বান্দরবানের পাহাড়ে চাষ হচ্ছে কফি

fec-image

পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে চাষ হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পানীয় কফি। পাহাড়ের আবহাওয়া আর মাটি কফি চাষের উপযোগী হওয়ায় এখন অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে ঝুঁকছেন কফি চাষে, পাচ্ছেন সফলতাও।

চা এর পরপরই কফির চাহিদা। সেই কফি চাষ হচ্ছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে। জেলার সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের চিম্বুক ওয়াইজংশন পাহাড়ে মেনয়াং ম্রো নামে এক স্কুলশিক্ষক চাষ করছেন অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা জাতের কফি, এতে তিনি পাচ্ছেন সফলতাও।

কফি চাষি মেনয়াং ম্রো জানান, সঠিকভাবে কফি চাষ করতে পারলে ভালো ফলন হয় আর বিক্রি করে লাভবান হওয়া যায়।

তিনি বলেন, শুরুতে আমি এক হাজার ২০০ গাছ লাগালেও এখন তিন একর জমিতে প্রায় তিন হাজার কফির গাছ রোপণ করেছি। শুস্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি পেলে এ কফির চারার সঠিক যত্ন নেওয়া যায় আর এতে ফলন ভালো হয়, দাম পাওয়া যায় বেশি।

কফি চাষি মেনয়াং ম্রো বলেন, বান্দরবানের চাহিদা ও দেশের চাহিদা মিটিয়ে এ কফি এক সময় দেশের বাইরেও রপ্তানি হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

মেনয়াং ম্রোর সাফল্যের সংবাদে এলাকার অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কফি চাষে। এরই মধ্যে জেলার চিম্বুক পাহাড়, লাইমি পাড়া, ফারুক পাড়া, কুহালং, রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়িসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে কফি চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকেই। চিম্বুক পাহাড়ে এখন কফি চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নে জাল বুনে চলেছেন বাগান চাষি ঙুই ইন ম্রো, ইয়াঙ সম ম্রো, রুম ক্লাম ম্রো, মেন রুম ম্রো, রেন নক ম্রোসহ অনেক চাষি।

চিম্বুকের কফি চাষি রুম ক্লাম ম্রো বলেন, মেনয়াং ম্রো যখন কফির চারা লাগালেন, তখন আমরা তাকে নিষেধ করেছি লাগাতে, পরে যখন দেখি, তার বাগানে ভালো ফলন হয়েছে, তখনই তার দেখাদেখি আমরা বেশ কয়েকজন কফির চারা লাগালাম।

রুম ক্লাম ম্রো আরো বলেন, বান্দরবারের পাহাড়ের মাটি আর আবহাওয়া কফি চাষ করার জন্য উপযুক্ত আর যদি আমরা সঠিক পরিচর্যা করতে পারি, তবে প্রচুর কফি উৎপাদন হবে। আর এর ভালো দাম পাওয়া সম্ভব হবে।

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় ২০১০ সাল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয় কফি চাষ, আর তাতে দিনে দিনে সফলতা আসায় একে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে কৃষি কর্মকর্তারা।

বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, বান্দরবানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে কফি চাষ বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের চারা, সার ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। শুকানোর পর প্রতি কেজি কফি ৩২০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় আর এতে কৃষকরা ভালোই লাভবান হন।

তিনি আরও জানান, ঢাকার কফি ক্রয়-বিক্রয় প্রতিষ্ঠান নর্থএন্ড কোম্পানি বান্দরবানের এ কফি সংগ্রহ করে। ফলে দুর্গম পাহাড়ে চাষিদের উৎপাদিত কফি বিক্রিতে তেমন কোনো সমস্যাই হয় না।

বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক আরও জানান, বান্দরবানের আবহাওয়া জলবায়ু মাটি ভালো হওয়ায় এখানকার বেশিরভাগ জায়গাই কফি চাষের উপযোগী। আর কৃষকদের আগ্রহ দেখে কৃষি বিভাগও তাদের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গেল বছর বান্দরবানে ১৩৮ হেক্টর জমিতে কফির আবাদ হয়েছিল আর উৎপাদন হয়েছিল ২৬ মেট্রিক টন। আর এ বছর ১৪৫ হেক্টর জমিতে আবাদের বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৮ মেট্রিক টন। জেলায় কফি চাষের সঙ্গে জড়িত আছেন প্রায় ছয়শ’ চাষি।

সূত্র: বাংলানিউজ

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন