ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংস্কারের প্রতিবাদে কর্মসূচী ঘোষণায় এক হতে পারেনি বাঙালী সংগঠনগুলো
♦৩০ মে হরতাল, অবরোধ ♦ ২ মে হরতাল ♦৭ মে হরতাল
পার্বত্য নিউজ রিপোর্ট:
পার্বত্য চট্টগ্রামে দেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় সরকারের কর্তৃত্ব ও বাঙালীদের অস্তিত্ব বিরোধী ও মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত বির্তকিত ভূমি কমিশন আইন সংশোধনী প্রস্তাব শীঘ্রই বাতিলের দাবিতে কর্মসূচী ঘোষণায় এক হতে পারে নি বাঙালদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলো। ফলে সাধারণ বাঙালীদের মধ্যে তৈরী হয়েছে বিভ্রান্তি। পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইসমাইল নবী সাওন ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাস আল মামুন ভূইয়া, সদস্য সচিব এডভোকেট এয়াকুব আলী চৌধুরী ও পার্বত্য যুব ফ্রন্ট আগামী বৃহস্পতিবার তিন পার্বত্য জেলায় সড়ক ও নৌ পথ অবরোধের ডাক দিয়েছে। অন্যদিকে সমঅধিকার আন্দোলন একাংশের সভাপতি পেয়ার আহমেদ পৃথক পৃথক এক সাংবাদিক সম্মেলনে ৩০ মে অবরোধ, হরতাল এবং আগামী ২ জুন রবিবার রাঙামাটি জেলায় সকাল- সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচী ঘোষণা করেন। পাশাপাশি বিতর্কিত ভূমি কমিশন আইন পাশ করা থেকে বিরত না থাকলে লাগাতার কর্মসূচির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অচল করে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছে এই সমমনা ৬টি স্থানীয় সংগঠন।
সমঅধিকার আন্দোলন অপর অংশের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির এক বিবৃতিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে এই অবরোধ ডাকার বিরোধিতা করে তাদের দাবী মানার জন্য আগামী ৬ জুন পর্যন্ত সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছে। অন্যথায় ৭ জুন তিন পার্বত্য জেলায় হরতালের কর্মসূচী দেয়া হবে বলে ঘোষণা করেছেন।
তিন পার্বত্য জেলা থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠনো খবরে এ কথা জানা গেছে।
মঙ্গলবার আলাদা আলাদা সংবাদ সম্মেলনে বাঙালী নেতারা অভিযোগ করে বলেন, এ সংশোধনী আইন দেশের সার্বভৌমত্ব কর্তৃত্ব ও সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এবং পার্বত্য এলাকায় বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীর অবস্থান ও সরকারের কর্তৃত্বকে দূর্বল করে দেবে। উপজাতীয় নেতাদের দৌরাত্ম্যে ভূমিহীন হয়ে পড়বে বাঙ্গালীরা। এই পর্যায়ে বাঙ্গালী জনগণ জীবন নিয়ে পালাতে বাধ্য হবে। আর তখন সন্তু লারমার স্বাধীন জুম্ম ল্যান্ড রাষ্ট্র গঠন করতে সহজ হবে।
আমাদের রাঙামাটি প্রতিনিধি আলমগীর মানিক জানান, রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় ভূমি কমিশন আইন বাস্তবায়নে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাঙামাটি শহরে সাংবাদিক সম্মেলন করে আগামী ৩০মে বৃহস্পতিবার তিন পাবর্ত্য জেলায় ও আগামী ২রা জুন রাঙামাটি জেলায় হরতালের ঘোষণা দিয়েছে পার্বত্য সমঅধিকার আন্দোলন, পাবর্ত্য নাগরিক পরিষদ ও পার্বত্য সম অধিকার ছাত্র আন্দোলন নামে তিনটি সংগঠন।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার তিন পার্বত্য জেলায় হরতালের ঘোষণা দিয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে পার্বত্য যুব ফ্রন্ট, পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র ঐক্য পরিষদ ও পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ নামে অপর তিনটি সংগঠন।
সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রায় অভিন্ন সুরে দাবি করা হয় যে, যেভাবে সংশোধনী আনা হচ্ছে তাতে করে দায়রা কার্যপরিধি খর্ব করা হয়েছে। এছাড়া কোন বিষয়ে ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান আপত্তি দিলেও তা কোন কাজে আসবে না। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তিন জন উপজাতীয় সদস্য যে মত দিবেন তাই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে গৃহিত হবে। এ ধরণের আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশর একদশমাংশ ভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম যে সরকারের কর্তৃত্ব হারাচ্ছে তা স্পষ্ট প্রতিয়মান। যে সমস্ত সংশোধন প্রস্তাব আনা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে বলা আছে ভূমি কমিশনের ৫ সদস্যের মধ্যে ৩জনই উপজাতীয় সদস্য। বাকী ২জনের মধ্যে চেয়ারম্যান, সুপ্রীম কোর্টের সাবেক বিচারপতি ও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন চট্টগাম বিভাগীয় কমিশনার বা তার পাঠানো প্রতিনিধি। ফলে বৈঠকে উত্থাপিত কোন প্রস্তাব চেয়ারম্যান ও সরকারের প্রতিনিধি একযোগে নাকচ করলেও তা কোনো কাজে আসবে না বরং সংখ্যাগরিষ্টতার জোরে উপজাতীয়রা যা বলবেন তাই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে।
এভাবে আইন সংশোধনের ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে এবং চেয়ারম্যান ও সরকারের প্রতিনিধি শুধু অলংকারে পরিণত হবেন। এতে করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে তাই সরকারের এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য এলাকার সাধারন জনগণ ক্ষব্ধ।
‘আমরা সরকারের এহেন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি আরো বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহবান করছি। অন্যথায় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং পার্বত্য অঞ্চলের অধিকার হারা নিরীহ বাঙালিদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে পার্বত্য এলাকার সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে।’
আমাদের খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা আবদুল হালিম জানান, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে বসবাসরত সম-অধিকারের দাবীতে বাঙ্গালীদের বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন সংগ্রাম করে আসলেও সরকার শুধু উপজাতীয়দের এক পক্ষীয় স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে নতুন করে ভূমি কমিশন আইন সংশোধনী করার মাধ্যমে পাহাড়ের বসবাসরত বাঙ্গালীদের বিতারিত করার ষড়যন্ত্র“র অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেছে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র-পরিষদ। সংবাদ সম্মেলনে আগামীকাল বৃহস্পতিবার তিন পার্বত্য জেলায় সকাল-সন্ধা সড়ক ও নৌ-পথ অবরোধ, এবং শনিবার প্রত্যেক জেলা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষনা করেছে। যদি এর মধ্যে সরকার এ অনুমোদন বাতিল করে তবে আরো বৃহত্তর কর্মসুচি দেওয়ারও হুশিয়ারী দেন নেতারা।
পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মজিদ এর সভপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জেলা কমিটির সদস্য লোকমান হোসেন, মাছুম রানা, সাহাজুল ইসলাম সজল, ওমর ফারুক।
আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি জমির উদ্দীন জানান, মন্ত্রীসভায় গত সোমবার পার্বত্য ভূমি কমিশন সংশোধনী আইন পাস হওয়ায় বৃহস্পতিবার বান্দরবানে সড়ক ও নৌ-পথ অবরোধের ডাক দিয়েছে বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদ। অবরোধ সফল করতে সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদ।
পার্বত্য নাগরিক পরিষদ আহবায়ক আতিকুর রহমান জানান, ভুমি কমিশন গঠনে সরকার ১৩টি সংসোধনী আনার প্রতিবাদে এবং নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে সড়ক ও নৌ-পথ অবরোধের ডাক দিয়েছে।
বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের সভাপতি কামরান ফারুখ জানান, মন্ত্রী সভার বৈঠকে ভূমি কমিশন সংশোধনিতে বাঙ্গালীদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। ঐদিন বিএনপির প্রতিষ্টতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যু বার্ষিক হলেও নিজেদের অধিকার ও অস্তিত্ব বজায় রাখতে এ আন্দোলনের ডাক দিতে হয়েছে।
উল্লেখ্য, অবরোধ ও হরতাল নিয়ে সংগঠনগুলোর এই ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে তিন পার্বত্য জেলার বাঙালী ও সাধারণ জনগণ।
সমঅধিকারের একাংশের বিরোধিতা:
সম-অধিকার আন্দোলন একাংশের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক মরিরুজ্জামান জানান, বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদের ডাকা অবরোধে তাদের সমর্থন নাই। তারা বিতর্কিত পার্বত্য ভূমি কমিশন সংশোধনী সংশোধন করতে সরকারকে আগামী ৬ জুন পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যদি সরকার বিতর্কিত পার্বত্য ভূমি কমিশন সংশোধনী সংশোধন করতে ব্যার্থ হয় তাহলে ৭ জুন তিন পার্বত্য জেলায় হরতাল পালন করা হবে।
মনির বলেন, জিয়াউর রহমান দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসহায় বাঙালীদের তুলে এনে তিন পার্বত্য জেলায় পুনর্বাসন করেছিল। তার শাহাদাৎ বার্ষিকীতে হরতাল আহ্বান বাঙালীদের জন্য চরম অকৃতজ্ঞতার পরিচয় বহন করে। এটা এক দুইদিন আগে পরে দিলে এমন কোনো ক্ষতি হতো না।
তিনি বলেন, সরকারী ইন্ধনে একটি গোষ্ঠী বিএনপি’র মতো একটি বড় দলের সাথে পার্বত্য বাঙালীদের বিরোধ সৃষ্টি করতে এ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বলে আমরা মনে করি। বাঙালীদের আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল বিএনপির সাথে এই ভুল বোঝাবুঝি আমাদের দাবী আদায়ের পথকে দুর্গম করে তুলবে।
রানা প্লাজা ও মহাসেনের ঘটনায় ১৮ দলের হরতাল প্রত্যাহারের ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মনিরুজ্জামান অবিলম্বে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকীর দিনে হরতাল ও অবোরোধ প্রত্যাহার করে অন্য কোনো কর্মসূচী ঘোষণা করতে বাঙালী সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানান ।