বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর আগমন ও আদিবাস

fec-image

জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বসবাসরত অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নাম পাওয়া গেছে ৫০টি। এর বাইরে আরো কিছু জনগোষ্ঠী আছে। কিন্তু তাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। বাংলাদেশে অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর মোট জনসংখ্যা ১,৬৫০,১৫৯ জন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ০.১০%।

এদের মধ্যে নামোল্লেখিত ৫০টি জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা ১৫৮১৬২১ জন (যা অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর মোট জনসংখ্যার ৯৫.৮৫%) এবং অন্যান্য জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা ৬৮৫৩৮ জন (যা অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর মোট জনসংখ্যার ৪.১৫%)।

এখানে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জনগোষ্ঠীর আদিনিবাস, বাংলাদেশে তাদের আগমনের সময়কাল, জনসংখ্যা, ভাষা এবং তাদের বাসস্থান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হলো:

অহমিয়া/আসাম
জনসংখ্যা: ২০০০-২২০০ জন
বাসস্থান: রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি
আদিবাস: ভারতের আসাম
আগমন: ১৮৬০ খ্রি.
ভাষা: অহমিয়া

 

খিয়াং
জনসংখ্যা: ৪,৮২৬ জন
বাসস্থান: রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান
আদিবাস: মায়ানমারের আরাকান-ইয়োমা উপত্যকা
আগমন: ১৬০০-১৭০০ খ্রি.
ভাষা: কুকি-চীন দলভুক্ত

 

খুমী
জনসংখ্যা: ৩,৭৮০ জন
বাসস্থান: বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি
আদিবাস: মায়ানমারের চীন প্রদেশ
আগমন: ১৭ শতকের শেষ দিকে
ভাষা: কুকি-চীন দলভুক্ত

 

গুর্খা
জনসংখ্যা: ১০০ জন
বাসস্থান: রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, ঢাকা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও পটুয়াখালী।
আদিবাস: নেপাল ও ভারত
আগমন: ১৮৭১ খ্রি.
ভাষা: নেপালি


আরও পড়ুন:

পার্বত্য চট্টগ্রামের ইউপি নির্বাচন ২০২১-২০২২ এর ফলাফল বিশ্লেষণ

পার্বত্য চট্টগ্রামে সংসদীয় আসন সংখ্যা ন্যায়সঙ্গত করা হোক

The Migration Of Small Ethnic Groups To Bangladesh And Their Original Habitats

 

চাক
জনসংখ্যা: ৩,০৭৭ জন
বাসস্থান: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি
আদিবাস: হিমালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের পামির মালভূমি
আগমন: ষোড়শ শতাব্দির শেষ দিকে
ভাষা: লুই ও তিব্বতি বর্মী

 

চাকমা
জনসংখ্যা: ৪৮৩,২৯৯ জন
বাসস্থান: রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার
আদিবাস: ভারত অথবা মায়ানমারের চম্পকনগর
আগমন: ১৬৬০ খ্রি.
ভাষা: চাকমা

 

তঞ্চঙ্গ্যা
জনসংখ্যা: ৪৫,৯৭২ জন
বাসস্থান: রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও কক্সবাজারের টেকনাফ
আদিবাস: মায়ানমারের আরাকান
আগমন: ১৮১৯ খ্রি.
ভাষা: তঞ্চঙ্গ্যা

 

ত্রিপুরা
জনসংখ্যা: ১৫৬,৫৭৮ জন
বাসস্থান: রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ি, চাঁদপুর, ফরিদপুর।
আদিবাস: ৬৫ খ্রিস্টাব্দে চীনের ইয়াংসি ও হোয়াংহো নদীর উপত্যকা
আগমন: পরে ধীরে ধীরে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠি ভারতের আসাম হয়ে বাংলাদেশে আসে।
ভাষা: ককবরক

 

পাংখোয়া
জনসংখ্যা: ১,৮৫৭ জন
বাসস্থান: রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি, সাজেক, লংগদু, বরকল, কাপ্তাই
আদিবাস: মায়ানমারের চীন প্রদেশ
আগমন: অষ্টাদশ শতাব্দির শেষ দিকে
ভাষা: পাংখোয়া

 

বম
জনসংখ্যা: ১৩,১৯৩ জন
বাসস্থান: রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান
আদিবাস: চীনের চিনলুং এলাকা
আগমন: সপ্তদশ শতকে
ভাষা: বম

 

মারমা
জনসংখ্যা: ২২৪,২৬১ জন
বাসস্থান: রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি
আদিবাস: মায়ানমার
আগমন: ১৭৮৪ খ্রি.
ভাষা: মারমা

 

মুরং (ম্রো)
জনসংখ্যা: ৫২,৪৫৫ জন
বাসস্থান: বান্দরবান
আদিবাস: মায়ানমারের আরাকান
আগমন: সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দির মাঝামাঝি
ভাষা: ম্রো

 

লুসাই
জনসংখ্যা: ৩৮০ জন
বাসস্থান: রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি
আদিবাস: ভারতের লুসাই হিল
আগমন: কয়েক শতাব্দি আগে
ভাষা: লুসাই

 

কোচ
জনসংখ্যা: ১৩,৭০২ জন
বাসস্থান: বৃহত্তর ময়মনসিংহ, গাজীপুর, পাবনা, বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁ
আদিবাস: ভারতের কুচবিহার
আগমন: কয়েক শতাব্দি আগে
ভাষা: কোচ

 

গারো
জনসংখ্যা: ৭৬,৮৪৬ জন
বাসস্থান: বৃহত্তর ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, গাজীপুর
আদিবাস: তিব্বত/ভারতের গারো হিলস
আগমন: নবম-দশম শতাব্দি
ভাষা: মান্দি

 

হাজং
জনসংখ্যা: ৭,৯৯৬ জন
বাসস্থান: শেরপুর, নেত্রকোনা, গাজীপুর, সুনামগঞ্জ
আদিবাস: চীনের হোয়াংহো নদীর উপত্যকা থেকে তিব্বত, আসামের কামরূপ/বিহারের অবন্তিনগর
আগমন: সপ্তদশ শতাব্দি
ভাষা: হাজং

 

খাসি/খাসিয়া
জনসংখ্যা: ১২,৪২১ জন
বাসস্থান: সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ
আদিবাস: ভারতের আসাম
আগমন: প্রায় ৫শ’ বছর আগে
ভাষা: খাসি

 

মণিপুরী
জনসংখ্যা: ২২,৯৭৮ জন
বাসস্থান: সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ
আদিবাস: ভারতের মণিপুর
আগমন: ১৮১৯-১৮২৫ খ্রি.
ভাষা: মণিপুরী

 

রাখাইন
জনসংখ্যা: ১১,১৯৫ জন
বাসস্থান: চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পটুয়াখালী, বরগুনা
আদিবাস: মায়ানমারের আরাকান
আগমন: ১৭৮৪ খ্রি.
ভাষা: রাখাইন

তথ্য সূত্র: বাংলাপিডিয়া, নৃগোষ্ঠিসনদ.গভ.বিডি, ইউকিপিডিয়া, বাংলাদেশের আদিবাসী: এথনোগ্রাফিয় গবেষণা, জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রাথমকি প্রতবিদেন
ছবি: ইন্টারনেট

লেখক: সৈয়দ ইবনে রহমত, সাংবাদিক, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষক

[email protected]

আরও পড়ুন:

পার্বত্য চট্টগ্রামের ইউপি নির্বাচন ২০২১-২০২২ এর ফলাফল বিশ্লেষণ

পার্বত্য চট্টগ্রামে সংসদীয় আসন সংখ্যা ন্যায়সঙ্গত করা হোক

The Migration Of Small Ethnic Groups To Bangladesh And Their Original Habitats

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন