মাটিরাঙ্গায় চাঁদার দাবীতে তামাক চারা উপড়ে ফেলেছে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা

extortion

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি ইউনিয়নের সীমান্তঘেষা সিংহপাড়ায় মোটা অঙ্কের চাঁদার দাবীতে স্থানীয় কৃষকদের সৃজিত তামাক, ভুট্টা ও তরমুজ ক্ষেতের চারা উপড়ে ফেলেছে চুক্তিবিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ’র সন্ত্রাসীরা। গত শনিবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকসহ স্থানীয় বাঙ্গালীদের মধ্যে ক্ষোভ সহ উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সরেজমিনে স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় ইউপিডিএফ নেতা শ্যামল কান্তি চাকমা দীর্ঘদির ধরে কৃষকদের কাছে চাঁদা দাবী করে আসছেন। সম্প্রতি চাঁদা চেয়ে স্থানীয় কৃষকদের চিঠি প্রদান করে ইউপিডিএফ। প্রাথমিকভাবে তারা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে সন্ত্রাসীরা গত বৃহস্পতিবার রাতে তাদের সৃজিত জমি থেকে কিছু তরমুজ ও ভুট্টার চারা উপড়ে ফেলে সন্ত্রাসীরা। এসময় তারা চাঁদার পরিমানসহ উল্লেখ করে রোববার বেলা ১২টার মধ্যে চাদা পরিশোধের সময় বেধে দিয়ে কৃষি জমির সেচ পাম্পঘরে নোটিশ রেখে যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে কৃষকদের মধ্যে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতিসহ মৃদু উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় কৃষকরা বিষয়টি স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করলে সন্ত্রাসীরা শনিবার গভীর রাতে সিংহপাড়ার একাধিক কৃষকের জমিতে সৃজিত তামাক ও ভুট্টার চারা উপড়ে ফেলে। একই সময়ে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা কয়েকটি সেচপাম্প ঘর ভাঙচুরও করে। সকালের দিকে কৃষকরা জমিতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

স্থানীয় তামাক চাষী মো: আলী হায়দার বলেন, তাদের দাবীকৃত চাঁদা না দেয়ায় শনিবার গভীর রাতে স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ক্ষেতে প্রবেশ করে তার সৃজিত তামাক চারা উপড়ে ফেলেছে। এতে তিনি শঙ্কিত বলেও জানান এ চাষী। তিনি বলেন, আমরা নির্বিঘ্নে চাষ করতে চাই। কোন সন্ত্রাসীদেরকে চাঁদা দিতে চাই না। এজন্য তিনি নিজেদের সার্বিক নিরাপত্তাও দাবী করেন।

আরেক তামাক চাষী মো: আমির হোসেন বলেন, অনেক আশা নিয়ে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে আমি তামাক চাষ করেছি। তার সৃজিত তামাক চারা উপড়ে ফেলায় হতাশ হয়ে পড়েছেন এ কৃষক। তিনি স্থানীয় পাহাড়ীদের সহযোগীতায় ইউপিডিএফ চাদাবাজি সহ এসব নাশকতা করছে দাবী করে তিনি বলেন, ০১৮৩১৫৯৮৮৩৬ নাম্বার থেকে আমি সহ একাধিক কৃষক ও সেচপাম্প মালিকদের কাছে ফোন করে চাঁদা দাবী করে আসছে। চাঁদা না দিলে ভয়াবহ পরিনতির কথাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে মোবাইল ফোনে। বর্তমানে সেখানকার কৃষকরা নিজেদের সৃুজত ফসল রক্ষাসহ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জন থেকে অব্যাহতভাবে চাঁদাবাজি করে আসছে। তাদের দাবীকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই তারা বিভিন্ন জনের সৃজিত ফসলের জমির ফসল ধ্বংসকরাসহ সৃজিত বাগান কেটে ফেলছে। এমনকি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে কৃষক পর্যন্ত কেউই তাদের চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি পাচ্ছেনা। স্থানীয়রা সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি বন্ধে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজির নামে বিভিন্ন জনের ক্ষেতের চারা উপড়ে ফেলা ও ফলজ বাগান কাটা বন্ধ করা না গেলে এখানে আরো বড় ধরনের সহিংসতা ঘটাতে পারে সন্ত্রাসীরা।

এদিকে গতকাল রোববার সকালের দিকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকাউল ও মাটরাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ বেপারী। এসময় তারা স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সাথে কথা বলেন। এরপর নোয়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের সাথে বৈঠক করে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে স্থানীয়দের পরামর্শ দেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকাউল। তিনি বলেন, এধরনের কর্মকান্ডকে যেকোন মুল্যে প্রতিহত করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন