মাতারবাড়িতে সাড়ে ৪ কোটি টাকার বেরিবাঁধ ৪ মাসের আগেই বিলীন

fec-image

* কাজের শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন স্থানীয়রা। * বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের কথা জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে - মহেশখালীর ইউএনও মোহাম্মদ ইয়াছিন। * স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের। * সুপার ডাইক বেড়িবাঁধের স্বপ্ন আটকে আছে অনুমোদনের অপেক্ষায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সচিব, এমপি, ডিসি, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলার শীর্ষ নেতারা মাতারবাড়ি -ধলঘাটে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭.৭৫ কিলোমিটার সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ এক বছরের মধ্যেই কাজ শুরু করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন গত বছরে জুলাইয়ের ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে বিধ্বস্ত হওয়া মাতারবাড়ির ষাইট পড়া বেড়িবাঁধ পরিদর্শনের সময়। ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশ্যে তখনই আশ্বাস দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেছিলেন , মাতারবাড়ি-ধলঘাটে স্থায়ীভাবে টেকসই সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ এই ডিসেম্বরেই (২০২১) শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে মাতারবাড়ি-ধলঘাটের মানুষের রক্ষা করা হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন মাতারবাড়ি-ধলঘাটের হাজার হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনকে স্বপ্ন দেখান সুপার ডাইক বেড়িবাঁধের। এতেই আশ্বস্ত হয়ে স্বপ্ন দেখে আবারও ধ্বংসস্তুপ থেকে বসবাসের শুরু করেন বেড়িবাঁধ এলাকার বাসিন্দারা।

অন্যদিকে গত বছরে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড সাড়ে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে জিও টিউব দিয়ে অস্থায়ীভাবে ৮৭০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছিল। তা গত এপ্রিল মাসেই নির্মাণকাজ শেষ হয় । তবে কাজ শেষ হওয়ার ৪ মাসের আগেই প্রায় ৪০০ মিটার বাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে পড়ায় এটির গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মাতারবাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিমে ষাইটপাড়ার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থানে জিও টিউব ধসে পড়ে বাঁধ ভেঙে সাগরে বিলীন হয়ে গেছে । জোয়ারে কোথাও কোথাও বাঁধের চিহ্নও নেই ।

সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এই বাঁধ ৪ মাসও না টেকায় ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা । তারা অভিযোগ করে বলেন, মাটির পরিবর্তে বেড়িবাঁধের পাশ থেকেই মেশিন বসিয়ে বালুমিশ্রিত মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় জোয়ারের পানিতে তা ভেঙে যাচ্ছে । এনিয়ে সে সময় অনিয়মের অভিযোগ করলেও আমলে নেননি কর্তৃপক্ষ।

মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ( ইউপি ) সদস্য নাছির উদ্দীন অভিযোগ করে বলেন , জিও টিউবের পাশাপাশি মাটি দিয়ে বাঁধটি নির্মাণ করার কথা ছিল । অথচ সে সময় স্থানীয়রা মিলে ঠিকাদারের লোকজন জিও টিউব বসাতে গিয়ে নানা অনিয়মের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তুু ঠিকাদারের লোকজন আমলে নেননি৷ পরে মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে বাঁধটি নির্মাণ করেন । এ কারণেই বেড়িবাঁধ ভেঙে সাগরে বিলীন হয়ে গেছে । এতে অন্তত ৫০০ একরের আমন চাষ হুমকির মুখে পড়বে ।

মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, প্রতিবছরেই বর্ষাকালে জোয়ারের পানিতে ও ঘুর্ণিঝড়ে মাতারবাড়ি বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে মানুষের ঘরবাড়ি-জানমাল ও ফসলি জমি নষ্ট হয়ে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। গতবছর স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সচিব, এমপি, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতারা পরিদর্শন করে সুপার ডাইক বেড়িবাঁধের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশ এলাকাবাসী।

জিও টিউব দিয়ে ৮৭০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের প্রায় ৪০০ বিলীন হওয়ার কথা স্বীকার করে মহেশখালী উপজেলার ইউএনও মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, এই বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। সঠিকভাবে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়নি । এ কারণে পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে আবারও বাঁধটি ভেঙে সাগরে বিলীন হয়ে গেছে । বিষয়টি জেলা প্রশাসককেও জানানো হয়েছে ।

ঠিকাদারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ফিরোজ আহমদ বলেন , জিও টিউব ও মাটি দিয়ে বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ করে তিন মাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে । বাঁধ নির্মাণে কোনো অনিয়ম করা হয়নি ।

অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে পানি উন্নয়ন বোর্ডে কক্সবাজারের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইশতিয়াক বলেন , ৪ মাস আগেই প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জরুরি মেরামত হিসেবে অস্থায়ীভাবে ৮৭০ মিটার বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ করা হয় । কিন্তু পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে অন্তত ৪০০ মিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । তাই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটি আবার মেরামতের কাজ চলছে বলে জানান।

স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় চার হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে । জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে । প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যে প্রাক্কলন মূল্য ধরা হয়েছে , তা জাইকার প্রতিনিধিদল যাচাই – বাছাই করে দেখছে ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন