বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ভারী সমরাস্ত্রের গুলি বিনিময়
জমির উদ্দিন:
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমানায় টানা দু-দিন গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমানায় রোহিঙ্গা সোলিডারিটি অরগানাইজেশন (আরএসও) এবং মিয়ানমারের যৌথবাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা খবর পাওয়া গেছে। বুধবার রাত নয়টা থেকে শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়ের পাশাপাশি ভারি অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে বলে সীমান্ত সূত্রে জানা গেছে। এই ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, উভয়ের গ্রুপের মধ্যে প্রায় কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়েছে। বান্দরবান-মিয়ানমার সীমানায় ৫৪ ও ৫৫ নং পিলারের কাছাকাছি নাইক্ষ্যংছড়ি দোছড়ি ইউনিয়নের পানছড়ি গোড়িতলা এলাকায় গুলি বিনিময় হয়। এ ঘটনায় পাহাড়ী-বাঙ্গালী লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে উভয়ের মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা বান্দরবান প্রশাসনের কেউ স্বীকার করেনি।
স্থানীয়রা জানায়, গত বুধবার রাত নয়টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নের পানছড়ি অধিবাসীরা গোড়িতলা এলাকায় বৃষ্টির ন্যায় গুলির আওয়াজ শুনতে পায়। বুধবার থেকে দিন-রাত টানা বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত গুলির শব্দে আতংকিত হয়ে পরে স্থানীয়রা। মাঝে মধ্যে বিকট শব্দও শুনতে পায় স্থানীরা। রাতদিন চলতে থাকা বন্দুক যুদ্ধে আতংকিত হয়ে অনেক এলাকাবাসী নিরাপদ আশ্রয়ে যাই। ঘটনাস্থলে এখনো বিজিবি ও পুলিশ না পৌছায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পানছড়ি ও দোছড়ি এলাকার লোকজন জানান, বুধবার দুপুরের দিকে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমানায় ৫৪ ও ৫৫ নং পিলারের কাছে পানছড়ি এলাকায় ভারী অস্ত্র সহকারে আরএসও সশত্র বাহিনীর সদস্যদের জমায়েত হতে দেখতে পায় স্থানীয়রা। এরপর সন্ধ্যার দিকে মিয়ানমারের সীমানায় কাটা তারের বেড়ার কাছাকাছি চলে যায় আর এসওর সদস্যরা। মিয়ানমারের সীমানায় প্রবেশে বাঁধা দিয়ে মিয়ানমারের যৌথবাহিনী গুলি ছোড়ে। এরপর উভয়ের মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয়।
জানা যায়, আরএসও সংগঠনের সঙ্গে আফগান ফেরত জঙ্গী বাহিনীর কিছু সদস্য রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানান, দোছড়ি ইউনিয়নের ওয়াকসা খলের ঝিরির মাথায় আরএসও ট্রেনিং ক্যাম্প রয়েছে। বর্তমানে প্রায় দেড় শতাধিক আরএসও সদস্য রয়েছে। এদের প্রত্যেকের কাছে ভারী ও হালকা অস্ত্র রয়েছে। আর এসও ছাড়াও কিছুু উগ্রপন্তি সংগঠনের সদস্যরাও এই ক্যাম্পটি থেকে প্রশিক্ষন নিচ্ছে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার মিয়ানমার যৌথবাহিনীর সঙ্গে চলা বন্দুক যুদ্ধে ওই ক্যাম্পের সদস্যরাই অংশ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন।
দোছড়ি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান রশীদ আহম্মদ স্থানীয়দের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় জঙ্গী বাহিনী ও মিয়ানমারের যৌথ বাহিনী মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা খবর তিনি স্থানীয়দের মাধ্যমে শুনেছেন। দোছড়ি মৌজা হেডম্যান (মৌজা প্রধান) মংনু মারমা জানান, বুধবার রাতভর গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন। এদিকে পুলিশ প্রশাসন ও বিজিবি জানান, সীমান্ত এলাকায় এই ধরণের ঘটনার খবর তারা এখনো শুনতে পাননি। পুলিশ সুপার কামরুল আহসান নাইক্ষ্যংছড়ি থানা ওসি মো: রফিকের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় এই ধরণের কোনো ঘটনার খবর জানা যায়নি। তবে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় মাঝে মধ্যে গুলির শব্দ শুনতে পায় স্থানীয়রা।
নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে: কর্ণেল মেহেদি হাসান সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্ত এলাকায় গুলিবিনিময় হয়েছে কিনা জানা নেই।
অন্যদিকে পানছড়ি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. শফিউল আলমসহ আরো অনেকে জানান, তারা বাংলাদেশের সীমানার ভিতরে গুলাগুলির শব্দ শুনেছে। মো. শফিউল আলম বলেন, তার বাড়ি থেকে এক-দেড় কিলোমিটার দূরে ঘটনাস্থল। সারারাত ধরে বন্দুক যুদ্ধ চলার পরও গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত গুলির শব্দ তিনি শুনতে পেয়েছেন।