মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে শান্তিচুক্তির ১৭তম বর্ষপূর্তি

শান্তিচুক্তি

ফাতেমা জান্নাত মুমু:

পার্বত্য চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় শান্তিচুক্তির ১৭তম বর্ষপূর্তি পালিত হবে মঙ্গলবার। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সুষ্ঠু, রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি।

প্রতিবছরের ন্যায় এবারো শান্তি চুক্তির ১৭তম বর্ষপূর্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)’র পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয় ব্যাপক কর্মসূচি। দিবসটি উপলক্ষে আজ রাজধানী ঢাকাসহ তিন পার্বত্য জেলায় ব্যাপক কর্মসূচি পালিত হবে এদিন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙামাটিতে বিশাল গণসমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করবে। সকাল ১০টায় শহরের রাজবাড়ি জিমনেসিয়াম চত্ত্বরে এ বিশাল গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশ শেষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হবে। এছাড়া তিন পার্বত্য জেলায় জেলা ও উপজেলা সদরে সমাবেশ ও র‌্যালি করবে জনসংহতি সমিতি। রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

অপরদিকে চুক্তিকে কালো চুক্তি আখ্যায়িত করে এর বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদসহ চুক্তিবিরোধী সংগঠনগুলো।

এদিকে, দীর্ঘ ১৭ বছরেও চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় সরকারের ওপর তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা স্থানীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমানে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত মৌলিক বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। সরকারের আলামত দেখে এটা স্পষ্ট বলা যায় যে, সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের আর কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে না। দেশ-বিদেশের জনমতকে বিভ্রান্ত করার জন্য বড়জোর বুলিতে চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাবে। আর চুক্তি বাস্তবায়নের নামে কোনো কিছু উদ্যোগ নিলেও তা চুক্তি বাস্তবায়নের দোহাই দিয়ে চুক্তি পরিপন্থী বা জুম্ম স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম হাতে নেবে। যার মূল লক্ষ্যই হলো আদিবাসী জুম্মদের জাতিগতভাবে নির্মূল করা। আর অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করা।

বিবৃতিতে সন্তু লারমা আরো বলের, আগামী ৩০ এপ্রিল ২০১৫-এর মধ্যে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সময়সূচিভিত্তিক কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করলে ১ মে ২০১৫ সাল থেকে- পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বা অশান্তিপূর্ণ উপায়ে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করা হবে। চুক্তি পরিপন্থী ও জুম্মস্বার্থ বিরোধী সকল কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ আন্দোলন জোরদার করা হবে।

অন্যদিকে, সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার সন্তু লারমার অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, গত ১৭ বছর ধরে আমরা শুনে আসছি সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন না করলে তারা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে। কিন্তু তারা আইন-শৃঙ্খলার অনেকটা বিপন্ন ঘটালেও তা করেনি। এখন অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এতে রামের সুমতি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জনসংহতি সমিতি দাবি করছে জুম্মরা উদ্বাস্তু। কিন্তু চুক্তিতে তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখেও কোথাও জুম্ম শব্দটি নেই। এজন্য বিষয়টি অমিমাংসিত। তাছাড়া পার্বত্য শান্তিচুক্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এর মধ্যে চুক্তির ৭২টির মধ্যে ৪৮টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে।

দীপংকর তালুকদার জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামে হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, গুম, অপহরণ চালাচ্ছে বলে দাবি করে বলেন, এসব বন্ধ করতে হবে। এজন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সব ধরনের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন