মহেশখালীর উপকূলীয় এলাকায় আসছে জোয়ার ভাসছে মানুষ

pic- moheshkhali-23-7-16 (1) copy

মহেশখালী প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার উপকূলীয় মাতারবাড়ী ও পাশ্ববর্তী ধলঘাট ইউনিয়ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে বার বার বেড়িবাঁধ বিলীন হচ্ছে। স্থায়িভাবে শক্ত বক্ল দিয়ে ঠেকসই বেড়িবাঁধ সংস্কার না করার কারণে উপকূলীয় এলাকায় জনজীবন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। জোয়ার শুরু হলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে উপকূলীয় দু’ ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায়।

জোয়ারের পানিতে প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা। প্রতিদিন অন্তত্য দু’বার জোয়ার আসায় আতঙ্কে ভুগছেন এসব এলাকার মানুষেরা। জোয়ার এলেই তলিয়ে যায় মাতারবাড়ী ও ধলঘাট ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা ।

মাতারবাড়ীবাসীর বেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিনের হলেও নানা অজুহাতে তা হচ্ছে না। কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য অধিক গ্রহণকৃত জমির রাঙ্গাখালী, টিয়াখাঁটি ও চুয়ান্ন ঘোনা এলাকার তিনটি বড় পয়েন্টে বিধবস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে করে মাতারবাড়ীতে এখনো পানিবন্দি শতাধিক পরিবার মনবেতর জীবন যাপন করছে ।

স্থানীয় বাসিন্দা বৃদ্ধা আসমা খাতুন জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে মাতারবাড়ী এলাকায় বেড়িবাঁধ, ঘর বাড়ি ব্যাপক ক্ষতি হয়। এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ক্ষতিগ্রস্ত অনেক অসহায় পরিবার। জোয়ারের সময় পানি ফসলের মাঠ মাড়িয়ে বাড়ির উঠানে ও বসতঘরে ঢুকে পড়ে। জোয়ার ভাটার কারণে রাতে ঘুমানোর জন্য নেই কোনো নিরাপদ ব্যবস্থা। এতে চরম দু‘র্ভোগে কাটাতে হয় শিশু ও বৃদ্ধদের। কিন্তু এনিয়ে খুব বেশি আক্ষেপ নেই তার।

তার মতো অনেক বাসিন্দাই বলেন, আমরা ত্রাণ চাই না, সবার আগে স্থায়ি বেড়িবাঁধ সংস্কার চাই। বাসিন্দারা জানান, মাতারবাড়ি ইউনিয়নের ষাইটপাড়া এলাকায় আধাঁ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নতুন করে সাগরে বিলীন হতে চলেছে। গত একমাসে অমাবস্যা আর পূর্ণিমার জোয়ারের এবং সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে বেড়িবাঁধের ব্যাপক ভাঙ্গণ দেখা দেয়। বেড়িবাঁধের ভয়াবহ ভাঙণে রাস্তাঘাট বিলীন হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তারা জানায়, মাতাবাড়ির ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁেধর গত এক বছরে প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধবস্ত হয়েছে। অবশিষ্ট এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হলে পুরো ইউনিয়ন সাগরের পানিতে তলিয়ে যাবে এমন আতঙ্কে দিন কাটছেন মাতারবাড়ির ২৫টি গ্রামের ৮০ হাজার বাসিন্দা।

মাতারবাড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা সুমন, রবিউল ও রহমান জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হওয়ার কারণে গত ঈদে ঘরমূখো মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হন। কালারমারছড়া এলাকার দারাখালের ব্রিজ থেকে মানুষকে হেটেই মাতারবাড়ি চলাচল করতে হয়েছে।

তারা বলেন, রোয়ানু’র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কার করা হলেও তা সম্প্রতি জোয়ারের পানিতে ভেঙ্গে পড়েছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড যেভাবে এলাকাগুলোকে অবহেলার চোখে দেখছেন এতে করে মাতারবাড়ি ও ধলঘাটার আরো ব্যাপক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মাতারবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, মাতারবাড়ী ইউনিয়নটি বঙ্গোপসাগরের মোহনায় হওয়ায় যে কোনো মুহূর্তে ষাইটপাড়ার বেড়িবাঁধ ভেঙে পুরো এলাকা সাগরে গর্ভে তলিয়ে যাবে। মাতারবাড়ীকে রক্ষা করা সম্ভাব হবে না।

তিনি আরো বলেন, ভাঙা বাঁধ সংস্কারের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা ভাঙা বেড়িবাঁধ মেরামত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, নতুন করে বেড়িবাঁধ ভেঙে সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় এলাকাবাসী অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধের বাকি এক কিলোমিটার অংশ ভেঙে গেলে এই ইউনিয়ন রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই বাঁধটি সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোডের কক্সবাজার নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে মাতারবাড়ি ও ধলঘাট ইউনিয়নের প্রায় ৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই বিধবস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন