‘মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেয়ে আমাদের হত্যা করাই ভালো’

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

ভারতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা কিছুতেই মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি নন। কেন্দ্রীয় সরকার তাদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়ায় ভারতের হায়দ্রাবাদের রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এখানে ৩৮০০ রোহিঙ্গা বাস করছেন।

গত ৫ বছর ধরে ভারতে বাস করা রোহিঙ্গারা প্রাণ হারানোর আশঙ্কায় স্বদেশে ফিরে যেতে চাচ্ছেন না। ভারত সরকারের কাছে তারা মানবতার খাতিরে তাদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবি আবেদন জানিয়েছেন।

আব্দুর রহিম নামে এক রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেন, ‘আমাদের এখানে বাস করতে দেয়ার জন্য আমরা ভারত সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সরকার যদি আমাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে চায়, তাহলে তা করতে পারে কিন্তু আমাদের ফেরত পাঠানোর চেয়ে বরং হত্যা করাই ভালো।’

২০১২ সাল থেকে তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বাস করা আব্দুর রহিম বলেন, দেশে তাদের সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে তবেই সেখানে ফেরার কথা ভাবতে পারি।

মুহাম্মদ ইউনুস (৬৩) নামে এক ব্যক্তি বলেন, বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমার সবসময় তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে আসে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এ নিয়ে তিন বার শরণার্থী হয়েছি। ওরা কখনোই তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করেনি।

মিয়ানমারে মুহাম্মদ ইউনুস ব্যবসায়ী ছিলেন। মিয়ানমার সরকার তার সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। ভারতে আশ্রয় নেয়ার পরও তাদের সমস্যা দূর হয়নি। অন্যদের সঙ্গে গত তিন মাস ধরে তিনি জম্মু থেকে হায়দ্রাবাদে বাস করছেন। এখানে এখন দৈনিক ৫০০ টাকার মজুরিতে কাজ করছেন। যদিও মাসের মধ্যে মাত্র ১৫ দিন কাজ পাওয়া যায়।

দিল্লিতে আশ্রয় নেয়া সাবিকুন নাহার নামে এক তরুণী তার চরম অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, ‘নিজের গ্রামে ফেরার কথা ভাবলেই সেনাবাহিনীর হামলার ভয়ঙ্কর স্মৃতি তাড়া করে। আমাদেরদের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল। বৌদ্ধ ধর্ম মানতে বাধ্য করেছিল। স্থানীয় মসজিদে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিল। এত ভয় পেতাম যে রাতে ঘুম আসত না।’

‘রোহিঙ্গারা দেশের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক’

এদিকে, ১৮ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক মামলার শুনানিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে বলেছে, রোহিঙ্গারা দেশের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে পাক গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইএসআইএল সন্ত্রাসীদের যোগ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এর সঙ্গে শুধু দেশের নিরাপত্তা নয়, আন্তর্জাতিক কূটনীতিও জড়িয়ে আছে সেজন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয় বলেও সরকারের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়েছে। আগামী ৩ অক্টোবর এ নিয়ে পরবর্তী শুনানি হবে। ‘

রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলায় বিজেপি নেত্রী বহিষ্কার

এদিকে, রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের হয়ে মুখ খোলার দায়ে অাসামে বিজেপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বেনজির আরফান (৩০) নামে এক মুসলিম নেত্রীকে। তিনি ২০১২ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন।

তিন তালাকের শিকার হওয়া ওই নেত্রী রাজ্যে বিজেপি’র হয়ে তিন তালাকের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই নেত্রী সমস্ত মুসলিমের উদ্দেশ্যে জুমা নামাজ শেষে দু’রাকাত হাজত নামাজ পড়ে মিয়ানমারের মুসলিমদের জন্য আল্লাহতায়ালার সাহায্য প্রার্থনা করার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার প্রদেশ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ শইকিয়া তাকে পার্টি থেকে বহিষ্কারের চিঠি দিয়ে তিন দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

সূত্র: পার্সটুডে

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন