মহিষের শিংয়ে বাহারি গহনা গড়েন খাগড়াছড়ির পূর্ণ চাকমা

fec-image

খাগড়াছড়ির নিভৃত পল্লী নন্দেশ্বর কার্বারি পাড়া। প্রায় চার দশক ধরে মহিষের শিং থেকে বাহারি নকশার গয়না বানাচ্ছেন পূর্ণ জীবন চাকমা। কৃষিকাজের পাশাপাশি এসব গয়না বিক্রি করে চলে তার সংসার।সনাতনী পদ্ধতিতে শিং থেকে হস্তচালিত কাঠের যন্ত্র থেকে তৈরি হয় চুড়ি, আংটি ও চন্দ্রহার (গলার গহনা)। মহিষের শিং থেকে তৈরি এসব গহনার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে তিন পার্বত্য জেলায়।

ষাট বছর বয়সী পূর্ণ চাকমার বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে দীঘিনালার নন্দেশ্বর কারবারি পাড়ায়।

চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর নারীদের কাছে মহিষের শিংয়ের গয়নার কদর রয়েছে বলে জানান এই পাহাড়ি শিল্পী।তিনি বলেন, “চার দশক ধরে এ কাজ করছি। আমার পূর্বপুরুষরাও এ কাজ করতেন। তাদের কাছ থেকে শিখেছি। মহিষের শিং থেকে মেয়েদের হাতের চুড়ি, কানের দুল, আংটি ও চন্দ্রহার তৈরি করি।”

তবে এখন আর আগের মত মহিষের শিং পাওয়া যায় না। শিং কিনে আনতে হয় কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে।

পূর্ণ চাকমা জানান, আগে একটি শিংয়ের দাম ছিল আটশ টাকা। এখন প্রতিটি শিং কিনতে খরচ হয় ১২শ টাকা। তারপরও বড় আকারের শিং পাওয়া কঠিন। গয়না বানানোর জন্য শিংয়ের পুরত্ব হতে হয় অন্তত এক ইঞ্চি।

তিনি বলেন, একজোড়া চুড়ি বিক্রি হয় ১২শ থেকে ১৫শ টাকায়, আংটি ২৫০ টাকা এবং চন্দ্রহার বিক্রি হয় ৫শ থেকে ৬শ টাকায়। স্থানীয় গ্রামের নারীরা তার গয়নার ক্রেতা। তাছাড়া রাঙামাটি ও বান্দরবান থেকেও গয়না বানানোর অর্ডার পান।এসব গয়না বিক্রি করে মাসে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয় বলে জানালেন এই শিল্পী।

পূর্ণ চাকমার সহকারী ধর্মজ্যোতি চাকমা জানালেন, তিনি এখন শিং থেকে গয়না বানানোর কাজ শিখছেন। দৈনিক মজুরি তিনশ টাকা। মাসে ৩০ দিনই কাজ করতে হয়।

পূর্ণ চাকমার ছেলে পিন্টু চাকমা বলেন, “এটি আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। জন্মের পর থেকে দেখছি বাবা এসব গয়না বানান। অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে গয়না কিনতে আসেন।”

মহিষের শিং থেকে তৈরি এসব গয়না চাকমা সমাজে আভিজাত্যের প্রতীক। খাগড়াছড়ির নারী উদ্যোক্তা শাপলা ত্রিপুরা বলেন, “আগে শিং থেকে চুড়ি এবং কানের দুল তৈরি হত। এখন গলার হারও পাওয়া যায়। আমাদের আদিবাসী সমাজে এসব গয়নার কদর রয়েছে। তবে এখন খুব কমই এসব গয়না পাওয়া যায়।”

খাগড়াছড়ির বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাবারাংয়ের নির্বাহী পরিচালক ও গবেষক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, “মহিষের শিংয়ের গয়নার সাথে ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে। সামন্তীয় প্রভু বা মহাজনরা একসময় আভিজ্যাতের প্রতীক হিসেবে হাতির দাঁতের গহনা ব্যবহার করত।

ব্যয়বহুল হওয়ায় হাতির দাঁত ব্যবহারের সামর্থ্য যাদের ছিল না, তারা মহিষের শিংয়ের গয়না ব্যবহার করতেন বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন