স্বাস্থ্য সেবা বঞ্চিত রাজস্থলীবাসী

আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:

রাজস্থলী উপজেলার ১নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের কুসমিতা তঞ্চ্যঙ্গা গত ২২ মে রোজ বুধবার পারিবারিক কলহের জের ধরে বিষ পান করলে এলাকাবাসির তার চিৎকার শুনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলেও ৪৫ মিঃ হাসপাতালের বারান্দায় শুয়ে থাকতে হয় কুসমিতা তঞ্চ্যঙ্গাকে। সময় মতো ওয়াস করতে না পারায় অবশেষে মৃত্যুবরণ করতে হলো তাকে। হাসপাতালে কোন দক্ষ ডাক্তার সেই মূহূর্তে উপস্থিত না থাকায় এ অনাকাক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে। মৃত কুসমিতা তঞ্চ্যঙ্গার স্বামী স্বপন তালুকদার ডাক্তারের দেখা না পাওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন ঠিকসময় মতো আমার স্ত্রীকে ওয়াস করতে পারলে আমার স্ত্রীকে হয়তো মরতে হতোনা।

অনেক খোজ খবর নিয়ে জানা গেছে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডাক্তার মোঃ মাসুদ সোহেল চৌধুরী সদ্য যোগদান করেছেন। হাসপাতালে কর্তব্যরত দুইজন সহকারী ডাক্তার পাওয়া গেলে তাদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, আমরা নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। সরকার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ডাক্তারদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দিলেও এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে তার বিপরীত চিত্র দেখা যায়। ডাক্তারদের জন্য নিয়মিত আবাসিক ভবনগুলো পড়ে থাকে খালি। ফলে অযত্ন অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে সরকারী সম্পদ। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জন্য ৯ জন ডাক্তারের পদ থাকলে ও বর্তমানে দুইজন সহকারী মেডিক্যাল অফিসার কর্মরত আছেন। রাজস্থলী উপজেলায় পর্যাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার না থাকলেও নেই কোন জুনিয়র কলসালটেন্ট মেডিসিন সার্জারী এনেসতেসিয়া শিশু অর্থোসার্জারী কার্ডিওলজি, চক্ষু, ইএনটি, সহকারী সার্জন ও মেডিকেয়ার পদে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় চরম চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রাজস্থলী উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার পাহাড়ী বাঙ্গালী।

এছাড়া অফিস সহকারী ষ্টাফ নার্স মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ল্যাব-১, স্বাস্থ্য পরিদর্শক মালী পদে জনবল স্বল্পতা রয়েছে। সরেজমীনে জানা গেছে হাসপাতালটিতে জেনারেটর ব্যবস্থা না থাকায় বিদ্যুৎহীন সময়ে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বিশুদ্ধ খাবার পানির সমস্যা। এক্সরে মেশিন, ও গাইনী বিভাগের  কোন যন্ত্রপাতি না থাকায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া অভিযোগের প্রকাশ নানা অনিয়ম ও দূনীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হচ্ছে হাসপাতালটি । ফলে সরকারী স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী।

রোগীদের অভিযোগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এভাবে চলছে বছরের পর বছর। লেখালেখিও কম হয়নি। তদন্তও হয়েছে অনেক। কাজেরকাজ কিছইু হয়নি। তাই ৫০ হাজার জন অধ্যুষিত রাজস্থলী উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের প্রধান কেন্দ্র রাজস্থলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। অনিয়ম দূনীতি অব্যবস্থাপনা আর ডাক্তারদের খাম খেয়ালীপনার কারণে এ এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা আজও মুখ থুবরে পড়ে আছে। ডাক্তার মেডিক্যাল এসিসট্যান্ট, নার্স, ঔষুধ সবই খাতা কলমে আছে। বাস্তবে মেলা ভার। ১০ শয্যার ভবনটি শুধুই সাইন বোর্ড স্বর্বশ্ব হয়ে তার অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে মাত্র। এসমস্ত খাম খেয়ালীপনায় রোগীরা অতিষ্ট হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এখান থেকে। যদিওবা রোগীদের কেউ আসেন, তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ অথবা চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতাল।

উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লংবতি ত্রিপুরা বলেন পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দ্বিপংকর তালুকদার এমপি রাজস্থলী সফরে আসলে এলাকাবাসির অনুরোধের প্রেক্ষিতে হাসপাতালে একটি এ্যাম্বুলেন্স প্রদান করায় এলাকাবাসি কিছুটা উপকৃত হলেও হাসপাতালের ডাক্তারদের কারনে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সময় গালিগালাজ শুনতে হচ্ছে। যেমন, চলিত এইচএসসি পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে একজন পরীক্ষার্থী হঠাৎ মাথা ঘুরে পরীক্ষা কেন্দ্রে পড়ে গেলে তাৎক্ষনিক ভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্র থেকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভাইস চেয়ারম্যান পরীক্ষার্থীকে নিয়ে বিপাকে পড়েন। তখন হাসপাতালে কোন ডাক্তার বলতে কেউ ছিলেননা। বাধ্য হয়ে পরীক্ষার্থীকে চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ছাদেকুর রহমান।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থোয়াইসুই খই মারমা বলেন উপজেলায় ছোট কোন দূর্ঘটনা দেখা দিলেও হাসপাতালে গিয়ে কোন ডাক্তার সময় মতো পাওয়া যায় না। তাই প্রতিনিয়ত এলাকাবাসির বিভিন্ন অভিযোগ আমাকে শুনতে হয়। উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার আলাপ আলোচনা করে জেলা সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হয়েছে।

খবর নিয়ে আরো জানা যায় রোগীদের জন্য বরাদ্ধকৃত খাবারের মধ্যে গরমিল রয়েছে। রোগিদের সকালে পচাঁ বাশি খাবার যেমন- ১টি রুটি, ১টি কলা এবং দুপুরে সিদ্ধ চাউলের ভাত ও সবজিকলা এবং ১টি ডিম দিয়ে দায় সারাভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারী স্বাস্থ্য সেবা পেতে আসা রোগীদের অনেকেই আক্ষেপ করে বলেন, গরীব বইল্যা এই হানে আসি! চিকিৎসা নিতে, সরকারী ঔষুধ নিতে। ডাক্তাররা বেশিরভাগ রোগিদেরকে  পাঠিয়ে দেন ক্লিনিক অথবা বড় কোন হাসপাতালে। ক্লিনিক কি? আমরা চিনি না। এই অবস্থা ১দিন বা ২ দিনের নয়। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জনস্বাস্থ্য সেবা আজো আলোর মুখ দেখেনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন