বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আরো ২১ জান্তা সদস্য, সীমান্তে ব্যাপক গুলির শব্দ

fec-image

মিয়ানমারের রাখাইনের মন্ডু জেলা শহর থেকে টহলে বের হওয়া ২ শতাধিক জান্তা বাহিনীর সদস্যের উপর আরাকান আর্মির কমান্ডো হামলার পর পালিয়ে আশ্রয় নেয়া ১৭৯ জান্তা সদস্যকে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরস্থ ১১-বিজিবির প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।

সোমবার (১১ মার্চ) বিকেল থেকে তাদের মানবিক কারণে সব ধরণের সেবা দেয়া হচ্ছে। এ স্কুলে জান্ত সদস্যদের অবস্থানের কারণে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিলো।

এদিকে গতকাল সোমবার বিকেলে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে আহত (গুলিবিদ্ধ) ইউপি মেম্বার সাবের আহমদের কোমরের পেছনের অংশ থেকে ১টি বুলেট বের করা হয়েছে। সোমবার গভীর রাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডা. শাহ আলম এ বুলেট বের করেন।

ছবি: আহত ইউপি মেম্বার সাবের আহমদ

 

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভুক্তভোগী নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের মেম্বার সাবের আহমদ। তিনি বলেন, বুলেটটি বের করার পর তার প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। অপারেশন পেছনে হওয়ায় অনেক কষ্ট তার। এ ছাড়া অর্থ সংকটে ঔষধ কিনতেও পারছেন না তিনি।

মঙ্গলবার বিকেলে জামছড়ি সীমান্তের বাসিন্দা আবদুচ্ছবি, জহির আলম ও কালাম বকসু এ প্রতিবেদককে বলেন, মঙ্গলবার সকালেও ওপারের রাণী এলাকায় গোলাগুলির ব্যাপক শব্দ জামছড়ি ও আশারতলী গ্রামের মানুষ শুনতে পেয়েছেন। তারা কাঠ কাটতে যাওয়ার পথে সকাল ৭টার দিকে এ শব্দ শোনেন। পরে তারা ভয়ে বাড়ি ফিরে যান।

এদিকে পালিয়ে আসা জান্তার সদস্যদের একজনের নাম টুয়ো মং। তার বয়স (৪২)। সে জানান, ১০ মার্চ বিকেলে তারা ২ শতাধিক সেনা সদস্য বিদ্রোহী দমনে টহলে বের হন। তারা বলিবাজার জান্তা বাহিনীর তাদের স্বতীর্থ সেনা ব্যাটালিয়নে ১১ মার্চ রাত যাপন করার কথা ছিলো। কিন্তু পথিমধ্যে বিদ্রোহী সশস্ত্র আরকান আর্মির কমান্ডোরা অতর্কিত তাদের টহল দলের উপর হামলা শুরু করলে তারা পাল্টা হামলা করে। রানী ও অংচাপ্রে নামক স্থানের দক্ষিণ-পশ্চিমে ২০ কিলোমিটার গহীন বনে এ ঘটনা ঘটায় তারা কঠিন সমস্যায় পড়েন। পরে তাদের উপরস্থ কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করলে উপরের নির্দেশে তারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। ২০০ সদস্যের ১৭৯ বাংলাদেশ সীমানা পার হলেও বাকী ২১ সদস্য এখনও বাংলাদেশ সীমানা ঘেঁষে লুকিয়ে আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তারা যেকোন সময় বাংলাদেশে পালিয়ে আসবে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে স্কুলের বেঞ্চ সরিয়ে মিয়ানমার জান্তা সদস্যদের বিছানা সাজানো হয়। অসুস্থদের সেবা দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিলো এ সময়। একটি সূত্র জানান, মঙ্গলবার এদের দুপুরের খাবারের তালিকায় বিরিয়ানী ও মুরগী মাংস ছিলো।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জান্তা সরকারের মোট ১৭৯ জন সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের আশারতলী গ্রামের জারুলিয়াছড়ির আগা ও জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে ৩ দফায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পরে তাদেরকে নিরস্ত্রীকরণ করে সোমবার দুপুরের পরপর ২৯ জনকে এবং রাতে ১৫০ জনকে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন বিজিবি স্কুলে নিয়ে আসা হয়। যাদের মধ্যে আহত ৪ জনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্যদেরকেও খাদ্যসহ অন্যান্য মানবিক সহায়তা দিচ্ছে প্রশাসন ও বিজিবি।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নের ১১ বিজিবির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দিয়ে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বিজিপির ১৭৯ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মুজাহিদ উদ্দিন জানান, ১৭৯ মিয়ানমার বাহিনীর সদস্যকে নাইক্ষ্যংছড়িস্থ বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। তাদের বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত মোতাবেক কার্যক্রম চালানো হবে।

প্রশাসনের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা না প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, সম্প্রতি রমজানে স্কুল বন্ধ রাখা নিয়ে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিষয় আপিল বিভাগে স্কুল খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন। এতে প্রাথমিক রমজানের প্রথম ১০ দিন খোলা রাখতে হবে। এখন এ পর্যায়ে বিজিবি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৭৯ মিয়ানমার সেনাকে অন্যত্র সরানোর বিষয়টি মঙ্গলবার বিকেলে সিদ্ধান্ত দেবেন সরকার। নাহলে অত্র স্কুলের ৬ শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হবে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ত্রিরতণ চাকমা বলেন, ১১ বিজিবি অধিনায়কের প্রস্তাবেই তাদেরকে বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার সে কারণে স্কুলের শিক্ষা কাযর্ক্রম বন্ধ ছিল। বুধবার থেকে যে ক’দিন ওরা থাকবে এ পর্যন্ত হয়তো এভাবেই থাকবে। আগামী ১০ রমজানের পর রমজান উপলক্ষে স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ (বিজিপি) ৩৩০ জন। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উখিয়ার ইনানী নৌ-বাহিনীর জেটিঘাট দিয়ে তাদের মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছিলো। আর ১১ মার্চ বাংলাদেশে পালিয়ে আসলো আরো ১৭৯ জন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন