পেকুয়ায় ১৮ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে নির্মাণাধীন দুইটি সেতুর পিলার!

fec-image

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় ২০০৫ সালে ৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ও ৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার ব্যয়ে দুটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল।

তবে কেবল সেতু দুইটির কয়েকটি পিলার নির্মাণের পর বন্ধ হয়ে যায় কাজ। এর মধ্যে এখন কয়েকটি পিলার পানিতে ডুবু ডুবু অবস্থা। আবার কয়েকটি হেলে পড়েছে। আবার কয়েকটি পিলার পানির উপর দাঁড়িয়ে আছে। এভাবে পড়ে আছে ১৮ বছর ধরে। এসব পিলারের ওপর আদৌ সেতুর কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ সেতু নিমার্ণ হলে দেড় লাখ মানুষের উপকার হবে। ওখানকার উৎপাদিত পান, লবণ, চিংড়ি সারাদেশে সহজে পৌঁছাতে সম্ভব হবে।

এলজিইডি সূত্র জানায়, উজানটিয়া খালের ওপর ২০০৫ সালে সেতু নির্মাণে দরপত্র আহব্বান করা হয়। পেকুয়ার কাটাফাঁড়ি-সোনালী বাজার-করিমদাদমিয়ার ঘাট ভায়া মাতারবাড়ী জিসি সড়কের ৭ কিলোমিটারের মাথায় ২০৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৪ দশমিক ২৬ মিটার প্রস্থ এই সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

সেতুটির নাম দেওয়া হয় ‘পেকুয়া-মহেশখালী মৈত্রী সেতু’। সে সময় সেতুর আটটি পিলারের (মূল স্তম্ভ) কাজও শেষ করা হয়। অপরটি একই সময়ে উজানটিয়া খাল ও কোহেলিয়া নদীবেষ্টিত পেকুয়ার উজানটিয়ার ছোট দ্বীপ করিয়ারদিয়ার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আরেকটি সেতুর কাজ শুরু হয়।

উজানটিয়া-করিয়ারদিয়া সংযোগ সড়কের সৈকত বাজার এলাকায় ১৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৪ দশমিক ২৬ মিটার প্রস্থ এ সেতু বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সেতুটির নামকরণ করা হয় ‘মহামিলন সেতু’। এই সেতুরও পিলার নির্মাণের পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ সেতু দুটি নিমার্ণ হলে উজানটিয়া ও মাতারবাড়ীসহ ২ থেকে ৩ লক্ষাধিক লোকজনের সুবিধা হবে। মহেশখালী মাতারবাড়ীসহ উজানটিয়ার লবণ ও চিংড়ি বিদেশে দ্রুত পৌছানো যেতো।

এ দুই সেতুর নিমার্ণ কাজ পায় চকরিয়ার ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মেসার্স চকোরী কনস্ট্রাকশন। সেনাবাহিনী-সমর্থিত এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ঠিকাদার আত্মগোপনে চলে গেলে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখনো সে আত্মগোপনে।

সে সময় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পেকুয়ার করিয়ারদিয়া ও মাতারবাড়ী দ্বীপের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে পেকুয়ার উজানটিয়া খালের (মাতামুহুরী নদীর শাখা) ওপর এই দুটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল।

এ দুই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, তৎকালীন যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ও কক্সবাজার-১ (চকরিয়া ও পেকুয়া) আসনের সাংসদ সালাহউদ্দিন আহমদ।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সরকারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীকে ঘিরে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সেখানে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দরসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে । মাতারবাড়ীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ১৮ বছর আগে সেতুর কাজ শুরু হলেও আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদার নির্মাণকাজে নানা অনিয়ম করেন। এতে কাজের ত্রুটি ও অতিরিক্ত বিল দিয়ে বিপাকে পড়ে এলজিইডি। দরপত্র অনুযায়ী ২০০৭ সালের জুনে সেতু দুটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কাজ শেষ না হওয়ায় ২০১০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সেতু দুটির কয়েকটি পিলার হেলে পড়েছে। কয়েকটি পিলার পানিতে ডুবু ডুবু। কিছু পিলারের মাথা থেকে রড কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় বাসিন্দা আলী আকবর ও নাসির উদ্দিন বলেন, ২০০৭ সালের দিকে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ও ইঞ্জিনচালিত নৌকার ধাক্কায় পিলার হেলে পড়ে।

এলজিইডির এক প্রকৌশলী বলেন, তিন বছর সময় বৃদ্ধি করা হলেও ঠিকাদার কাজ শেষ করেননি। সেতু দুটির পিলারের কাজ করে ঠিকাদার ৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বিল তুলে নেন। সে সময় ঠিকাদার গিয়াসের প্রতিষ্ঠান থেকে দাবি করা হয়, এক- এগারোর সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা দুই সেতুর নির্মাণকাল থেকে বিপুল পরিমাণ রড, পাথর ও বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে গেছে।

এদিকে ওই এলাকার বাসিন্দা ও কক্সবাজার জর্জকোর্টের আইনজীবি মীর মোশাররফ হোসেন টিটু বলেন, এ দুইটি সেতুর নিমার্ণকাজ সম্পন্ন হলে আমার এলাকাসহ পাশ্ববর্তী মাতারবাড়ী ও মহেশখালীর উৎপাদিত লবণ ও চিংড়ি এবং মহেশখালীর অনেক সু-পরিচিত পান বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে। যেমনি ভাবে দেশ লাভবান হবে তেমনিভাবে এলাকার লোকজন লাভবান হবে।

এ সেতু হলে সেতু দিয়ে এসব এলাকার বাসিন্দারা সহজে চলাচল করতে পারবে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতো। দ্রুত নিমার্ণ শুরু করার দাবি জানাচ্ছি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে।

এদিকে উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তোফাজ্জল করিম বলেন, এলজিইডি মন্ত্রণালয় থেকে কয়েক দফায় সেতু দুটি পরিদর্শন করা হলেও কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। বারবার তাগাদা ও আবেদন করেও লাভ হয়নি। তিনি বলেন, সেতুগুলো বাস্তবায়ন হলে মাতারবাড়ী প্রকল্পের উন্নয়নকাজ আরও দ্রুত হতো। এখানকার উৎপাদিত লবণ ও চিংড়ি পরিবহন এবং যাতায়াতে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতো।

এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ মাহামুদ বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। তবে শুনেছি সময় বৃদ্ধির পরও কাজ শেষ না করায় ২০১০ সালের জুনে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ের একটি দল সেতু দুটি পরিদর্শন করেছে। সেখানে নতুন করে প্রকল্প নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে নাকি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন