মনিটরিংয়ের অভাবে পার্বত্যাঞ্চলের এনজিওগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে

2011-08-26-17-01-36-086067600-untitled-7

পার্বত্য নিউজ রিপোর্ট:

পার্বত্য জেলার এনজিওগুলোর দুর্নীতির আখড়া। মানব সেবার আর্দশ নিয়ে গঠিত হলেও বাস্তবে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে এসব এনজিওগুলো। প্রতিবছর পার্বত্যাঞ্চলে দারিদ্র বিমোচনের নামে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। কিন্তু দারিদ্র বিমোচনের কোনো লক্ষণ এখানে দৃশ্যমান নয়। এ কারণে প্রশ্ন উঠেছে পার্বত্যাঞ্চলে এনজিওগুলোর কোটি কোটি টাকা যাচ্ছে কোথায় ? তবেএ অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠির ভাগ্য পরিবর্তন না হলেও এনজিও প্রতিষ্ঠাতাদের আর্থ-সামাজিক ও অবস্থানগত মর্যাদার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে।

পার্বত্য এলাকার এনজিওগুলো আর্ন্তজাতিক দাতাগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় একযুগ ধরে শত শত কোটি ডলার মানব সেবার নামে ব্যয় করেছে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। এসব বিষয় নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকাগুলো রহস্যজনক ভুমিকা পালন কওে থাকে। কারণ জাতীয় পত্রিকার অধিকাংশ প্রতিনিধি গভর্নিং বডির কর্মকর্তা ও সদস্য।
ফলে পার্বত্য এলাকার এনজিওগুলো দুর্নীতির আখড়া পরিণত হয়েছে। টাউট বাটপার ও দুর্নীতিবাজদের নিয়ে গভর্নিং বডি গঠন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, আর্থিক স্বচ্ছতা, মানব সম্পদ উন্নয়ন, তদারকি ও সেবাগ্রহীতাদের কাছে জবাবদিহিতাসহ নানা বিষয়ে অসংখ্যা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠির মানবিক দাবী পুরুনের ব্রত নিয়ে নামে এসবএনজিও গঠিত হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি। প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগে এবং জবাবদিহিতা না থাকায় সেবা প্রদানের নামে সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, এনজিওগুলোর গভনিং বর্ডির ভুমিকা অত্যন্ত রহস্যজনক ও ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। একক ব্যক্তি সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ, প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত দুর্নীতি, ভুয়া ভাউচার, কর্মকর্তাদের মোটা অংকের বেতনভাতা, বিলাসবহুল গাড়ীর অপব্যবহার ও জালানী খাতে ব্যয়বহুল অপচয়সহ সময় অসময়ে দাতা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করার নামে প্রচুর অর্থের অপব্যবহার করা হয়ে থাকে। এভাবে আন্তজার্তিক দাতাগোষ্ট্রীর আর্থিক সহাতায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের নামে কাজ শুরু করলেও নানা অনিয়ম দুর্নীতির কারণে উন্নয়নের সে স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়েছে।

আর এভাবেই আর্থ-সামাজিক ও দারিদ্র বিমোচনের নামে স্থানীয় কতিপয় স্বার্থান্বেষীমহল দীর্ঘদিন ধরে দেশীবিদেশী দাতাগোষ্ঠীর কোটি কোটি টাকা আত্বসাৎ করছে। এসব বিদেশী টাকা আত্বসাতের জন্য নিত্য নতুন নামে এনজিও গঠনের হিড়িক পড়েছে। ফলে নিয়ন্ত্রনহীণ হয়ে পড়েছে এসব এনজিও। দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে এনজিওগুলোর সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা না থাকায় কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়ে আসছে। এই সুযোগে বেশ কিছু এনজিও সংগঠন উন্নয়ন ও মানব সেবার নামে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। বেশকিছু এনজিও’র কার্যক্রমে জাতিগত বৈষম্যতা সৃষ্টি, সাম্প্রদায়িকার ইস্যু সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাড়পত্র ব্যতীত সঞ্চয় আমানত গ্রহণ করছে কেউ কেউ। কিন্তু বিষয়টি আইনগতভাবে বৈধ কিনা তা মনিটরিং ও তদারকির কাজে দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট বিভাগ সম্পূর্ণ নীরব। আর্ন্তজাতিক ৬টি জাতীয় ১৮টি ও স্থানীয় ৪৩টি এনজিও মানব সেবার নামে লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে। এসব ছাড়াও প্রায় দুইশতাধিক এনজিও রয়েছে যাদের কার্যক্রম কারো নজরে আসে না।  

২০১০-২০১১ সালে ৩০টি এনজিও একবছরে ৩৬ কোটি ৮৮ লক্ষ বরাদ্দ পায়। এসব এনজিও কাগজে কলমে উপকার ভোগী দেখিয়েছে ৭ লক্ষ ৬৬ হাজার ৮৬০ জন যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নাম সর্বস্ব। সরকারের পক্ষ থেকে এনজিওগুলোর কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকি ও সমন্নয় করার নির্দেশনা থাকলেও রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় এই কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তিন মাস পর পর এনজিওগুলোর কার্যক্রম সমন্নয়ের নামে জেলা পরিষদে সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় অধিকাংশ এনজিও অংশগ্রহণ করে না। অনুরূপভাবে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে এনজিও কার্যক্রম মনিটরিং সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদেও আয় ব্যয়ের হিসাব কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল কওে না। আন্তজার্তিক সাহায্যপুষ্ট ৫০টি অধিক এনজিও’র নিবন্ধন গতবছরের ৩ নভেম্বর বাতিল করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এনজিও বিষয়ক ব্যুরো ।

স্থানীয়ভাবে জেলার শিক্ষা, স্থাস্থ্য, সমাজউন্নয়ন ও পয়নিস্কাশন, প্রতিবন্ধিদের সহায়তা, জল বায়ু পরিবর্তন, বৃক্ষ রোপন, বনায়ণ, পরিবেশ ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষা ইত্যাদির কর্মসুচী দেখিয়ে নিত্য নতুন ও চমকপ্রদ নামে কিছু এনজিও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকে এনজিও’র বিধি বিধান না মেনে অবৈধভাবে প্রকাশ্যে ঋণ কার্যক্রম করে যাচ্ছেÑ যাতে সরকারীভাবে নিষেধ রয়েছে। অনেক এনজিও’র কার্যক্রম দুর্নীতির কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এদের বিরুদ্ধে সমাজসেবা বিভাগ ও জাতীয় এনজিও ব্যুরো আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে অবৈধভাবে তা চালিয়ে যাচ্ছে।
 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এনজিওগুলোর স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া কঠোর করা হয়নি। এসব এনজিও রেজিস্ট্রশন হয় দ্য সোসাইটিজ রেজিস্ট্রশন আক্ট, ১৯৮০ এর অধীনে। এ আইনে স্বচ্ছতা, জবাবদিতিা  নিশ্চিতকরণও দুর্নীতিরোধের কোন দিকনির্দেশনা নেই।
 
সুত্রে জানায়, আন্তজাতিক সাহায্যে পরিচালিত এনজিওগুলো দ্যা ফরেন ডোনেশনস রেগুলেশন রুলস-১৯৭৮ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ২০০১ সালের ২৯ মে জারিকৃত পরিপত্রের অনুয়ায়ী চলে আসছে। উক্ত আইনে নিবন্ধনের পর হতে পাচঁ বছর পর্যন্ত প্রত্যেক বেসরকারি এনজিও কে নিবন্ধন নবায়নের আবেদন করার বিধি রয়েছে এবং আবেদনের সঙ্গে এনজিওগুলোর পাঁচ বছরের কার্যক্রম, বার্ষিক প্রতিবেদন ও নিরিক্ষা প্রতিবেদন দাখিল করার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর পার্বত্য এলাকার এনজিওগুলোর সামগ্রিক কার্যক্রম মনিটরিং ও তদারকি হচ্ছে না। ফলে দুর্নীতি এখন বেপরোয়া।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “মনিটরিংয়ের অভাবে পার্বত্যাঞ্চলের এনজিওগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন