হ্যান্ডবল টুর্নামেন্টের অনূর্ধ্ব-১৭

ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

fec-image

বঙ্গবন্ধু আইএইচএফ চ্যালেঞ্জ ট্রফি নারী (ইয়ুথ ও জুনিয়র) হ্যান্ডবল টুর্নামেন্টের অনূর্ধ্ব-১৭ বিভাগে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। তবে আসরের অনূর্ধ্ব-১৯ বিভাগের ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ ট্রফি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে লাল-সবুজদের।

গতকাল বুধবার (১৭ মে) দুপুরে শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী জাতীয় হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে অনূর্ধ্ব-১৭ বিভাগের ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ৪৬-৪৩ গোলে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় বাংলাদেশ। প্রথমার্ধের খেলা ২০-২০ গোলে অমিমাংসিত ছিল।

এর আগে হ্যান্ডবলে জাতীয় ও বয়সভিত্তিক কোনো পর্যায়েই ভারতকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। এই জয়ে সাউথ-সেন্ট্রাল এশিয়া জোন-২ এ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ (ইয়ুথ) দল খেলবে এই টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় রাউন্ডে।

ফাইনাল জিতে উদযাপনের সব রকমের প্রস্তুতি যেন নিয়েই রেখেছিল বাংলাদেশ ইয়ুথ দল। ম্যাচ শেষে যার প্রমাণ পাওয়া গেছে কাল। খেলা চলকালে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ছিল দর্শকদের উন্মাদনা। এই উন্মাদনা চোখে পড়েছে বাংলাদেশ দল জেতার পরও। ভারতকে হারানোর পর মোসাম্মৎ মারফি, রুনা লায়লাদের গলায় যখন ঝুলেছে সোনালি পদক, হাতে শোভা পেয়েছে চ্যাম্পিয়নের চকচকে সোনালী ট্রফি তখন কনফেত্তির রঙিন কাগজের বৃষ্টিতে ভিজেছে লাল-সবুজের মেয়েরা।

এ সময় পাশ থেকে ভেসে আসছিল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ধ্বনি।

বাংলাদেশ-ভারত অনূর্ধ্ব-১৭ বিভাগের ফাইনালটা হয়েছে ঠিক ফাইনালে মতোই। খেলা চলাকালে বেশিরভাগ সময়ই পেন্ডুলামের মতো দুলেছে ম্যাচের ভাগ্য। দু’দলের শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে একবার ভারত এগিয়ে যায় তো, গোল করে ফের সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। এক ঘণ্টার ম্যাচে প্রথমার্ধে ২০ মিনিটের সময় ১৬-১০ গোলে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন অধিনায়ক মারফি, রুনা লায়লারা। ম্যাচের ৪৪ মিনিটে লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়েন ভারতের প্রতিভাবান খেলোয়াড় প্রাধান্য বালাসো মানে। ওই সময় ৬ জনের দলে পরিণত হয় ভারত। বাংলাদেশের খেলোয়াড় ছিল ৭ জন। ওই সময়ও ভারত ৩৩-২৮ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। এ অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা।

ধারাবাহিক আক্রমণে ৫০ মিনিটে ভারতকে একেবারে চেপে ধরে বাংলাদেশের মেয়েরা। এরপরই গোলের পর গোল করে ব্যবধান কমিয়ে আনে তারা। টানা তিন হলুদ কার্ড দেখার কারণে ম্যাচের ৫৫ মিনিটে লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মারফি। যিনি ম্যাচে সর্বোচ্চ ১৫টি গোল করেন। তখনো পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পাঁচ মিনিটে টানা গোল করে এগিয়ে যায় তারা। শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর বেশেই মাঠ ছাড়ে লাল-সবুজের মেয়েরা।

চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলের কোচ ডালিয়া আক্তার দারুণ খুশি। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বলেছিলাম চমক দেখাবে আমার দল। শেষ পর্যন্ত সেটাই করে দেখিয়েছে মেয়েরা। তাদের এমন পারফরম্যান্সে আমি অনেক খুশি। আমার খেলোয়াড়ী জীবনে কখনো ভারতকে হারাতে পারিনি। কিন্তু প্রথমবার কোচের দায়িত্ব পেয়ে সেই কাজটি করতে পেরেছি। আমরা সবাই জানি ভারতকে যেকোনো খেলায় হারানো কঠিন। হ্যান্ডবলে তো আরও বেশি কঠিন। সেই কঠিন কাজটিই আমার মেয়েরা করে দেখিয়েছে।’

পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলের অধিনায়ক মারফি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি টুর্নামেন্টসেরা হয়ে তার যেন উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘আমি অনেক অনেক খুশি দেশকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি এনে দিয়েছি বলে। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়ে রীতিমতো বাকরুদ্ধ। দুটো সাফল্য একসঙ্গে পেয়ে এখন দেশের সবচেয়ে সুখি মানুষ আমি।’ তিনি যোগ করেন,‘ভালো ফলাফল করতে আমাদের সহযোগিতা করার জন্য কোচ, খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও দর্শকদের জানাই ধন্যবাদ। আজ (গতকাল) অনেক দর্শক স্টেডিয়ামে এসে আমাদের সমর্থন দিয়ে উৎসাহ যুগিয়েছেন।’

একই মাঠে বিকালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিভাগের ফাইনালে ভারত ৪৮-১৭ গোলে বাংলাদেশকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। ফাইনাল শেষে বিজয়ী ও বিজিতদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সভাপতি একেএম নুরুল ফজল বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনুর ও টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: চ্যাম্পিয়ন, বাংলাদেশ, ভারত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন