগেও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা ছিল না। এ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ বাধ্য হয়ে ব্যবহার করছে পাহাড়ী ছড়া, কূয়া, ঝর্ণা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উৎসের পানি। আর এতে আক্রান্ত হতো ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগে।

সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য বিভাগ এ গ্রামে কয়েকটি নলকূপ স্থাপন করায় গ্রামের হাজরো মানুষের বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানি নিশ্চিত হয়েছে। শুধু গোলা কানা গ্রাম নয় জেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদে গত ৯ বছরে খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর স্থাপন করেছে ১১ হাজার ৭৮৩টি নলকূপ। ২৩৪টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৫৬টি হ্যান্ড ওয়াশ ও ১০৬টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্লক ওয়াশ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ১০টি বাজারে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও ৬৬টি বাজারে পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

এ সব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যায় হয়েছে প্রায় ৯৩ কোটি টাকা। আর প্রকল্প বাস্তবায়নে সুফল পাচ্ছে সুবিধা বঞ্চিত প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদে লাখ হত-দরিদ্র মানুষ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

পেরাছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী তুলি বড়ুয়া জানায়,হ্যান্ড ওয়াশ ও ব্লক ওয়াশ নির্মিত হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষাথীরা সুপেয় পানি ও মান সম্মত ল্যাট্টিন ব্যবহার করতে পারছে।পেরাছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুরভী চাকমা বলেন, হ্যান্ড ওয়াশ ও ব্লক ওয়াশ নির্মিত হওয়ায় বিদ্যালয়ে দুপুরের পর শিক্ষার্থীদের স্কুল ফাঁকি দেওয়া কমেছে। আগের মতো আর অসুখ-বিসুখ হচ্ছে না।

প্রত্যন্ত গোলা কানা গ্রামে বয়োবৃদ্ধ কমল কৃঞ্চ চাকমা বলেন, আজ থেকে ছয় মাস আগে গ্রামের মেয়েরা কয়েক কিলোমিটার দুর থেকে কষ্ট করে পানি নিয়ে আসতো। এখন গ্রামের মাঝখানে নলকূপ স্থাপিত হওয়ায় কষ্ট কমেছে।

একই গ্রামের সূচনা চাকমা বলেন, আগে পাহাড়ী ছড়া, কূয়া ও ঝর্ণা থেকে গ্রামবাসী পানি সংগ্রহ করে খেতো। এতে করে ডায়রিয়াসহ নানা পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হতো। নলকূপটি স্থাপিত হওয়ার পর আর রোগ দেখা যাচ্ছে না।

খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো: আশরাফুল ইসলাম জানান, খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জেলায় শতভাগ মানুষকে বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির আওতায় আনতে চলতি অর্থ বছরে আরো ৪০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লক ,৩৪টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হ্যান্ড ওয়াশ নির্মাণ, ৫৮টি গ্রামে পানি সরবরাহ ও ৬৫ বাজারে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা অনুসরণ করলে দেশের অপরাপর পার্বত্য জেলাগুলোও নিরাপদ-সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত হবে এমনি ধারণা পর্যবেক্ষক মহলের।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: খাগড়াছড়ি জেলা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন