মন্ত্রিসভায় রদবদলের আভাস: কে হচ্ছেন পার্বত্যমন্ত্রী?

fec-image

নির্বাচনে জয়ীদের শুভেচ্ছা জানানোর রেশ কাটতে না কাটতেই এবার মন্ত্রিসভায় কে আসছেন আর বাদ পড়ছেন, এই আলোচনা জোরালো হয়েছে আওয়ামী লীগে। বেশ কিছু নতুন মুখ নিয়ে নানা আলোচনা করছেন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন দিনের মাথায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে দলটি। আগামীকাল ১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে নতুন সরকারের সম্ভাব্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৫০টি গাড়ি প্রস্তুত করে রেখেছে বলে জানা গেছে।

 

মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে ডাক পেলেন কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা

ইতোমধ্যে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার জন্য ফোন অনেকেই পেয়েছেন। এ তালিকায় রয়েছেন ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, তাজুল ইসলাম, ডা. দীপু মনি, আনিসুল হক, আ ক ম মোজাম্মেল হক, ড. হাছান মাহমুদ, সাধন চন্দ্র মজুমদার, ড. আব্দুর রাজ্জাক, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, ফরহাদ হোসেন, মেজর আবদুস সালাম, শাহরিয়ার আলম, আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক।

তবে এখন পর্যন্ত পার্বত্যমন্ত্রী হিসেবে কে ফোন পেয়েছেন সে ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রের বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, একাদশ সংসদের ৪৫ সদস্যের মন্ত্রিসভার মধ্যে অন্তত ১৫ জন বাদ পড়তে পারেন। বয়স, নানা বিতর্ক ও অদক্ষতার দায়ে এসব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বাদ যেতে পারেন। এর মধ্যে টানা একাধিক মেয়াদে মন্ত্রিসভায় আছেন, এমন নেতাও বাদ পড়তে পারেন।

স্বাভাবিক কারণেই পাহাড়ের তিন জেলার মানুষের দৃষ্টি এখন পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের দিকে। পাহাড়ের সর্বত্র এখন আলোচনার বিষয়, কে হচ্ছেন পরবর্তী পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী?

একাদশ সংসদের মন্ত্রিসভায় এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন বান্দরবান আসন থেকে নির্বাচিত বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। বান্দরবান আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের প্রত্যাশা এবারো তিনিই হতে যাচ্ছেন পার্বত্যমন্ত্রী। কারণ, তিনি এর আগে দশম সংসদে এ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং একাদশ সংসদে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করেছেন। তাছাড়া, তিনি ১৯৯১ সাল থেকে বান্দরবান আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টানা সাতবারের নির্বাচিত এমপি।

বান্দরবান পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অমল কান্তি দাস জানান, বান্দরবানবাসীর গৌরব, ৭ বারের নৌকা প্রতীকের বিজয়ী প্রার্থী বীর বাহাদুর উশৈসিং, যিনি দুইবার সততা ও নিষ্ঠার সাথে পার্বত্য মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন, সেই সাথে বান্দরবান জেলা তথা তিন পার্বত্য জেলার উন্নয়ন করেছেন। তাই আমরা সকল বান্দরবানবাসীর পক্ষ থেকে একজন সৎ, অভিজ্ঞ, কর্মনিষ্ঠ মানুষ ও জনগণের সেবক হিসাবে বীর বাহাদুর উশৈসিংকে আবারো পার্বত্য মন্ত্রী হিসাবে জনগণের সেবার জন্য পাব বলে আশা করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্যবাসীর উন্নয়নে বীর বাহাদুর উশৈসিংকে পার্বত্যমন্ত্রী হিসেবে ভূষিত করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা ।

রাঙামাটি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের প্রত্যাশা, এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাঙামাটি আসন থেকে পঞ্চমবার নির্বাচিত আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা দীপংকর তালুকদারকেই বেছে নেবেন পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে। কারণ, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর যে কয়েকজন মানুষ এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন দীপংকর তালুকদার তাদেরই একজন। সেদিক থেকে দলের জন্য, বঙ্গবন্ধুর জন্য দীপংকর তালুকদারকে মূল্যায়ন করা হতে পারে তারা প্রত্যাশা করছেন। তাছাড়া অষ্টম সংসদের এ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে এই সংসদ সদস্যের।

রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই মন্ত্রিত্ব থেকে বঞ্চিত রাঙামাটিবাসী। এবার আমরা পাহাড়ি-বাঙালি ঐক্যের প্রতীক দীপংকর তালুকদারকে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই।

অপরদিকে খাগড়াছড়ি আসন থেকে টানা তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান জেলার জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতাকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন দাবি ভাসছে। খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শানে আলম, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল চৌধুরী, দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাসেম, রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারী, মাটিরাঙা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিুকুল ইসলাম, মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন, গুইমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেমং মারমা ও খাগড়াছড়ি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কে এম ইসমাইল হোসেন এ দাবি করেন। এছাড়া সমাজের সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দও একই দাবি জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর ১৯৯৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সৃষ্টি হয়। ১৯৯৮ সালে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হন সে সময় খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রয়াত কল্পরঞ্জন চাকমা। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসলে প্রধানমন্ত্রীর হাতে পূর্ণমন্ত্রীর ক্ষমতা রেখে সে সময় রাঙামাটির এমপি মনিস্বপন দেওয়ানকে উপমন্ত্রী করা হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাধায়ক সরকার সে সময় চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়কে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী নিয়োগ করা হয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারকে প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৪ সানে বান্দরবান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশেসিংকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়। ২০১৯ সানে বীর বাহাদুরকে পূর্ণমন্ত্রী করা হয়। আগামীকাল ১১ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিপরিষদের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে, কে হচ্ছেন পার্বত্যমন্ত্রী।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন