বাসন্তী চাকমাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে পাহাড় ত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ

fec-image

জাতীয় সংসদ অধিবেশনে উগ্র সাম্প্রদায়িক,সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রদানের অভিযোগ এনে তিন পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত ৯ নং মহিলা আসনের এমপি বাসন্তী চাকমাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে পাহাড় ত্যাগ করাসহ ৪ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে পার্বত্য অধিকার ফোরাম কেন্দ্রীয় সংসদ।

রবিবার (১৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ১২টায় খাগড়াছড়ির চেঙ্গি স্কোয়ার থেকে একটি  বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রদান প্রদান সড়ক প্রদক্ষিন করে শাপলা চত্ত্বরে এসে ঘন্টাব্যাপি মানবন্ধন করে। “বাসন্তী তুই রাজাকার এইমূহুর্তে পাহাড় ছাড়, সাম্প্রদায়িক বাসন্তীর পাহাড়ে ঠাই নাই”- স্লোগানের মধ্য দিয়ে মানবন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে পার্বত্য অধিকার ফোরাম কেন্দ্রীয় সংসদ ও সহেেযাগী অঙ্গ সংগঠন।

চার দফা দাবীগুলো হচ্ছে: ১. বাসন্তী চাকমাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে পাহাড় ত্যাগ করতে হবে। ২. বাসন্তী চাকমার উগ্র সাম্প্রদায়িক, মিথ্যা বক্তব্যের জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে সংসদে দাড়িয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে। ৩. অসাম্প্রদায়িক আওয়ামীলীগের সদস্য হয়েও উগ্র সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রদান করায় তাকে মহিলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করতে হবে। ৪. একজন অসাম্প্রদায়িক নারীকে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ হিসেবে মনোনয়ন দিতে হবে।

বিক্ষোভ মিছিলে কিছু কর্মসূচি দেওয়া হয়। এগুলো হলো : ১. উগ্র সাম্প্রদায়িক বাসন্তী চাকমা শুক্রবারের মধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে খাগড়াছড়ি ত্যাগ না করলে তাকে ঝাড়ু ও জুতা মিছিল নিক্ষেপ করে কঠোর ভাবে প্রতিরোধ করা হবে এবং যে কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির জন্য বাসন্তী চাকমাকে দায়ী থাকতে হবে।

বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি সফল করার জন্য সাংবাদিক, প্রশাসন ও নেতাকর্মী সহ সর্ব সাধারণের প্রতি আহ্বান জানানো হয় বিক্ষোভ থেকে।

অভিযোগ করা হয়, বাসন্তী চাকম সে তার বক্তব্যের শুরুতেই পাহাড়ের বসবাস কারী বাঙালিদের সেটেলার ও বহিরাগত আখ্যা দিয়ে বলেছেন যে ১৯৯৬ সালে নাকি বাঙালি ও সেনাবাহিনী ‘আল্লাহু আকবর’ বলে তার চোখের সামনে অনেক উপজাতি কে জবাই করেছেন।

তার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, ১৯৯৬ সালে ১ মে এই ধরনের কোন ঘটনা ই ঘটেনি। তার বক্তব্য যে সম্পূর্ন মিথ্যা ও অন্য কারো দ্বারা সাজানো এটি তার বক্তব্যেই প্রমানিত। সে কখনো বলেছেন ১৯৮৬ আবার কখনো বলেছেন ১৯৯৬। কিন্তু তার এই ধরনের উগ্র সাম্প্রদায়িক , একপেশে বক্তব্যে মনে হয়েছিলো সে পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল জাতি গোষ্টি ও সকল জনগনের প্রতিনিধি নয়, পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের এজেন্ট। কারন সে তার বক্তব্যে ঐ সময়ের রাষ্ট্রদ্রোয়ী উপজাতী সশস্ত্র দুটি গ্রুপের সন্ত্রাসীদের ভাই বলে সম্বোধন করেছেন, আর বাংলাদেশের নাগরিকদের যারা পাহাড়ে মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত বাঙালি ও দেশরক্ষায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীকে বলেছেন সেটেলার ও বহিরাগত খুনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ সভাপতি আহাম্মেদ রেদোয়ান বলেন, বাসন্তী চাকমার উগ্র সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রদান, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কথা বলা, সংবিধান ও সংসদ সদস্যের শপথ পরিপন্থিভাবে বাংলাদেশের নাগরিকদের ‘বহিরাগত’, সেটেলার আখ্যা দেওয়া, পার্বত্য চট্টগ্রামের অখন্ডতা রক্ষায় নিয়োজিত দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের প্রতি অসম্মান জানানো ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ উপজাতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সুরে কথা বলে তিন পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের মাঝে উগ্র-সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত বিভেদ উস্কে দিয়েছেন এই বাসন্তী চাকমা।

তিনি বলেন, তার নির্দেশেই তার বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলন কর্মসূচি ঠেকাতে তার সন্ত্রাসী ভাইয়েরা গত ১৮ ই মার্চের উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের উপর ব্রাশ ফায়ার করে ৮ জন কে নিহত ও ২৮ জন কে আহত করে। উগ্র সাম্প্রদায়িক এই নেত্রী পাহাড়ে আসার সাথে সাথে মহালছড়িতে তার শান্তিবাহিনী ভাইয়েরা দুটি গাড়িতে আগুন দেয়। সে পাহাড়ে থাকলে তার উগ্র সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের কারনে যে কোন সময় পাহাড়ে বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটতে পারে। তাই তাকে পাহাড় ছাড়তে হবে।

পার্বত্য অধিকার ফোরামের দিঘীনালা উপজেলা জৈষ্ঠ্য সহ সভাপতি গোলাপ হোসেন, মাটিরাঙ্গা উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা শাখার সদস্য সচিব আনিসুজ্জামান ডালিম, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সাহাবুদ্দীন, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সাদ্দাম হোসেন, জেলা আহবায়ক এস এম হেলাল, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার যুুগ্ন আহবায়ক মোক্তাদির হোসেনসহ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: খাগড়াছড়ি, পার্বত্য, বাসন্তী চাকমা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন