পাহাড়ে বাঘ পুণঃপ্রবর্তনের পরিকল্পনা স্থগিত

fec-image

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে বাঘ পুণঃপ্রবর্তনের পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করেছে বাংলাদেশ। দেশের দক্ষিণ-পূর্ব পাহাড়ি বনাঞ্চলে বাঘের জনসংখ্যা পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার জন্য একটি সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যে এখনো সেখানকার পরিস্থিতি বাঘের জন্য উপযুক্ত নয়। মূলত বাঘের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও খাবারের অভাব এবং পাহাড়ি জনগণের বসতির প্রকৃতি বাঘের থাকার জন্য উপযুক্ত নয়। এশিয়ার বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক সংবাদমাধ্যম থার্ড পোল এ রফিকুল ইসলামের লেখা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয় পশু ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ এখন বিপন্ন একটি প্রজাতিতে পরিণত হচ্ছে। এই প্রাণীটির সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নেয়া নানা পদক্ষেপের মধ্যে একটি ছিল দেশের দক্ষিন-পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রামের গভীর বনে বাঘের পুনঃপ্রবর্তন। তবে বিষয়টি নিয়ে সরকার আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে আসতে চাইছে। ২০২০ সালে নেয়া এই পরিকল্পনা অনুযায়ি সরকার ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে বাঘ ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

এই লক্ষ্যে সেখানে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই সংক্রান্ত গবেষণা পরিচালনা করা হয়। তাতে দেখা যায় যে পার্বত্যাঞ্চলের বনভূমি এখনো বাঘের সফল পুনঃপ্রবর্তনের জন্য উপযুক্ত নয়। বিষয়টি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে বাংলাদেশ বন বিভাগ আপাতত পাহাড়ে বাঘ পুনঃপ্রবর্তনের পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে আসছে।

বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের অধীন বাংলাদেশ বনবিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দেখুন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঘ ছেড়ে দেয়ার আগে দু’টি বিষয় আমাদের বিবেচনায় রাখা দরকার – বাঘের বসবাসের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ এবং বাঘের পর্যাপ্ত শিকার থাকার সম্ভাবনা।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা দেখেছি যে সেখানকার আবাসস্থল এখনো বাঘের জন্য উপযুক্ত নয়। পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলে বাঘের জন্য পর্যাপ্ত শিকারও নেই। সেখানেও মানব বসতি একটি বড় সমস্যা। এসব কিছু বিবেচনা করে আমরা আমাদের পরিকল্পনা থেকে কিছুটা পিছিয়ে এসেছি।”

বাঘ সংরক্ষন এবং পুনরুদ্ধারে বন বিভাগ প্রণীত বাঘ কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২৭ অনুসারে বাংলাদেশে এক সময় বাঘের ব্যাপক বিচরণ ছিল। ১৯৩০-এর দশকে, দেশের ১৭টি জেলার মধ্যে ১১টিতেই বাঘের বসবাস ছিল বলে জানা গেছে। “তবে, ব্যাপক শিকার এবং বনভূমি উজাড় হওয়ায় বাঘের বিচরণের ক্ষেত্র এবং সংখ্যা কমে যায়।”

এই মুহুর্তে বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবনেই কেবল বাঘের বিচরণ রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেম সুন্দরবন একটি অন্যতম প্রাকৃতিক বনাঞ্চল যা গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা নদীর সঙ্গমে বঙ্গোপসাগরের তীরে গড়ে উঠেছে।

২০২০ সালে প্রথম বন বিভাগের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে বাঘের পুনঃপ্রবর্তনের পরিকল্পনার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এ প্রসঙ্গে প্রধান সংরক্ষক মো. আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, “অতীতে এই অঞ্চলটি বাঘের এক বিশাল আবাসস্থল ছিল বলে জানা যায়।” বাঘ সংরক্ষনে বন বিভাগের এই চিন্তা সরকারের টাইগার অ্যাকশন প্ল্যানের (২০১৮ – ২০২৭) সাথে সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। এটিকে সরকার একটি নিম্ন-অগ্রাধিকার লক্ষ্য হিসাবে চিহ্নিত করে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১০ বছরের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করে ১০০ মিলিয়ন টাকা (প্রায় ৯১৪,০০০ মার্কিন ডলার) বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সবকিছু বিবেচনা করে এই মুহুর্তে পরিকল্পনাটি স্থগিত রাখা হচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

বিশ্বের অনেক দেশেই হুমকিতে থাকা বন্য প্রানী পুন:প্রবর্তনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে বন্য প্রানী শিকার বন্ধ করার পাশাপাশি উপযুক্ত স্থান চিহ্নিত করাসহ বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে কোনাে বন্য প্রানী পুনঃপ্রবর্তন প্রচেষ্টার সাফল্য নির্ভর করে বেশ কয়েকটি জটিল পদক্ষেপের উপর, যার মধ্যে রয়েছে পুনঃপ্রবর্তিত প্রাণীদের উপর সব ধরনের হুমকি সীমিত করা, এসব প্রাণীর জন্য পর্যাপ্ত শিকারের ব্যবস্থা রাখা এবং বনের উপর নির্ভরশীল জনগনের সার্বিক সদিচ্ছা এবং সহযোগিতা নিশ্চিত করা।

প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, বন বিভাগ এখন পার্বত্য চট্টগ্রামে বন সৃজনের কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে এই বনাঞ্চল পুনরুদ্ধার সম্পন্ন হলে (হয়ত) সেখানে বাঘ ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

পাহাড়ে বাঘ পুণঃপ্রবর্তনের পরিকল্পনা নিয়ে ২০২০ সালের ১ অক্টোবর পাক্ষিক পার্বত্যনিউজ একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পরিকল্পনা, পাহাড়, পুণঃপ্রবর্তন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন