পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন সংশোধনীকে বৈষম্যমূলক বললেন খাগড়াছড়ির শীর্ষ বাঙালী রাজনীতিবিদ ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ

ভূমি কমিশন

মো. শাহজাহান, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি॥

গত ১ আগস্ট সংশোধন করা হয় ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের ১৪টি ধারা। তবে এ সংশোধনীকে পাহাড়ি সংগঠনগুলো স্বাগত জানালেও বাঙালিভিত্তিক সংগঠন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যবসায়ী সংগঠনের বাঙালি নেতারা মনে করছেন এর ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। তাঁদের অভিযোগ, ভূমি কমিশন আইনটি বৈষম্যমূলক। একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব বাদ দিয়ে শুধুমাত্র পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে কমিশনের বিচার কাজ কখনোই এ সংকটের সমাধান দিতে পারবে না। আর এই কারণেই ভূমি কমিশনের কার্যক্রম বিতর্কিত এবং অগ্রহণযোগ্য।

খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি’র সভাপতি, সাবেক সাংসদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াদুদ ভূইয়া বলেন, ‘এই সংশোধনী অসাংবিধানিক। কথিত প্রথাগত ভূমি অধিকারের ধারণাটি অস্পষ্ট, অনির্দিষ্ট এবং আইনগত ও সাংবিধানিকভাবে ভিত্তিহীন। তাই এ অধিকার কীভাবে পাহাড়ি সদস্যরা বাস্তবায়ন করবেন তা পরিষ্কার নয়। শঙ্কা আছে যে, এর ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বাঙালিদের ভূমি কেড়ে নেয়া হতে পারে। এমনকি, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার জন্য বন্দোবস্তীকৃত ভূমি বাতিলের ক্ষমতাও এই কমিশনকে দেয়া হয়েছে।’

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলম বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে যেহেতু পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে মতপার্থক্য বিরাজমান, সেহেতু বিতর্ক এড়াতে ভূমি কমিশনের প্যানেলে উভয় সম্প্রদায়ের সমান সংখ্যক প্রতিনিধিত্ব থাকা জরুরী।’

খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম বলেন, ‘এই সংশোধনী নিয়ে আমিও শংকিত। আমাদের অবস্থান শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো। আর সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে একটি টিমও গঠন করেছি। রাষ্ট্রের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করবো।’

খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্স’র পরিচালক সুদর্শন দত্ত বলেন, ‘এই সংশোধনী বাস্তবায়ন হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদের অস্তিত্ব বিলীন হবে। তাই অধ্যাদেশটি পুনরায় বিবেচনা করা উচিত।’

জামায়াতের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আমির আবদুল মোমিন বলেন, ‘সংশোধিত ভূমি কমিশন আইন বৈষম্যমূলক। এতে করে বাঙালিরা তাদের অধিকার হারাবে।’

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠনের শুরু থেকেই শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরকারী সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) আইনটি চুক্তির সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ আখ্যায়িত করে ২৯টি সংশোধনী দাবি করে আসছিলো। এ নিয়ে একাধিক সরকারের মেয়াদে দীর্ঘ আলোচনাও হয়েছে জনসংহতি সমিতির সঙ্গে। জনসংহতি সমিতির দাবীর প্রেক্ষিতে গত ১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের ১৪টি সংশোধনী ভেটিং সাপেক্ষে চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। যা ৯ আগস্ট অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে পাশ করা হয়েছে।

মন্ত্রীসভার বৈঠক শেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং এমপি সাংবাদিকদের বলেন, এ সংশোধনীর ফলে পার্বত্য এলাকায় ভূমি বিরোধ নিয়ে যে অচল অবস্থা ছিল, তা নিরসন হবে। তবে বাঙালি নেতাদের বক্তব্য ভিন্ন। তারা এই সংশোধনীর প্রতিবাদের তিন পার্বত্য জেলায় হরতাল পালন করেছে এবং আরো বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন