প্রশিক্ষণের নামে হাতির শাবক নির্যাতন বন্ধের নির্দেশ আদালতের
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের উত্তর কুচাইটল এলাকায় প্রশিক্ষণের নামে বাচ্চা হাতির ওপর শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় আদেশ জারি করেছেন আদালত।হাতিকে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে পোষ মানাতে মান্ধাতার আমলের এ পদ্ধতি ব্যবহার করছিল মালিক পক্ষ। এ ধরনের প্রতিবেদন বিভিন্ন পত্রিকা ও চ্যানেলে প্রকাশিত হলে তা দৃষ্টিগোচর হয় মৌলভীবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মুহাম্মদ আলী আহসানের।
পশুর প্রতি এ ধরনের নিষ্ঠুর আচরণ কেন কর্তৃপক্ষের নিস্ক্রিয়তায় বেআইনি হিসেবে গণ্য হবে না এবং একই সঙ্গে কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না এই মর্মে তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে সোমবার কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন তিনি। জুড়ী থানার ওসি ও বন্যাপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে ১৫ মার্চের মধ্যে শো-কজের জবাব দিতে নির্দেশ দেন বিচারক।
জানা যায়, জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের অরণ্য অঞ্চলের কুচাইতলে একটি হাতি শাবকের চার পা কাঠের মজবুত একাধিক খুঁটির সমন্বয়ে রশি দিয়ে বেঁধে বশে আনার নামে শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছিল। গত ২৮ জানুয়ারি হাতি শাবককে (টাইগার) নিষ্ঠুর নির্যাতনের সচিত্র প্রতিবেদন বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়। স্থানীয়ভাবে এটিকে ‘হাদানি’ বলা হয়। মা হাতি থেকে দূরে রেখে বাচ্চাকে আলাদা বেঁধে ২-৩ মাসব্যাপী ‘প্রশিক্ষণ’এর নামে নানা কলা-কৌশল শেখাতে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়।
প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানহীন এমন একদল লোক ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে হাতির বাচ্চাকে পোষ মানোনোর নামে অমানবিক নির্যাতন করে। এ সময় হাতিটি শৃঙ্খলমুক্ত হতে জোর চেষ্টা চালায়, শুড় উঁচিয়ে কাতরায়। এ সময় হাতিকে খড়ের সঙ্গে মিষ্টি জাতীয় কিছু মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। এরপর রশি বাঁধা অবস্থায় হাতিকে বিভিন্ন স্থান ঘোরানো হয়। তারপর ফের বেঁধে রাখা হয়। কখনও নির্যাতনে হাতি শাবক মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তবুও নির্যাতন থামে না। সাতজনের হাতে থাকা সাতটি লোহার রড দিয় অবিরাম খোঁচানো হয় হাতি শাবককে।
আদালত আদেশে প্রশিক্ষণের নামে হাতিকে এ ধরনের নির্যাতনে কারা জড়িত তাদের নাম ও ঠিকানা, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত নির্দয় নির্যাতনে কত হাতি মারা গেছে, কীভাবে হাতি সংগ্রহ করা হয়েছে (তার মধ্যে ক’টি পালিত ও ক’টি বন্য), মৌলভীবাজার জেলায় হাতি লালন পালন এবং প্রশিক্ষণে ক’জনকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে ও হাতির প্রতি নির্দয় নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধে কি ধরনের আইনি প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা সরেজমিন তদন্ত করে জানাতেও নির্দেশ দেন জুড়ী থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্তী ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্য প্রাণী) রেজাউল করিম চৌধুরীকে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও বন কর্মকর্তাকে (বন্য প্রাণী) ১৫ মার্চের মধ্যে শো-কজের জবাব ও তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনের জন্য নির্দেশ দেন বিচারক।
বন্য প্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের (ডিএফও) কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী শো-কজ ও হাতি নির্যাতনের বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে প্রদানের নির্দেশের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, হাতি শাবককে নির্যাতনের খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে শাবকটি ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্যাতনকারীদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়েছি।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী আদালতের নির্দেশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে তিনি বলেন, অনেকদিন ধরে চিরাচরিত নিয়মে বাচ্চা হাতিকে পোষ মানানোর সনাতনী পদ্ধতির প্রশিক্ষণ চলে আসছে। জুড়ী উপজেলার এ ঘটনায় অন্তত হাতি পালনকারীরা জানতে পারবেন এটা অপরাধ। এ ধরনের প্রশিক্ষণ পদ্ধতি অমানবিক ও আইনবিরোধী কাজ।
উল্লেখ্য, জুড়ীর জায়ফরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী মাসুম রেজার হাতি শাবককে কুচাইতল এলাকার গভীর অরণ্যে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে হাদানি নামের ‘প্রশিক্ষণ’ এর নামে অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতন চলছিল। এ ধরনের পোষ মানানোর নামে মালিক হাতিকে ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনে ব্যবহার করে।