মাদক উদ্ধার ও মামলা তদন্তে কক্সবাজার জেলা পুলিশের রেকর্ড

fec-image

*তৃণমূলে পুলিশী সেবার নিশ্চয়তা *অভ্যন্তরীণ ‘চেইন অব কমান্ড’ মজবুত *অপরাধীচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান *৯ থানাকে ‘সেবাবান্ধব’ ও ‘টাউট-বাটপারমুক্ত’ ঘোষণা

এ যাবতকালে সবচেয়ে বড় ইয়াবার চালান উদ্ধারে রেকর্ড করেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। মামলার তদন্ত নিষ্পত্তি, ওয়ারেন্টমূলে আসামি গ্রেফতার, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, ক্লু-লেস ঘটনার তথ্য উদঘাটনে সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে পুলিশের নতুন টিম। জেলার ৯টি থানাকে ‘সেবাবান্ধব’ ও ‘টাউট-বাটপারমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশের নাম ব্যবহার করে ‘অনৈতিক সুবিধা’ হাসিল করতে পারছে না দালালচক্র।

২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সদরের চৌফলদণ্ডি ব্রিজ এলাকা ও শহরের নুনিয়ারছড়ায় অভিযান চালিয়ে ১৭ লক্ষ ৭৫ হাজার ইয়াবা উদ্ধার ও নগদ এক কোটি ৭১ লক্ষ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ করে পুলিশ। এ সময় আটক হয় ৪ জন কারবারি। যা দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ইয়াবার চালান মনে করছে পুলিশ।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত জেলা পুলিশের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিভিন্ন অভিযানে ৮৪ লক্ষ ৫৫ হাজার ৭৬৮টি ইয়াবা উদ্ধার হয়। ২ লক্ষ ২০ হাজার অগ্নিদগ্ধ ইয়াবা, ৫ কেজি ১৬০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ, ১৩৭ বোতল বিদেশি মদ ও ১৯২৬ ক্যান বিয়ার উদ্ধার এবং ১৫০৯টি মাদকের মামলায় গ্রেফতার হয় ২ হাজার ১৩ জন আসামি। পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে ১৪১টি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ৭৪৭ রাউন্ড, কার্তুজ ১০৬ রাউন্ড এবং ৮টি ম্যাগজিন উদ্ধার হয়। জেলার ৯ থানায় ১৮১টি অস্ত্র মামলায় ৩২৭ আসামি গ্রেফতার হয়। মামলা তদন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ হাজার ৮৫১টি।

পুলিশ বলছে, বিদেশগামীরা ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স’ পেয়েছে সহজে। দালালের খপ্পরে পড়ে হয়রানির শিকার হয়নি কেউ।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ১৬ হাজার ৩৩৪টি ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট’ এবং ৩ হাজার ৩৩৫ জনের চাকুরির ভেরিফিকেশন প্রদান করা হয়। ৩৬ হাজার ৬৮৩টি ‘পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন’ প্রদান করে জেলা পুলিশের বিশেষ (ডিএসবি) শাখা। নিয়মিত মামলায় ১৩,৭৫৩ এবং ওয়ারেন্টমূলে ২২,৯৬২ আসামি গ্রেফতার করে পুলিশ। ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে উপকৃত হয়েছে ৫,৯৩৭ জন।

জেলা পুলিশ জানায়, সাক্ষী হাজির না হওয়ার কারণে মামলা পড়ে থাকে বছরের পর বছর। আদালতে বাড়ে জটিলতা। বিভিন্ন মামলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দক্ষতা ও কৌশলগত কারণে ২৫,৫৫০ জন সাক্ষী আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেছে। যে কারণে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকার প্রশংসা করেন সংশ্লিষ্ট বিচারক।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর এসপি থেকে শুরু করে জেলা পুলিশে কর্মরত সবাইকে একযোগে বদলি করা হয়। সেপ্টেম্বরের শেষে দায়িত্ব নেয় নতুন টিম। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আইন শৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণে শক্তহাতে হাল ধরে তারা। এসপি মো. হাসানুজ্জামানের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ প্রায় ১ বছর ১১ মাস পার করেছে। অভ্যন্তরীণ ‘চেইন অব কমান্ড’ ধরে রেখে এগুচ্ছে জেলা পুলিশ। সবার জন্য নতুন কর্মস্থল হলেও পুরো জেলাকে ‘চকআউট’ করে মাঠ গুছিয়েছে কর্মকর্তারা। পুলিশ সুপার থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সবার সক্রিয় কর্মতৎপরতায় জেলা পুলিশ আবারো ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে চিহ্নিত অপরাধীচক্র অনেকটা ‘কোমরভাঙা’ হয়ে গেছে। সন্ত্রাসী, কিশোরগ্যাং দমনে জেলা পুলিশের তৎপরতায় আশান্বিত পর্যটন নগরের বাসিন্দারা।

অনুসন্ধান মতে, কক্সবাজার জেলার প্রতিটি থানা এখন সেবাবান্ধব ও দালালমুক্ত। যার কাজ সেই করছে। থানার নামে দীর্ঘদিনের অনৈতিক সুবিধাভোগিরা পাত্তা পাচ্ছে না। হয়রানিতে পড়ছে না। টাউট-বাটপারের স্থান নেই। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে সেবাপ্রার্থীরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে আমরা দায়িত্বভার গ্রহণ করি। জনবান্ধব পুলিশী কার্যক্রম নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছিল। সেটি মাথায় রেখে আমরা কাজ শুরু করি। জেলার ৯টি থানায় কর্মরত ওসিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকতা সহকারে দায়িত্ব পালন করছে। যে কারণে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ও সন্তুষ্টি বেড়েছে।

ভুক্তভোগিদের জন্য থানার দরজা ২৪ ঘন্টা উন্মুক্ত মন্তব্য করে এসপি বলেন, যার কাজ সেই করছে। দালাল-প্রতারক, টাউট-বাটপার শ্রেণির লোকজন থানার আশেপাশেও ঘেঁষতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক লোক, নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। পুলিশের সেবা কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও জনবান্ধব করতে ‘বিট পুলিশিং’ কার্যক্রমকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে ভুক্তভোগিরা উপকৃত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, জেলার ৯টি থানাতেই পুলিশের জনবান্ধব সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। ভুক্তভোগি নিজেই থানায় গিয়ে সেবা পাচ্ছে। যুক্তিসঙ্গত সব আবদার ও আবেদন গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। দ্রুত প্রতিকার পায় সেবাপ্রার্থীরা। মাঝেমধ্যে কিছু অপরাধীচক্র ও তাদের দোসররা পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়ায়। ভুল তথ্যে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। আমাদের নৈতিক অবস্থান ও মনোবল ভাঙতে অপচেষ্টা চালায়। তারা কারা, ইতোমধ্যে চিহ্নিত। অপরাধীচক্রের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, পুলিশ, মাদক
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন