ভারত-পাকিস্তান বধ মিশনে বাংলাদেশ

fec-image

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বড় রকমের জয়ের পর এখন মিশন ভারত ও পাকিস্তান বধ। পাঁচদিনের একটি রিলাক্স সেশন পেয়ে নিজেদের প্রস্তুত করে নিচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে উইকেটের মূল্যায়ন ঠিকঠাক হয়নি বলেই হেরেছিল। ওই ম্যাচের অভিজ্ঞতা আজ (সোমবার) দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাটিংয়ের প্রয়োজন ছিল। সেই কাজটা ঠিকমতোই করতে পেরেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

স্কোরবোর্ডে ২৬২ রান তুলতে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে মুশফিকের দায়িত্বশীল ব্যাটিং। টেকনিকের দিক থেকে দলের সবচেয়ে সেরা ব্যাটসম্যান আফগান বোলারদের কোনও সুযোগই দেননি। তার আগে লিটনকে হারিয়ে সাকিব ও তামিম মিলে সাবধানী শুরু করেন। তাদের ওই শুরুতেই মূলত প্রত্যাশিত রান স্কোরবোর্ডে জমা হতে পারে। তামিম ও সাকিবের ফিরে যাওয়ার পর বাকি কাজ করেছে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ জুটি। পায়ের ক্র্যাম্প নিয়ে ২৭ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। মুশফিক তখনও ক্রিজে, আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অপরাজিত ১০২ রানের ইনিংস খেলার পর এই ম্যাচেও খেলেছেন ৮৩ রানের ইনিংস। আর তাতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১১ হাজার রান স্পর্শ করেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। শেষ দিকে মোসাদ্দেকের ২৪ বলে ঝড়ো ৩৫ রানে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে প্রত্যাশামতো রান ওঠে।

রোজ বোল প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের দলগুলোকে আতিথেয়তা দিয়েছে। ৫ ম্যাচে আজই সবচেয়ে বেশি রান উঠেছে এখানকার উইকেটে। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ২২৭ রানের জবাবে ২৩০ রান করে জিতেছিল ভারত। ওটাই ছিল বিশ্বকাপে এখনকার সর্বোচ্চ স্কোর। সোমবার রোজ বোলের ২২ গজে সেটিকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ ২৬২ রান করে কঠিন করে তোলে আফগানদের কাজ।

ম্যাচ বিরতির সময়ই প্রবাসী বাংলাদেশি সমর্থকদের অনেক জয় উদযাপনের মতো আনন্দে মাতে! স্থানীয় ব্লগার কাজী ইমাদ হাসান যেমন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, ‘যা রান হয়েছে, তাতে আমরা অন্তত ৩০ রানে জিতব।’ প্রবাসী এই বাংলাদেশি নিয়মিত খোঁজ রাখেন দেশের ক্রিকেটের, তাই কণ্ঠে ছিল আত্মবিশ্বাস।

বাংলাদেশ জিতেছেও বড় ব্যবধানে। সাকিবের ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে পড়ে আফগান টপ অর্ডার। চলতি বিশ্বকাপে সাকিব নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন প্রতিটি ম্যাচেই। ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ৫১ রান করার পর মিতব্যয়ী বোলিংয়ে তুলে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ৫ উইকেট। ১০ ওভারে ২৯ রান খরচ করে সাকিব পান ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ৫ উইকেটের দেখা। বিশ্বকাপে সাকিবের আগের সেরা বোলিং ফিগার ছিল নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিল্টনে, ৫৫ রানে ৪ উইকেট।

মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে মুজিব উর রহমানের উইকেট ভাঙতেই উল্লাসে মেতে ওঠে গোটা গ্যালারি। আফগানদের বিপক্ষে এই আনন্দ শুধু ম্যাচ জয়ের নয়, সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখারও। ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ দুটি ম্যাচ জিতলে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন পূরণ হবে। সেই স্বপ্নের দেখা পেতে বাংলাদেশের পরবর্তী গন্তব্য বার্মিংহাম। আগামী ২ জুলাই ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ তাদের অষ্টম ম্যাচে মাঠে নামবে। এখন অবশ্য সাউদাম্পটনের এই জয়ের আনন্দ নিয়েই পড়ে থাকতে চান প্রবাসী ক্রিকেট ভক্তরা।

হ্যাম্পশায়ার কাউন্টি দলে টানা কয়েক বছর খেলা শেন ওয়ার্নকে সম্মান জানিয়ে ড্রেসিংরুমের বাঁ পাশের স্ট্যান্ডটিকে ‘শেন ওয়ার্ন স্ট্যান্ড’ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। এই স্ট্যান্ডে খেলা দেখা বেশিরভাগ দর্শকই ছিলেন বাংলাদেশি। মাঠের এক পাশ থেকে লাল-সবুজ রংটাই কেবল চোখে পড়লো। সেখানে বসে খেলা দেখেছেন এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সাবেক প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশরাফুল হক। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে দারুণ উচ্ছ্বসিত এই সংগঠক, ‘বাংলাদেশ তো অনেক আগেই উন্নতি করেছে। এই বিশ্বকাপে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। কয়েকটি ম্যাচে আমাদের দুর্ভাগ্য ছিল, নয়তো পয়েন্ট টেবিলে আরও ভালো অবস্থানে থাকতাম। এই মুহূর্তে আমাদের বাকি ম্যাচগুলো নিয়েই চিন্তা করা উচিত। সেমিফাইনাল খেলব কী, খেলব না, সেটা পরের ব্যাপার।’

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বকাপ, সাউদাম্পটন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন