ব্রিজ দু’টি পাল্টে দিতে পারে মানিকছড়ির পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জীবনমান!

fec-image

ব্রিটিশ শাসনামলে নীল চাষ বিদ্রোহী আন্দোলনে পার্বত্য খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার পশ্চাৎপদ জনপদে বসতি গড়ে তোলে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর একটি অংশ। এসব সাঁওতালেরা স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এখনো শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎকসা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় যেন নির্জনে, নির্দয়ে! ওদের নামকরণে এলাকার নামও সাঁওতালপল্লী। যেখানে অনায়াসে যাতায়াতের রাস্তা-ঘাট এখনো হয়ে উঠেনি। ফলে অসহায় ও হতদরিদ্ররা ৬ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে স্কুল বা চিকিৎসাকেন্দ্রে আসা সম্ভব হয় না! এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ নাগরিক সুবিধা থেকে তারা রয়েছে পিছিয়ে ।

বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী, গর্ভকালীণ ও দুগ্ধ মায়েরা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা থেকে বঞ্চিত! অন্যদিকে পূর্ব রাঙ্গাপানি এলাকাটি বিলের ওপারে হওয়ায় বর্ষা মৌসুম হয়ে উঠে ওদের কাছে অচিন জনপদ। পানির স্রোত ডিঙ্গিয়ে এপার অর্থাৎ হাট-বাজার আসা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়! বিশেষ কারণে আসতে হলে ২ কিলোমিটারের রাস্তা ৪ কিলোমিটার ঘুরে আসে হয়।

সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মানিকছড়ি-লক্ষ্মীছড়ি সড়কের রাঙ্গাপানি বাজার থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ কোণে লক্ষ্মীছড়ি ও মানিকছড়ি সীমারেখা ঘেঁষে সেই ব্রিটিশ শাসনামলে বসতি গড়ে তোলে সাঁওতাল জনগোষ্ঠী। প্রয়াত নকুন্দ সাঁওতালের নেতৃত্বে গড়ে উঠা সাঁওতালেরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পর গণমাধ্যমের কৃতিত্বে প্রশাসনের নজরে আসে! ফলে সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় সাঁওতালদের ঠাঁই মেলে সেমিপাকা ঘর ও লাল-সবুজের টিনের ছাউনিতে। কিন্ত সাঁওতালদের সহজ যাতায়াত দাইজ্জাপাড়া সড়কটির মাঝপথে রাঙ্গাপানি বিলের দুইটি স্থানে এপার-ওপার যাতায়াতে ব্রিজের অভাবে দুই পাশের মানুষ একে অপর থেকে যেন এখনো অচেনা! বর্যাকালে বিল পানিতে তলিয়ে গেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় একে অপরের সাথে দেখা কিংবা হাট-বাজারে যাওয়াত! ব্রিজ দু’টি হলেই সাঁওতালপল্লী ও দাইজ্জাপাড়ার সকলে অনায়াসে উপজেলা সদরে আসা-যাওয়া সহজ হয়ে উঠবে। এতে করে রাঙ্গাপানি এলাকায় চহ্লাপ্রু কার্বারী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিকে আসা-যাওয়া ও সেবাগ্রহণ সহজ হবে।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) সরজমিনে কথা হয় সাঁওতাল নারী শুভ রানী সাঁওতালের সাথে। তিনি জানান, এখানের শিশু, কিশোর-কিশোরী, গর্ভবতী ও দুগ্ধ মহিলারা পরিবার পরিকল্পনা সেবা নিতে ৬ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে নিয়মিত যাওয়া হয় না! ফলে শিশু জন্মের হার বেশি এবং নতুন প্রজন্মরাও বেড়ে উঠছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও পুষ্টিহীনতায়! এখানে আমরা বংশক্রমে আত্মীয়-স্বজনের মিলে ৮ পরিবারে বর্তমানে শিশু কিশোর-কিশোরী আছে প্রায় ২০ জন। এদের অনেকে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে! রাঙ্গাপানির পাড়া প্রধান দৈগ্য কার্বারী বলেন, এই বিলের দু’পাশে থাকা মানুষজন আদিকালের হলেও এখনো উন্নয়নে পিছিয়ে!

এলাকার প্রবীণ মুরব্বি মো. নুরুল ইসলাম বলেন, বাবা বর্ষাকালে আমরা অনেকটা ঘরবন্দী! ৩০০ ফিট চওড়া বিলে মাটি ভরাট রাস্তা থাকলেও মধ্যখানে ব্রিজ না হওয়ায় বাঁশের সাঁকোতে শুস্কমৌসুমে প্রায় ২০০ পরিবারের পারাপার!

সাবেক ইউপি সদস্য ও পল্লী চিকিৎসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমি সদস্য থাকাকালীন ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কর্মসূচির অর্থায়নে বিলের মধ্যখানে মাটি ভরাট করে রাস্তা বানিয়েছি। এখন ব্রিজের অভাবে মানুষজন বাঁশের সাঁকো বানিয়ে যাতায়াত করছে। কিন্তু বর্ষাকালে পূর্ব রাঙ্গাপানির মানুষজন ২ কিলোমিটার পথ ৪ কিলোমিটার ঘুরে হাট-বাজার, স্কুল ও কমিউনিটি ক্লিনিকে আসতে হয়!

তিনটহরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এমনিতেই রাঙ্গাপানি ৫নং ওয়ার্ড দুর্গম জনপদ। ইটের সলিং ও কাঁচা রাস্তা থাকলেও বিলটি বেশি প্রশস্থ হওয়ায় সংযোগ সড়কে কালর্ভাট নির্মাণে দুর্ভোগ লাগব হবে না। এখানে প্রয়োজন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় বা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়ন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন