পাহাড়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন জুম চাষিরা

fec-image

বান্দরবানের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরদের প্রধান উৎস জুম চাষ। জুম চাষ পাহাড়িদের আদি পেশা। জুমের পাঁকা ধানের চাল দিয়ে চলে সারা বছরের খাদ্য। বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদমসহ ৭টি উপজেলায় বসবাসকারী পাহাড়ি পরিবারগুলো প্রায় সকলেই আজও জুম চাষ করে। জেলার মারমা, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, খুমি, লুসাই, পাংখো, বম, চাকসহ ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের অধিকাংশই জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। জুমের উৎপাদিত ধান থেকে বছরের ১২ মাসের অন্তত ৮ মাসের খাদ্যের যোগান মজুদ করে নেয় তারা। প্রতিটি পাহাড়ে এখন শুরু হয়েছে জুম ধানের বীজ বপনের উৎসব। তাই জুম চাষিদের এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। পাহাড়ের জঙ্গল-ঝোপঝাড় পরিষ্কার পর জুমে বীজ বপনের কাজে ব্যস্ততা সময় পাড় করছেন জুম চাষিরা।

জানা গেছে, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে উপযুক্ত পাহাড়কে নির্ধারণ করে শুরু হয় পাহাড় ঝোপঝাপ পরিষ্কার কার্যক্রম। টানা কয়েকদিন পর পাহাড়ের বিভিন্ন জমিয়ে রাখা ঝোপঝাড়কে নির্দিষ্ট সময়ের পুড়িয়ে ফেলা হয়। এরপর পোড়া জুমের মাটিতে দা দিয়ে গর্ত করে একসঙ্গে ধান এবং সাথী ফসল হিসেবে কলা, তুলা, তিল, মারফা, কাউন, ভুট্টা, হলুদ, আদা ইত্যাদি ফসলের বীজ বপনের কার্যক্রম শুরু হয়। টানা কয়েকমাস পর ভাদ্র-আশ্বিন ও কার্তিক মাসে চলে জুমের পাকা ধান কাটার মহোৎসব।

বান্দরবান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্যমতে, গেল বছরে ৮ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে জুমের ধানের উৎপাদন ছিল ১২ হাজার ৪১০ মেট্রিক টন। চলতি বছরে জুম ধানের আবাদ ছিল ৬ হাজার হেক্টর যা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার মেট্রিক টন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচিসহ দুর্গম এলাকার গ্রামগুলোতে এখন জুমের কাজে ব্যস্ত। ভোর হলে নারী-পুরুষ এক সাথে কাঁধ মিলিয়ে ছুটে যাচ্ছেন জুম পাহাড়ে। সাথে দা, কোদাল ও মাথায় থ্রুং (বাশের তৈরি ঝুড়ি) ও ধান নিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন কয়েক ফুট উঁচু পাহাড়ে। গ্রাম থেকে কয়েক মাইল পথ হাটার পর দেখা মিলে সবুজ পাহাড়ের ঘেরা খোলা আকাশে নিচে পরিপক্ক একটি পাহাড় । নারী-পুরুষ দলবেঁধে নিচ থেকে শুরু হয় জুমের ধান বপনের কাজ। সাথে রয়েছে ভুট্টা বীজও। সারিবদ্ধভাবে একে অপরে জুমের বীজ বপন যেন এক একটি প্রতিযোগিতা। জুমের বীজ বপন করে যে আগে পাহাড়ের চূড়ায় উঠবে তিনি গাছের নীচে আরাম-আয়াসে সময় কাটান।

রুমা বটতলি গ্রামে জুম চাষি মংমেগ্য, মেনু, মেহ্লাচিং ও ক্যসাচিং সাথে কথা বলে জানা গেছে, গ্রাম থেকে কয়েক মাইল দূরে পুরো পাহাড়ের ৫-৬ আড়ি ধান লাগিয়েছেন। যার পরিমাণ কয়েক একরের মতো। সাথী ফসল হিসেবে ভুট্টা, মারফাসহ আরো অন্যান্য ফলের বীজ লাগিয়েছেন। আবাহাওয়া ঠিক থাকলে ভালো ফলন হবে বলে আশা করছেন তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক এসএম শাহ নেওয়াজ বলেন, বান্দরবানের জুমের ধান চাষের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীন আউশ ধান চাষ করা জন্য উৎসাহ দিয়ে থাকি। যার ফলে ফলন হবে দ্বিগুণ। আর জুমে আদা, হলুদ, মারফা চাষ করলেও যাতে সময় মতো সেচ দিতে পারে, সে ব্যাপারে জুমিয়াদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে এবছরে উৎপাদনের পরিমাণ বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন