বিজিবি-বিএসএফ’র অস্ত্রের মুখে ফেনী নদীতে ২দিন ধরে আটকে আছে মানসিক ভারসাম্যহীন নারী
রামগড়-সাব্রুম সীমান্তবর্তী ফেনী নদীতে বিজিবি-বিএসএফের অস্ত্রের মুখে দু’দিন ধরে আটকে পড়ে আছে অজ্ঞাত পরিচয়ের মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী(৩২)। দুই দেশের কেউই তার নাগরিকত্ব স্বীকার করছে না।
শুক্রবার(৩ এপ্রিল) বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তিন দফা বৈঠক হলেও কোন পক্ষই ওই নারীর দায়ভার নিতে রাজী হয়নি। সর্বশেষ দুই বাহিনীর সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকও নিষ্ফল হয়। ফলে প্রচণ্ড রোদে ও ঝড় বৃষ্টিতে অত্যন্ত অমানবিকভাবে নদীতে আটক হয়ে আছে সে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে বৃহস্পতিবার(২ এপ্রিল) দুপুরের দিকে বিজিবির রামগড় বিওপি সংলগ্ন এলাকা দিকে বিএসএফ জোরপূর্বক রামগড়ে ঠেলে পাঠায়। এসময় সাব্রুমের কাঁঠালছড়ি ক্যাম্পের বিএসএফকে সেখানকার গ্রামবাসিরাও সহায়তা করে। খবর পেয়ে বিজিবি ওই নারীকে আটক করে পুনরায় ভারতে পুশব্যাক করে। কিন্তু বিএসএফের বাধায় সে ফেনীনদী অতিক্রম করতে পারেনি।
এদিকে বিজিবিও এপারে কড়া প্রহরায় রয়েছে। শুক্রবার সকালে ফেনী নদীর পাড়ে বিজিবি ও বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে প্রথম বৈঠক হলেও কোন পক্ষ নারীকে গ্রহণ করতে রাজী হয়নি। বিকালে নদীর মধ্যবর্তী স্থানে ৪৩ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. তারিকুল হাকিম ও সাব্রুমের ৬৬ বিএসএফের কমান্ডিং অফিসার রাজীব কুমার সিং এর নেতৃত্বে বৈঠক হয়।
বৈঠকস্থলে ওই নারীও উপস্থিত ছিলেন। উভয়পক্ষ থেকে ওই নারীর নাম, পরিচয় জানার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। প্রায় এক ঘন্টার এ বৈঠকে কেউই নারীটির নাগরিকত্ব স্বীকার করেনি। পরে ওই নারীকে নদীর মধ্যবর্তীস্থানে রেখে দুই পক্ষ নিজ নিজ দেশে ফিরে যায়। পরে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ফেনী নদীতে ভারতের নির্মাণাধীন মৈত্রী সেতুতে পুনরায় বিজিবি-বিএসএফের সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক হয়। এতে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন গুইমারা সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল জিএইচএম সেলিম হাছান ও বিএসএফের পক্ষে উদয়পুর সেক্টরের ডিআইজি জামিল আহমেদ। প্রায় ৩০ মিনিটের এ বৈঠকও নিষ্ফল অবস্থায় শেষ হয়।
৪৩ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. তারিকুল হাকিম বলেন, বিএসএফই বৃহস্পতিবার জোরপূবর্ক ওই নারীকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায়। এখন তারা তা স্বীকার করছে না। তিনি বলেন, কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে।
এদিকে, ভারসাম্যহীন নারীটি শুক্রবার সারাদিন নদীর মধ্যবর্তীস্থানে তপ্ত বালুচরে প্রচণ্ড রোদে পুড়ে আবার সন্ধ্যায় ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে ওই স্থানেই আটকা পড়ে আছে। শুক্রবার রাত ৯টায় এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত মানসিক ভারসাম্যহীন নারী অভুক্ত অবস্থায় রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অত্যন্ত অমানবিক অবস্থায় ফেনী নদীর মধ্যবর্তীস্থানে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অস্ত্রের মুখে আটকা পড়ে আছে।