মানিকছড়িতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত শিক্ষক চিংচামং চৌধুরীর আজ ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী

পিতাহারা একমাত্র শিশু কন্যার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় ‘মা’

fec-image

সন্তান সম্ভাবা স্ত্রী ঘরে রেখে ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বর সশস্ত্র সন্ত্রাসীর ব্রাশফায়ারে নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন মানিকছড়ি’র কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক চিংচামং চৌধুরী। শিক্ষক নিহতের সাথে সাথে জনপদে ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও কালের আবর্তে আজ সব কিছুতে ভাটা পড়েছে! নিহতের একমাত্র কন্যা সন্তান হ্লামেচিং চৌধুরী(৫) পিতার স্নেহ-মমতা ছাড়া ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে মায়ের অফুরন্ত ভালোবাসায়। শিশুটির কেবলই জিজ্ঞাসা ‘মা’ বাবা কই?

আসছে নতুন বছরে পিতৃহীন শিশুটি প্রাক-প্রাথমিকে ভর্তি হবে নিস্প্রাণ মনে! ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বর রাতে উপজেলার সদরস্থ রাজপাড়ায় জেএসএস কার্যালয়ে আড্ডারত অবস্থায় নির্মমভাবে উপজাতি সশস্ত্র সন্ত্রাসীর ব্রাশফায়ারে নিহত হয় কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ও আ.লীগ নেতা চিংচামং চৌধুরী। সদ্যবিবাহিত সন্তান সম্ভাবা স্ত্রী থুইম্রাউ মারমাকে অকালে বিধবা করে চিরবিদায় নিতে হয় সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও রাজনীতিবিদ চিংচামং চৌধুরীকে।

ঘটনার পর খাগড়াছড়ি তথা পার্বত্য জনপদে ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে। মামলার পরিচালনাসহ নিহতের পরিবার-পরিজনের পাশে সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাসের ফুলঝুঁড়ি ব্যক্ত করেন জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। কিন্তু কালের আবর্তে আজ সবক্ষেত্রেই শুনসান নিরবতা! পাশে নেই কেউই। শুধু মৃত্যুবার্ষিকী এলে মারমা সংসদ ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হয় ব্যাপক আয়োজনে। এসবই যেন স্ত্রী,সন্তানের একমাত্র প্রাপ্তি।

এদিকে শিক্ষক চিংচামং চৌধুরী নিহতের ছয় মাস পর(৭ মে-২০১৫) পিতৃহীন পৃথিবীতে আগমন ঘটে কন্যা সন্তানের। আদর করে নাম রাখা হয় হ্লামেচিং চৌধুরী। পিতার স্নেহ-মমতা ছাড়া একমাত্র মায়ের অফুরন্ত ভালোবাসায় বেড়ে উঠেন শিশুটি। পৃথিবীর আলো-বাতাস ও মায়ের আদরে বেড়ে উঠা শিশু’র মূখে ধীরে ধীরে বুলি ফুটতে থাকে। একদিন হঠাৎ তার মা’কে শিশুটি জিজ্ঞাসা করে ‘মা’ বাবা কই?

শিশু’র প্রশ্নের জবাব দিতে আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা হয় মা থুইম্রাউ মারমা’র। এভাবেই দিন,মাস, বছর পেরিয়ে পিতৃহীন হ্লামেচিং চৌধুরী আসছে নতুন বছরে প্রাক-প্রাথমিকে ভর্তি হবে। অন্য শিশু’রা কেউ পিতার হাত, কেউ মাতার হাত ধরে স্কুলে যাবে আর বাবা-মা’র ভালোবাসায় সিক্ত হবে। কিন্তু হ্লামেচিং চৌধুরী শুধু মায়ের ভালোবাসায় বেড়ে উঠতে হবে!

নিহত শিক্ষক চিংচামং চৌধুরীর স্ত্রী থুইম্রাউ মারমা’র আবেগাফ্লুত হয়ে জানান, দুঃখ-বেদনার নানা কথা। তিনি বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর রাজনৈতিক ,সামাজিক ও শিক্ষক নেতারা রাজপথে প্রতিবাদি বক্তব্যে বলেছিলেন, নিহতের পরিবারের জন্য দৃষ্টান্তমূলক কিছু করবে, নিহতের পরিবারকে সরকারি চাকুরী দিবে, আরো কত কী দিবে ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রতি বছর মৃত্যুবার্ষিকীতে নানা আয়োজনে দিবসটি স্মরণ করা ছাড়া আর বড় পরিসরে আমার জন্য কিছুই করা হয়নি! আমি আজ কন্যা শিশুটিকে নিয়ে খেয়ে, না খেয়ে অমানবিক জীবন-যাপন করছি। এক কথায় অথৈই সাগরে ভাসছি!

তিনি বলেন, শিশুটি যখন বলে মা বাবা কই? তখন আমি স্তব্ধ হয়ে যাই! মা, মেয়ের জীবন এখন শুধু ধূধূ মরিচিকা ছাড়া কিছুই না। অসহায়ের অসহায়ত্ব নিয়ে অনেকে অপ-প্রচার ছড়াতে ব্যতি,ব্যস্ত। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি ও আমার শিশু কন্যার দূর্বিসহ জীবনের পথচলায় এখন সৃষ্টিকর্তাই একমাত্র ভরসা! এখন আর জীবন নিয়ে স্বপ্ন দেখছি না! যে দিকেই তাকাই শুধু ধূধূ মরিচিকা,অন্ধকার।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন