‘বাংলাদেশে বাঙালীরাই আদিবাসী: আইন করে উপজাতিদের আদিবাসী দাবী করা বন্ধ করতে হবে’

ma

স্টাফ রিপোর্টার:

‘বাংলাদেশে বাঙালীরাই আদিবাসী, ভিন দেশ থেকে আসা কোনো উপজাতীয় স্যাটেলার বাংলাদেশের আদিবাসী হতে পারে না। বাংলাদেশের উপজাতিদের আাদিবাসী দাবী করা, তার সপক্ষে অনুষ্ঠান, আন্দোলন ও কর্মতৎপরতা পরিচালনা করা আইন করে বন্ধ করার’ দাবী জানিয়েছে পার্বত্য বাঙালীদের ৫ সংগঠন। তারা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বাঙালীরা হাজার হাজার বছর ধরে এই ভূখণ্ডে বসবাস করছে। কিন্তু ৩-৪ শ বছর আগে বিভিন্ন দেশ থেকে এসে বাংলাদেশে স্যাটল করা কিছু উপজাতীয় জনগোষ্ঠী এখন নিজেদের আদিবাসী দাবী করছে। তাদের এই দাবী পেছনে রাষ্ট্রের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে রয়েছে’।

সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে পার্বত্য বাঙালী নেতৃবৃন্দ জানান, ‘আমরা জানি সরকার তাদের এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সম্যক অবিহিত। তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সার্কুলারের মাধ্যমে সরকার দেশে বিদেশে তাদের অবস্থান পরিস্কার করেছে। কিন্তু উপজাতীয় স্যাটেলার ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা এই সার্কুলার মানতে রাজি নয়। তাই অবিলম্বে আইন করে উপজাতীয় স্যাটেলারদের আদিবাসী দাবী করা বন্ধ করতে হবে’।

বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর প্রেসক্লাবে এক বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালী অধিকার নিয়ে আন্দোলন রত ৫ বাঙালী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তৃতায় এ কথা বলেন। সংগঠনগুলো হলো: পার্বত্য নাগরিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন, পার্বত্য গণ পরিষদ, পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র ঐক্য পরিষদ।

পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ ঢাকা মহানগর সভাপতি সাহাদাৎ ফরাজী সাকিবের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন, সম-অধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মনিরুজ্জামান মনির, পার্বত্য গণ পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব এ্যাডভোকেট পারভেজ তালুকদার, মোসতাক আহমদ ভাসানী, এ্যাডভোকেট আলম খান প্রমুখ।

মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন বলেন, শান্তিচুক্তির সময় লোক দেখানোভাবে কিছু গেরিলা সদস্য অস্ত্র জমা দিয়ে সরকারের কাছ থেকে ফায়দা হাসিল করে নিলেও চুক্তি মোতাবেক আজো পাহাড়ে থামেনি রক্তের হোলি খেলা। সরকারকে ফাঁকি দিয়ে এখনো পাহাড়ে স্বায়ত্বশাসন ও স্বাধীনতার দাবিতে সশস্ত্র আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। অথচ তারপরেও সরকার একেরপর এক তাদের বিভিন্ন অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক ও স্বার্বভৌমত্ব বিরোধী দাবীসমূহ পূরণ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার মন্ত্রীসভায় অনুমোদন করা হয়েছে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনেরর সংশোধনী। ২০০১সালের সেই আইন সংশোধন করে পার্বত্যাঞ্চলের ভূমির সমস্ত কর্তৃত্ব দিয়ে দেয়া হচ্ছে দেশদ্রোহীদের হাতে। এতে করে তারা ভূমির ব্যাপারে যেকোন ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে পার্বত্যাঞ্চলকে নিজেদের করে নিতে পারবে। কিন্তু দেশপ্রেমিক বাঙ্গালীরা জীবন থাকতে ভূমি আইন পাশের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামকে হাতছাড়া হতে দিবেনা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য সম-অধিকার আন্দোলনের মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মনির বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেও উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা বাঙ্গালীদের বিরোধীতা করেছিল, আজও করছে। ওদের মনোবাসনা বুঝতে পেরে ১৯৭৪ সালে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপজাতীদের উদ্দেশ্য করে বলেছিল “তোরা সবাই বাঙ্গালী হয়ে যা”, মানে মনেপ্রানে বাংলাদেশপ্রেমী হয়ে যাও, তখন এমএন লারমা, চারুবিকাশ চাকমারা সেটা মেনে নিতে পারেনি। গেরিলা শান্তিবাহিনী গঠন করে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েমের ষড়যন্ত্র শুরু করলো। তারা চায় সেখানে সেনাবাহিনী না থাকুক, বাঙ্গালীরা না থাকুক। ইতিমধ্যে ২৩৮টি সেনাক্যাম্প তুলে আনা হয়েছে। এখন তাদের পথেরদাবী কাঁটা হল পার্বত্য বাঙ্গালীরা। তাদেরকে সেখান থেকে সরাতে পারলেই তাদের স্বপ্ন সফল। কিন্তু এত হত্যা নির্যাতনের পরও পার্বত্য বাঙ্গালীরা মাতৃভূমিকে অরক্ষিত রেখে পালিয়ে আসেনি। অথচ ভূমি কমিশন আইন পাশের নামে আজ তাদেরকে পার্বত্যাঞ্চল থেকে জোর করে তাড়িয়ে দেয়ার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। সরকারের প্রতি আমরা বলতে চাই, বিতর্কিত আদিবাসী স্বীকৃতি, ভূমি কমিশন আইন পাশ ইত্যাদি যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন এদেশের মানুষ উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের সেসব দিবাস্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে দেবেনা। কারন পার্বত্যাঞ্চল শুধু পার্বত্য বাঙ্গালীদের নয়, আমার, আপনার সবার, এদেশের ১৬ কোটি মানুষের।

মানববন্ধন সমাবেশে পার্বত্য গণ পরিষদের মহাসচিব এ্যাডভোকেট পারভেজ তালুকদার বলেন, ইতিহাস থেকে জানা যায়, মাত্র ২’শ থেকে ৩’শ বছর আগে উপজাতীরা ভারত ও মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাংলাদেশে এসেছে। এসব আশ্রিত, বহিরাগত, সেটেলাররা এদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছে। উপজাতী কোটা পেয়েছে। তারপরও চায় আদিবাসী স্বীকৃতি। এটা একটা ষড়যন্ত্র। এখনই একে থামাতে হবে। আইন করে উপজাতিদের আদিবাসী দাবী করা, অনুষ্ঠান করা বন্ধ করতে হবে।

পার্বত্য গণ পরিষদের কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আলম খান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানে বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, শেখ হাসিনার একটু অসাবধানতার কারনে যেন সেটা দ্বিখণ্ডিত হয়ে না যায় সে ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।

মানববন্ধন শেষের সমাবেশে বক্তারা বলেন, যদি ৯ আগস্ট মঙ্গলবারের মধ্যে কোন প্রজ্ঞাপন জারি করে এই ভূমি কমিশন আইন বাতিল না করে তাহলে ১০ আগস্ট রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এই তিন পার্বত্য জেলায় একযোগে সকাল সন্ধ্যা হরতাল পালন করা হবে। এরপরও যদি সরকারের আশু পদক্ষেপ না পাওয়া যায় তাহলে দেশপ্রেমিক বাঙ্গালীদের নিয়ে পরবর্তিতে আরো কঠোর গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে বাধ্য হব। যার দায় সরকারকেই নিতে হবে। কারণ এদেশের মতো এই পার্বত্যাঞ্চলও আমার, আপনার, আমাদের সবার। সর্বোপরি এদেশের ১৬ কোটি মানুষের।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন