বড় ধরণের ভাঙ্গন ঝুঁকিতে মাতামুহুরী নদীর কইন্যারকুম
অরক্ষিত থাকায় বড় ধরণের ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে উপকূলের বেড়িবাঁধ। শঙ্কায় দিন কাটছে উপকূলের লক্ষ জনগোষ্ঠী। কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর ভেওলা মানিকচর (বিএমচর) ও কোনাখালী ইউনিয়নের সীমানা পয়েন্ট কইন্যারকুমের নদী শাসন ও আগামী বর্ষার পূর্বেই টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মিত না হলে ভয়াবহ ভাঙ্গনের মুখে পড়তে হবে। ফলে নদীর এ ভাঙ্গন নিয়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় ৭ ইউনিয়নের জনসাধারণ।
মাতামুহুরী নদীর এ ভাঙ্গন নিয়ে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলমসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক দপ্তরে স্থানীয় লিখিত আবেদনও করেছেন। ইতিপূর্বে কক্সবাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ২শ মিটার ভাঙ্গন প্রতিরোধে বেশ কয়েকবার বস্তা ডাম্পিং কাজ বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও পাওবো’র পরিদর্শকের যোগসাজসে ডাম্পিং এলাকার জিইও ব্যাগ চুরি এবং প্রয়োজনীয় মাটি ভরাট না করে কম ব্যাগ ডাম্পিং করায় ঝুঁকিপুর্ণ এই এলাকাটি আরও আতঙ্কের জন্ম দিচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে টেকসই বেড়িবাঁধ না হলে ফের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জলোচ্ছ্বাস হলে উপকূলের দুই লক্ষাধিক মানুষ জানমাল নিয়ে দুর্ভোগে পড়বেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীর বিএমচর-কোনাখালী সীমানায় প্রতিবছর বর্ষায় কইন্যার কুমে বন্যার পানির স্রোতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বন্যার পানি বিএমচর ও কোনাখালী সহ উপকূলীয় ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ে ব্যাপক ঘর-বাড়ি এবং আবাদী-ফসলী জমি নিমজ্জিত হয়ে যায়। বন্যা কবলিত এলাকার ব্যাপক ক্ষতি বিবেচনায় এনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বেড়ীবাধ পুনঃসংস্কার, নির্মাণ ও ব্লক বসানোর পরিকল্পনা করেন। তারই প্রেক্ষিতে বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ হাজার বালির জিইও ব্যাগ ডাম্পিং করার অনুমোদন দেন সরকার। যথা নিয়মে অজ্ঞাতনামা ঠিকাদার দিয়ে কাজ সমাপ্তও করেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে ভাঙ্গন এলাকায় বেড়ীবাঁধে মাটি ভরাট করে টেকসই করা হয়নি। যেখানে বেড়ীবাঁধ ১২ ফুট থাকার কথা সেখানে আছে মাত্র ৩ ফুট বা তারও কম। ডাম্পিং এ যে ব্যাগ ব্যবহার হয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে কাজের পরেও বেড়ীবাঁধ নিয়ে শঙ্কা কাটেনি সুবিধাভোগী এলাকাবাসীর।
এ ব্যাপারে ঝুঁকি এলাকায় বসবাসকারী মাস্টার মোহাম্মদ হোছাইন, আবু ইউসুফ, নুরুল হোছাইন, প্যানেল চেয়ারম্যান জিয়াদুল ইসলাম সেলিম মেম্বারসহ বেশ কয়েকজন জানান, টেকসই বেড়ীবাঁধের জন্য মাটির কাজ করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে। বেড়ীবাঁধের চুড়া নুন্যতম ১২ ফুট করা না হলে বানের পানির তোড়ে ফের ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁরা বেড়ীবাঁধকে ঝুঁকিমুক্ত করতে মাটি ভরাট করার আবেদন জানান। এ ব্যাপারে তারা স্থানীয়, জনপ্রতিনিধি, চকরিয়া-পেকুয়ার সাংসদ জাফর আলম বিএ (অনার্স) এমএ সহ পানি উন্নয়ন বোড়র হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর কন্যারকুম এলাকাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপুর্ণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে ভাঙ্গন এলাকায় জিইও ব্যাগের ডাম্পিং শেষ করা হয়েছে। ডাম্পিং এ অনিয়মের প্রশ্নে তিনি কোন ত্রুটি হয় নাই বলে দাবি করেন। তিনি আরও জানান, সরকারের কাছে আরও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দে মাটির কাজসহ ব্লক বসিয়ে টেকসই করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। বাকীটা বরাদ্দের উপর নির্ভর করছে।