‘ভাত দিন, না হয় কক্সবাজার পর্যটন কেন্দ্র খুলে দিন’

fec-image

শর্ত দিয়ে হলেও কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হোটেলসমূহ খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে পর্যটনখাত সম্পৃক্ত প্রায় ১৫টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

রবিবার (২০ জুন) দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের জীবন জীবিকা ও আর্থিক দৈন্যতার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী, পর্যটনমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন । তাদের দাবি ‘ভাত দিন, না হয় কক্সবাজার পর্যটনকেন্দ্র খুলে দিন।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার- টুয়াক এর উপদেষ্টা জাপা নেতা মফিজুর রহমান মুফিজ বলেন, গত ১ এপ্রিল থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও হোটেল মোটেল জোন বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে এ শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের জীবন জীবিকা বন্ধ। পর্যটন কেন্দ্রীক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্দিন যাচ্ছে। ট্যুর অপারেটরস, প্রফেশনাল সাংস্কৃতিক কর্মী, কলাকুশলী, বীচ বাইক, কিটকট ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র হকার ঝিনুক ব্যবসায়ী, ভাড়ায় চালিত ফ্ল্যাট ভাড়াটিয়া, ট্যুরিস্ট জীপের মালিক চালক-শ্রমিক, বার্মিজ দোকানদার, ট্যুরিস্ট গাইড, ঘোড়ার মালিক, শুঁকটির দোকানদারসহ পর্যটনখাতে জড়িত সকলেই কষ্টে দিনযাপন করছে। তাদের কান্নার শেষ নেই। মানবিক বিবেচনায় হলেও এই খাততে উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত।

মুফিজের প্রশ্ন, ঢাকা শহরে হোটেল, রেস্তুরাঁ, বার, বিনোদনকেন্দ্র খোলা থাকলে কক্সবাজার পর্যটনকেন্দ্র কেন বন্ধ থাকবে? আমাদের কি দোষ? তিনি বলেন, ঢাকায় ১ কোটি মানুষের মাঝে করোনা ছড়ানোর ভয় নাই, বাইর থেকে লোক আসলে কক্সবাজারে করোনা ছড়ানোর কথা হাস্যকর ও অবাস্তব।

আমরা আশা করতে পারি, সরকার সবকিছু যেমন সীমিত আকারে খুলে দিয়েছে ঠিক তেমনি কক্সবাজারের পর্যটনখাত খুলে দিবে। আমাদের জীবন গতি সচল ও স্বাভাবিক করবে। মানুষকে উপোষ রেখে নয়, জীবিকা নিশ্চিত করেই লকডাউন

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাইজ অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ কলিম বলেছেন, সরকারী প্রজ্ঞাপনে হোটেল মোটেল জোন খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও জেলা প্রশাসন তা আটকে রেখেছে। কেন এমন করেছে? বোধগম্য নয়। আমাদের ভাতের নিশ্চয়তা দিন। আমরা মানসিকভাবে বেশ কষ্টে আছি ।

তিনি বলেন, আর কতদিন উপোষ থাকব? আমরা ধারদেনা ও ঋণে জর্জরিত। হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মকর্মচারীর পরিবারে দুর্ভিক্ষ আসন্ন। অনেকের চোখের জল দেখে সইতে পারছি না। শিল্প কারখানা, গণপরিবহনসহ সব চললে শুধু পর্যটন খাত কেন বন্ধ রাখবেন? এটি কি বিমাতাসুলভ আচরণ নয়? স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে কিভাবে পর্যটনকেন্দ্র উন্মুক্ত করা যায় ভেবে দেখুন। আমাদের ভাতের নিশ্চয়তা দিয়েই প্রয়োজনে পর্যটনখাত বন্ধ রাখুন। তাতে আপত্তি খাকবে না।

কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে সবচেযে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে অন্যতম পর্যটন খাত। করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর দেশের পর্যটন শিল্প অভ্যন্তরীণ পর্যটনের মাধ্যমে কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টায় ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে পর্যটন আবার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এাভাবে আর কত পারা যায়? আমাদের জীবন বাঁচিয়ে রাখার সুযোগ দিন।

তিনি বলেন, গত বছর করোনার কারণে পর্যটনের সঙ্গে জড়িতদের সবার ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর চলতি বছরের এপ্রিল থেকে সবকিছু স্থবির হওয়ায় পর্যটন খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। চলমান পরিস্থিতি আগামী ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত বর্ধিত হলে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় আরও কয়েকগুন বেশি হতে পারে।

কক্সবাজারের অধিকাংশ মানুষ পর্যটন নির্ভর। হোটেল মোটেল জোনে হাজার হাজার কোটি টাকা ইনভেষ্ট করা হয়েছে। আর সরকার এখান থেকে কোটি টাকা রাজস্ব নিচ্ছে । এই সময় হোটেল মোটেল বন্ধ থাকায় যারা অভিজ্ঞ কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছে তারা পেশা বদলাচ্ছে। ফলে পর্যটন খাতে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। তাই আমি সরকারের কাছে অনুরোধ সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল মোটেল জোন খুলে দেওয়া হউক।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাইজ অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি সুবীর চেীধুরী বাদল, কক্সবাজার সাউন্ড এন্ড লাইটিং সিস্টেম এনার্স এসোসিয়েশন এর সভাপতি সাহেদ হোসেন, টুয়াকের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আজম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তোহা, টুরিস্ট জিপ মালিক সমিতির সভাপতি জামাল উদ্দিন, ভাড়ায় চালিত ফ্লাট মালিক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম, আবাসিক হোটেল কর্মচারী ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন, কমবার যুগ্ম আহ্বায়ক আপন চন্দ্র দে, ঝিনুক ব্যবসায়ী মালিক সমিতির উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, পর্যটন কেন্দ্র
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন