ভারতে ধর্ষণ নিয়ে তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়াস ডটার’ প্রচারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা

c8cdac416814719e68a869d33d56ec48_XLআন্তর্জাতিক ডেস্ক:
নয়াদিল্লিতে চলন্ত বাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বাসচালক মুকেশ সিংয়ের সাক্ষাৎকারসহ ‘ইন্ডিয়াস ডটার’ (ভারতীয় কন্যা) নামের তথ্যচিত্রের সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে ভারতের একটি আদালত।

ভারতের দিল্লিতে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে চলন্ত গাড়িতে এক প্যারামেডিকেল ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও নির্মমভাবে পেটানোর ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন নির্যাতিতা ‘নির্ভয়া’ (ছদ্মনাম)। এ ঘটনায় পুরো ভারতজুড়ে বিক্ষোভ হয়। তীব্র প্রতিবাদের কারণে দেশটিতে ধর্ষণকারীদের মৃত্যুদণ্ডের আইন প্রণয়ন করা হয়। এ আইনে ওই গণধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দিয়েছে আদালত।

বহুল আলোচিত এই ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন ব্রিটিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা লিসলে উডউইন। আগামী ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে বিবিসি ও ভারতীয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভিতে তা প্রচারের কথা ছিল।

তথ্যচিত্রটির বিষয়বস্তু নিয়ে সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ হলে তা ব্যাপক সমালোচিত হয়। মূলত ধর্ষক মুকেশ সিংয়ের সাক্ষাৎকার নিয়ে এ সমালোচনার সূত্রপাত।

সাক্ষাৎকারে মুকেশ সিং বলেছিলেন, ধর্ষণের ক্ষেত্রে শুধু পুরুষ নয়, নারীরাও দায়ী। বেশিরভাগ নারীই পোশাকের ক্ষেত্রে শালীনতা বজায় না রাখায় তা পুরুষকে উত্তেজিত করে। মাত্র ২০ শতাংশ নারী শালীনতা বজায় রেখে চলাফেরা করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

রাতে নারীদের একা চলাফেরা, বিশেষত সিনেমাহল থেকে ফেরা বা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে চলাফেরাকেও দুষেন ওই ধর্ষক। এ ধরনের মেয়েকে খারাপ বলেও আখ্যা দেন তিনি। এ ধরনের আচরণ ধর্ষণের ঘটনাকে ত্বরান্বিত করে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, শাস্তি দিয়ে ধর্ষণ কমানো যাবে না। এ ক্ষেত্রে শাস্তি এড়াতে নারীদের ধর্ষণের পর হত্যা করা হবে। আগে ধর্ষণের পর ‘কাউকে জানাবি না’ বলে ছেড়ে দেওয়া হতো, কিন্তু শাস্তির কারণে এখন তা করা হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেন তিনি।

এ ছাড়া নারীদের গৃহস্থালীর কাজ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন মুকেশ সিং নামের ওই ধর্ষক।

তিনি বলেন, ওই দিন মেয়েটি (নির্ভয়া) যদি লড়াই না করত তাহলে তাকে ধর্ষণ করে ছেড়ে দেয়া হতো। এভাবে পেটানো ও ছুঁড়ে ফেলা হতো না।

এ সাক্ষাৎকারের পরিপ্রেক্ষিতে তা দেশজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি করে। এরপরই আদালতের পক্ষ থেকে গত মঙ্গলবার ওই আদেশ দেয়া হয়।

তথ্যচিত্র নির্মাতা লেসলি উডউইন বলেন, ‘তথচিত্রে সমাজে বিদ্যমান অসুখটা দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, ধর্ষককে নয়।’

২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ২৩ বছর বয়সী তরুণীটি বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখে বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় বাসে থাকা চালকসহ ছয় যাত্রী বন্ধুটিকে মারধর করে বাস থেকে ফেলে দেয় এবং ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে। এরপর ওই ছাত্রীকে নয়াদিল্লির সফদরজং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালে ১০ দিন চিকিৎসার পর ২৭ ডিসেম্বর তাঁকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান ওই তরুণী।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রত্যেককেই পরে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৩ সালের ১১ মার্চ অন্যতম অভিযুক্ত তিহার জেলে পুলিসি হেফাজতেই আত্মহত্যা করে। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন ঘটনার সময় নাবালক হওয়ায় তার ৩ বছরের জেল হয়।

১০ সেপ্টেম্বর বাকি ৪ অভিযুক্ত অপরাধী সব্যস্ত হয়। নিম্ন আদালত তাদের ফাঁসির আদেশ দিলেও দিল্লি হাইকোর্টে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দোষীরা। এখনও পর্যন্ত এই চারজনের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রয়েছে।-আইআরআইবি

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন